• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা প্রকাশ্যে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ!


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ২৩, ২০১৯, ০১:৫৯ পিএম
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা প্রকাশ্যে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ!

ঢাকা : মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরে বাবা-মাকে গুলি করে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ বলছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার প্রধান আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রুবেল জাল কাগজপত্র দেখিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে বিয়ে করে সংসারও পেতেছেন। হয়েছেন দুই সন্তানের জনক। তার সহযোগী মিথুন বর্তমানে ভারতে আছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রুবেলের মামা আলতাফ হোসেন আলতু মিয়াও জামিনে আছেন। সাজাপ্রাপ্ত এই ভয়ংকর আসামিরা কারাগারের বাইরে থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন নিহত সাদিকুর-রোমানা নার্গিস দম্পতির ছেলেমেয়েরা। সারাক্ষণ মৃত্যু আতঙ্ক তারা করছে তাদের। তাই অতি প্রয়োজন ছাড়া তারা বাসার বাইরেও বের হচ্ছেন না।

গত ২০১০ সালের ২৪ মার্চ দিনদুপুরে গুলশানের কালাচাঁদপুরের জি-ক ৫৪/৪ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসায় ঢুকে মেয়ের কথিত প্রেমিক রুবেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় পিস্তলের গুলিতে খুন হন নার্সারি ব্যবসায়ী সাদিকুর রহমান ও তার স্ত্রী রোমানা নার্গিস। ঘটনার দুই দিনের মধ্যে ডিবি পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই হত্যামামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই বছরের ৩০ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে রুবেল, মিথুন, আলতাফ হোসেন আলতু ও মহিউদ্দিন আহমেদ রাব্বিকে অভিযুক্ত করা হয়। এ মামলায় রাব্বি আদালত থেকে জামিন পায়। এরপর নিম্ন আদালতের জাল কাগজপত্র তৈরি করে এজাহারভুক্ত দুই আসামি রুবেল ও মিথুনকে হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের করে আনে। পরে জামিন জালিয়াতির বিষয় ধরা পড়লে ২০১১ সালের ১৫ মে হাইকোর্টের নির্দেশে নিহত দম্পতির মেয়ে সুমাইয়া ইয়াসমিন বীথি রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

রপর ২০১১ সালের গত ৬ জুন আসামি রুবেল ও মিথুনের ফাঁসির আদেশ হয়। আলতু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়। খালাস দেওয়া হয় রাব্বিকে। কিন্তু রুবেল ও মিথুনের জামিনের জাল কাগজপত্র তৈরি করার মামলায় তাকে ওই বছরের ৮ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিমতে মো. মনিরুজ্জামান ও ফারুক আহমেদ নামে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীকেও গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

নিহত দম্পতির বড় মেয়ে ফরিদা ইয়াসমিন সাথী বলেন, বতর্মানে এই মামলার সবাই কারাগারের বাইরে আছেন। রায় ঘোষণার সময় রুবেল ও মিথুন উপস্থিত না থাকলেও রুবেলের মামা আলতু মিয়া উপস্থিত ছিলেন। আদালত তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও বর্তমানে আলতু কারাগারের বাইরে আছেন। মাঝেমধ্যেই তিনি বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন।

তাদের ভয়ে বাসার বাইরেও বের হই না। রুবেল জাল কাগজপত্র দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর বিয়ে করে সংসার করছেন। বর্তমানে দুই সন্তানের জনক তিনি। তাকে এলাকার অনেকেই বাসায় আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন।

এ ব্যাপারে থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদের ধরছে না।

ফরিদা ইয়াসমিন সাথী অভিযোগ করে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর দুই দিনের মধ্যে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করেছিল। অথচ ২০১১ সালে তারা জামিন জালিয়াতি করে ছাড়া পেলেও অদ্যাবধি গ্রেপ্তার হচ্ছে না। আসলে এখন পুলিশ ততটা আন্তরিক নয়। আমরা এখন ন্যায়বিচারের আশাও ছেড়ে দিয়েছি। মামলাটি চাপা পড়ে গেছে। আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলছেন, আসামিদের নিম্ন আদালতে সাজা হয়েছে।

আসামিরা পলাতক রয়েছে, তাই তারা হাইকোর্টে হাজির হয়ে আপিল না করলে এ মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

সাথী আরো বলেন, রুবেল ও মিথুন তাদের স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। এ ব্যাপারে স্বজনদের সঙ্গে কথা বললেই পুলিশ মিথুন ও রুবেলের সন্ধান পেতে পারে।

এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান বলেন, কোনো মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার পর থানা-পুলিশ আর সে বিষয়ে খোঁজ রাখে না। এত আগের বিষয় আমার জানা নেই। কোনো ফাঁসির আসামিকে পেলে পুলিশ কখনোই ছেড়ে দেবে না। বাদীপক্ষ যদি জানে, সে কোথায় আছে, তাহলে বলুক আমরা ধরে নিয়ে আসব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!