• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বইমেলা প্রতিদিন

মেলায় বসন্তের ছোঁয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯, ১১:৫৮ পিএম
মেলায় বসন্তের ছোঁয়া

ঢাকা : বাসন্তী রঙা শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে পুরো বইমেলা চত্বর যেন ফাগুনের আঙিনা হয়ে উঠেছিল গতকাল। দলে দলে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষের ভিড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ চারপাশ আগুনের রঙে রঙেছিল যেন। প্রতিবছর পহেলা ফাল্গুনে বইমেলার একই চিত্র থাকে। এদিন মানুষের পদচারণে ভরে ওঠে মেলা। যেন তিলধারণের ঠাঁই থাকে না। গতকালও সেই একই চিত্র।

তবে যত মানুষ মেলায় এসেছিল, বিক্রিটা তত হয়নি। এদিন মানুষেরা ঘুরতে আসে বইমেলায়। আড্ডা দিতে আসে। তার মানে এই নয় যে বেচাবিক্রি কম হয়েছে। বরং এ দিনটাতেই প্রকাশকদের হাসিতে ছড়িয়েছে স্বস্তি। ছোট-বড় সব প্রকাশনীর বেচাবিক্রি ছিল সন্তোষজনক। পড়ুয়াদের পদচারণায় মেলায় যেমন তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। তেমনি স্টল-প্যাভিলিয়নেও ছিল ঠাসা ভিড়। প্রকাশকরা দিনশেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ঘরে ফিরেছেন।

গতকাল অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিনে মেলা চলে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭২টি। এদিন বিকাল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি রফিক আজাদ : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশ নেন কবি অসীম সাহা, কবি ফারুক মাহমুদ এবং কবি জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার।

প্রাবন্ধিক বলেন, বিশ শতকের ষাটের দশকে বাংলাদেশের কবিতাধারার যে নবীন ও দীপ্র, ক্ষুব্ধ ও দীপ্র কবি প্রবংশের আবির্ভাব, রফিক আজাদ তাদের অন্যতম। সংক্ষুব্ধ ষাটের দশকে প্রথম হাজিরা দিয়ে তিনি অতিক্রম করেছেন পঞ্চাশের অধিক সৌরবর্ষ। দীর্ঘ এই সময়খণ্ডে, নিরন্তর সাধনায় কবি রফিক আজাদ নির্মাণ করেছেন নিজস্ব এক শিল্পভুবন; বিষয়-বৈচিত্র্যে এবং প্রকরণ-প্রসাধনে সাজিয়ে তুলেছেন প্রাতিস্বিক এক কবিতাভবন।

কাব্যযাত্রার সূচনালগ্নে সমাজ ও মানুষ সম্পর্কে নির্লিপ্ত থাকলেও ক্রমেই তিনি সংলগ্ন হয়েছেন বৃহত্তর জাতিসত্তার সঙ্গে, স্বদেশের মৃত্তিকা ও মানুষের সঙ্গে। সন্দেহ নেই, ব্যক্তির অন্তর্গত উপলব্ধিই কবি রফিক আজাদের কবিতার মূল সুর, তবে ব্যক্তির সীমানা ছাড়িয়ে তার কবিতায় নীরবে ভেসে ওঠে স্বদেশের মুখ, তার কণ্ঠেই শোনা যায় প্রত্ন-নৃগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের সুর আর স্বর।

তিনি বলেন, বিষয়-গৌরবে যেমন, তেমনি প্রকরণ-পরিচর্যায়ও কবি রফিক আজাদ স্বয়ং-স্বতন্ত্র এবং অনুপম। কবিতায় উপমা রূপক চিত্রকল্প নির্মাণে তিনি রেখেছেন স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর, শব্দ-ব্যবহারে তিনি নিয়ত সৃষ্টিশীল ও পরীক্ষাপ্রিয়। তার কবিতা পাঠকের ভাবনা-বিশ্বকে আলোড়িত করে, চেতনায় তোলে অভিঘাত। কেন্দ্রের পরিবর্তে তার কবিতা প্রান্তের জয়গানে। এসব প্রবণতাই সমকালীন বাংলা কবিতায় তাকে করে তুলেছে বিশিষ্ট ও ব্যতিক্রমী।

আলোচকরা বলেন, রফিক আজাদ বাংলা কবিতায় এক অনিবার্য নাম। তার কবিতা ব্যক্তিক ও সামষ্টিক বোধের ধারক। শব্দকে কী করে চেতনার গভীরতম উপলব্ধির বাহক করে তোলা যায়- রফিক আজাদের কবিতা তার এক শৈল্পিক দৃষ্টান্ত। তিনি সামরিক শাসনের বুটের তলায় চাপা পড়া জীবনযৌবনের রুদ্ধদ্বারকে মুক্ত করার সাধনা করেছেন কবিতায়। তারা বলেন, রফিক আজাদ একজন বিরল সম্পাদকও বটে।

বাংলা একাডেমির সাহিত্যপত্র উত্তরাধিকার, রোববার, ঘরে বাইরে ইত্যাদি সাময়িকপত্র সম্পাদনার মধ্য দিয়ে তিনি নবীন লেখকের স্বর আবিষ্কার করেছেন। গদ্যে ততটা সক্রিয় না হলেও তার আত্মজীবনী ‘কোনো খেদ নেই’ বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ভুবনের এক প্রামাণ্য দলিল হয়ে রয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে রশীদ হায়দার বলেন, রফিক আজাদ মানেই জীবন, তারুণ্য এবং সুন্দরের প্রতি পক্ষপাত। তার মতো বিশুদ্ধ কবির আবির্ভাব বাংলাদেশের কবিতার জগতকে করেছে ঋদ্ধ। কবিসত্তার বাইরে তার ব্যক্তিসত্তাও ছিল সমান আকর্ষণীয়। ব্যক্তিগত জীবনে তার মতো দেশপ্রেমিক, বন্ধুবৎসল, উদার-মানবিক মানুষের সন্ধান পাওয়া সত্যিই কঠিন ব্যাপার। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি রফিক আজাদের ৭৭তম জন্মবার্ষিকীতে তাকে স্মরণের আয়োজন করে কবিতাপ্রেমী ও সাহিত্যানুরাগী সবার কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছে।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন শহীদ ইকবাল, মণিকা চক্রবর্তী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারুক সুমন এবং আহম্মেদ শরীফ।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ এবং টোকন ঠাকুর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম এবং নাসিমা খান বকুল। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মিজান মাহমুদ রাজীব, ফারহানা শিরিন এবং তানজিনা করিম স্বরলিপি। নৃত্য পরিবেশন করেন সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানির নৃত্যশিল্পীরা।

আজকের অনুষ্ঠান : বৃহস্পতিবার মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বিজ্ঞানভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। আলোচনায় অংশ নেবেন রেজাউর রহমান, আবদুল কাইয়ুম এবং অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!