• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বাঁধ ভাঙন যেভাবে রক্ষা করলেন যুবকরা


চাঁদপুর (মতলব উওর প্রতিনিধি) সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, ১২:৩৩ পিএম
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বাঁধ ভাঙন যেভাবে রক্ষা করলেন যুবকরা

চাঁদপুর: দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প চাঁদপুরের মতলবের মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের কাচারীকান্দি এলাকায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও প্লাস্টিকের ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে এনেছে স্থানীয় প্রশাসন। যদিও এখনও ভাঙন ও পানিতে ফসলহানির শঙ্কায় আতঙ্ক কাজ করছে লাখো কৃষক-জনতার মাঝে। 

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (১৮ সেপেটম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি ইউনিয়নের জনতা বাজার সংলগ্ন কাচারীকান্দি এলাকা দিয়ে মেঘনা নদী লাগোয়া মূল বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে নদীর তীরবর্তী অংশের ২০০ মিটার অঞ্চল ভেঙে নদীতে বিলীন হতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁধের ৮০ মিটার এলাকা ভেঙে যায়। চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই শতাধিক যুবক নিজ উদ্যোগে ৮-১০টি ট্রলিতে করে জনতা বাজার, চরমাছুয়া এলাকা থেকে কয়েক হাজার বালুভর্তি জিওব্যাগ এনে বাঁধ রক্ষার কাজে নেমে পড়েন। স্থানীয় আমিরাবাদ বাজারে বাঁশের বাজার থাকায় সেখানে থেকে বাঁশ এনে পাইলিং এর ব্যবস্থা করতে থাকেন তারা। যুবকরা রাত ৩টা পর্যন্ত প্রাণপণে চেষ্টা করে বাঁধ রক্ষা করেন।

ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল জানান, ওই এলাকায় ১৭ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে ধান, পাট, আখ, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল রয়েছে। এছাড়া সেখানে কৃষকসহ প্রায় ৪ লাখ লোকের বসবাস। তাই বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেতরে পানি প্রবেশ করলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে ওই এলাকার মানুষ।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্নেহাশিস দাস বলেন, ‘খবর পেয়ে শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে চলে যাই। এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গভীর রাত পর্যন্ত বাঁধ রক্ষায় কাজ করি। আমাদের কাজে সার্বিক সহায়তা করেন মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন মৃধা ও তার ফোর্স।’

বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছেজেলা যুবলীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক গাজী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শনিবার রাত ৮টার দিকে হঠাৎ হইচই শুরু হলে আমরা লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি। সেখানে এলাকার যুবক এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত যুবকদের নিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করি। স্থানীয় যুবকেরা রাত ৩টা পর্যন্ত প্রাণপণ চেষ্টা করে বেড়িবাঁধ রক্ষায় কাজ করেন।’

এদিকে, ভাঙনের খবর পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব রিজিওন) কাজী তোফায়েল হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল, কুমিল্লা) জহির উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাস, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) আহসান হাবীবসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

বাঁধে ফাটলমেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমিরাবাদ বাজারের কাছে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ৮০ মিটার এলাকা ভেঙে গেছে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এক হাজার ব্যাগ জিওব্যাগ এবং ৬ হাজার সিথেটিক ব্যাগ ডাম্পিং করি। এতে করে রাতেই ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসে। আবার শনিবার ভোর ৪টা থেকে নতুন করে ঠিকাদারের মাধ্যমে বস্তাভর্তি করা শুরু হয়। এখন ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আতঙ্কের কিছু নেই। এরপরও আমরা সতর্ক আছি। আশা করি, কোনও সমস্যা হবে না।’

বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছেসংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল বলেন, ‘এখানে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার একটা ডিপিপি হওয়ার কথা। অতি দ্রুত এই বেড়িবাঁধ সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজটি দ্রুত গতিতে না করলে যেকোনও সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এর আগেও দুইবার ভাঙছে। আর সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হবে। তাই প্রধানমন্ত্রী ও পানিসম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।’

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!