• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদন


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৯, ২০২০, ০৫:১৯ পিএম
মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদন

ফাইল ছবি

ঢাকা: জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়েছে । সুপ্রিম কোটের্র আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রোববার (১৯ জুলাই) এ আবেদন দাখিল করা হয়েছে। আজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ২৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ১৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে।

রিভিউ আবেদন বলা হয়েছে, স্বীকৃত মতে এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৯৭১ সালে ১৮ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিকের একজন ছাত্র ছিলেন। অথচ সব হত্যাকাণ্ডের দায় তার উপর চাপানো হয়েছে। আপিল বিভাগ তৎকালীন তার এই সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় না নিয়েই তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। আসামির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উল্লিখিত আইনগত যুক্তির এই বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। 

আবেদনে আরও যেসব যুক্তি নেয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুক্তিসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হল:

১. চার্জ গঠন আদেশ অনুযায়ী দুই নম্বর চার্জের ঘটনাস্থল মোকসেদপুর গ্রাম। অথচ রাষ্ট্রপক্ষের ৩ নম্বর সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনাস্থল হল উত্তর রামনাথপুর। আপিল বিভাগ ঘটনাস্থল সংক্রান্ত পরস্পর বিরোধী এই বক্তব্যের সন্তোষজনক সমাধান না করেই আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

২. রাষ্ট্রপক্ষের ৩ নম্বর ও ৬ নম্বর সাক্ষীর দাবি অনুযায়ী তারা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। অথচ তাদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই সময় তিন নম্বর সাক্ষী ৫/৬ কিলোমিটার ও ৬ নম্বর সাক্ষী ৩/৩.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলেন। আপিল বিভাগ সাক্ষীদের বক্তব্যের এই বৈপরীত্য বিবেচনায় না নিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

৩. রাষ্ট্রপক্ষের ৪ নম্বর সাক্ষী জেরায় স্বীকার করেছেন যে, ঝাড়ুয়ার বিলের ঘটনায় ইসলাম জড়িত নন। আপিল বিভাগ মতামত প্রদান করেছেন যে, ট্রাইব্যুনাল ভুলবশতঃ ‘ইহা সত্য নহে’ শব্দসমূহ উল্লেখ করতে পারেনি এবং আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। মামলার নথিপত্রে উল্লিখিত সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী উনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

৪. রাষ্ট্রপক্ষের দাখিলকৃত প্রদর্শনী নম্বর ২৫ অনুযায়ী আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের মতো কার্যক্রমে জড়িত থাকার কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের এই দালিলিক প্রমাণ বিবেচনায় না নিয়েই আজহারকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।

৫. আপিল বিভাগ রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, আজহারুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের ৯ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দিতে আপত্তি জানাননি। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দিতে সুনির্দিষ্টভাবে আপত্তি জানানো হয়েছে।

৬. রাষ্ট্রপক্ষের ১০ নম্বর সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেছেন যে, তিনি ইসলামকে ১৯৭১ সালে চিনতেন কারণ ইসলাম তখন কারমাইকেল কলেজের ছাত্রনেতা ছিলেন। অথচ তিনি কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের নাম জানেন না। এমনকি কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষের নামও জানেন না। রায়ে আপিল বিভাগ সাক্ষ্যের এই অংশ বিবেচনায় না নিয়েই আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।

এর আগে গত ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। রায় প্রকাশের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামিরা রিভিউ করার জন্য ১৫ দিন সময় পেয়ে থাকেন। কিন্তু করোনার কারণে নিয়মিত আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এতদিন রিভিউ করতে পারেননি আজহার। গত বছরের ৩১ অক্টোবর আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে মামলায় আনীত দুই নম্বর, তিন নম্বর এবং চার নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পেয়েছেন আজহার। এছাড়া, পাঁচ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ছয় নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখেন। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আজহারুল।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!