• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেলার অন্যতম আকর্ষণ লোকজ ঐতিহ্য ‘টম টম’


ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৭:৩৮ পিএম
মেলার অন্যতম আকর্ষণ লোকজ ঐতিহ্য ‘টম টম’

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও): নেকমরদ ওরশ মেলার অন্যতম ঐতিহ্য টমটম গাড়ি। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও বসেছে নেকমরদ ওরশ মেলা ।এই মেলাতে উল্লেখযোগ্য খেলনা হিসেবে গ্রাম্য শিশু-কিশোরদের জন্য মাটির ও বাঁশের তৈরি টমটম গাড়ি,যা বিলুপ্তপ্রায়। একটি খেলনা গাড়ির আওয়াজ।ঐতিহ্যবাহী মেলাটি নজর কেড়েছে শিশু ও কিশোরদের । বিশেষ করে শীতপ্রধান উত্তর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মেলা হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত নেকমরদ মেলা। 

আর এই মেলাকে ঘিরে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি ঐতিহ্য ,বিনোদন ,শিশু-কিশোরদের আনন্দ ,লোকসংস্কৃতির এক মিলনমেলা। এই মৌসুমে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসেই  শুরু হয় ওরশ মেলা । এই মেলায় উল্লেখযোগ্য মাটির নানান খেলনার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য টমটম গাড়ি ঐতিহ্যবহন করে চলছে। বাংলার চিরচেনা গ্রাম্য মেলা বিস্তৃতও ঐতিহ্যপূর্ণ বটে। যদিও সব মেলায় এই খেলনা গুলি বেশ জনপ্রিয় । গ্রামের কিংবা শহরের সব শিশু-কিশোরদের জন্য এই টমটম গাড়ি খুবই জনপ্রিয় খেলনা। হয়তো এমন কেউ নেই যে , এই গ্রাম্য মেলার টমটম গাড়ির জন্য অতীতে  বায়না ধরেননি । 

পহেলা ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই  মেলার কমিটির দায়িত্ব নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এনামুল হক ও সম্পাদক প্রভাষক শফিউল ইসলাম বিপ্লব । মেলা কমিটির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে এবারের মেলা মাসব্যাপী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এ এলাকার হাজারো মানুষ তাকিয়ে আছে নেকমরদ ওরশ মেলার দিকে। বিশেষ করে এই এলাকার সাধারন গৃহবধূ ও শিশু-কিশোররা । নানান রকম আলো আর চকমকে বাতিতে, মাইকের চেচা-মিচিই প্রমাণ করে নেকমরদ ওরস মেলা শুরু হয়েছে জাকজমকে।

জানা যায়, টমটম গাড়ি বানানো হয় মাটির ছোট হাড়ির উপরে শক্ত কাগজ লাগিয়ে। হাঁড়ির দুই পাশে থাকে মাটির দুই চাকা ।চাকার সাথে লাগানো থাকে শক্ত বাঁশের দুটি কাঠি ।হাঁড়ির উপর লাগানো থাকে শক্ত কাগজ । আর সুতা  দিয়ে বাঁধা থাকে ওই কাঠিতে । সুতা ধরে চালালেই চাকার সাথে থাকা দুই কাঠি হাঁড়ির উপরে আঘাত করে ,তখনই শুরু হয় টাং টাং  শব্দ ।আর এই শব্দ কে ঘিরে শিশুরা কেনার জন্য পাগল হয়ে উঠে। এই শব্দ কে কেন্দ্র করে চলে দোকানিদের জীবন-জীবিকা। 

বর্তমানে মেলায  এর মূল্য যদিও ২০ টাকা । তবে আক্ষেপ করে আবুল কাশেম দোকানদার বলেন,প্লাস্টিকের খেলনার ভিড়ে  হারিযে যেতে বসেছে এই টমটম গাড়ি । তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। বছরে ৯ মাস মেলায় কাটিয়ে এই ব্যবসা করেন আবুল কাশেম। শিশুদের আকর্ষণ বাড়াতে আবুল কাশেম শিশু-কিশোরদের চোখে তাকিযে মিষ্টি হাসি হাসতে পারেন ঠিকযেন  হ্যামিলনের-বাঁশিওয়ালার মতই । শিশুরা তার দোকানে ভিড় জমায়। আর এভাবেই শুরু হয় বেচাকেনা।

অপরদিকে, টমটম গাড়ি বিলুপ্ত হওয়ার পথে থাকলেও শীত মৌসুমে মেলাকে কেন্দ্র করে আবারও সচল হয়ে ওঠে খেলনা টমটম গাড়ির বেচা কেনা । ইতিহাস থেকে জানা যায় ,ইংরেজ শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ঘোড়ার গাড়ি দিযে টমটম গাড়ির প্রচলন শুরু হয় । উনিশত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় ব্রিটিশরা কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে । সে সময় রাজধানী ঢাকায সমভ্রান্ত লোকদের টমটম গাড়িতে ওঠার প্রবণতা দেখা যায় । সে কারণেই এই টমটম গাড়ি ছিল প্রভাবশালীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি । আজ সময়ের বিবর্তনে শহর থেকে গ্রামে প্রতীকী খেলনা গাড়ি হিসেবে মেলায় স্থান করে নিয়েছে । 

রাণীশংকৈলের নেকমরদ মেলায়  গ্রাম্য সাধারণ মানুষের ছেলে মেয়েদের জন্য আকর্ষণীয় খেলনা হিসেবে টমটম গাড়ি সকলের কাছে প্রিয়। যদিও দেশব্যাপী প্রায় মেলাতে এই টমটম গাড়ি কম বেশি দেখা যায় । যার ঐতিহ্য বহন করে চলছে গ্রাম্য মেলায় প্রতন্ত্য গ্রাম্য শিশুরাই ।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!