• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েকে গ্রেফতারের পর যা বললেন মিন্নির বাবা


বরগুনা প্রতিনিধি জুলাই ১৭, ২০১৯, ০১:১৭ পিএম
মেয়েকে গ্রেফতারের পর যা বললেন মিন্নির বাবা

বরগুনা : বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ১ নম্বর সাক্ষী তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন।

এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বরগুনা পুলিশ লাইনসে নেওয়া হয়। সেখানে তার বক্তব্য রেকর্ড ও জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এ সময় মিন্নির সঙ্গে তার বাবা মোজাম্মেল হোসেনও ছিলেন।

মেয়েকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ের ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। ধারণা করা হচ্ছে, কারও সঙ্গে যোগসাজশে আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ দেখেছে আমার মেয়ে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে।’

মিন্নির চাচা আবু সালেহ জানান, মিন্নির বাবার বাড়িতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০ সদস্যের পুলিশ টিম এখনো অবস্থান করছে। সকাল পৌনে ১০টার সময় মিন্নিকে আনার জন্য নারী পুলিশের একটি দল মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের বাড়িতে যায়। তারা পরিবারকে জানিয়েছিল, রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের শনাক্ত ও মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য তাকে পুলিশে লাইনে যেতে হবে।

এর আগে নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বরগুনা পৌরসভার মাইঠা নয়াকাটা এলাকার নিজ বাসা থেকে বরগুনার পুলিশ লাইন্সে নিয়ে আসা হয়। এর পর তাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আট ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বেলা তিনটার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পরের দিন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নামে এবং চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

সাক্ষী থেকে আসামি মিন্নি : রগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিবেকে নাড়া দেয় দেশব্যাপী সকল মানুষের। নারকীয় ওই হত্যাকাণ্ডের প্রথম ভিডিওতে রিফাত শরীফকে বাঁচাতে তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির প্রাণপণ প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয় দেশজুড়ে। কিন্তু তখনও কে জানত সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভূত!

হত্যাকাণ্ডের পরদিন দুপুরে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। স্বাভাবিক কারণেই এ মামলার প্রধান সাক্ষী হন নিহত রিফাতের স্ত্রী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। কিন্তু পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য। রিফাত হত্যা মামলায় মিন্নি হয়ে যান প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে আসে পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ ও পুলিশের কৌশলী এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আটকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর তখনই প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি বনে যান মিন্নি।

তবে মিন্নিকে গ্রেফতারের বিষয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। মিন্নিকে গ্রেফতারের পর তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারাতো সবাই ভিডিওতে দেখেছেন, মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। আমার মেয়েকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার অতটুকু মেয়ে কী করে খুন করতে পারে? ওর শরীরে কি একজন মানুষ খুন করার মতো শক্তি আছে?’

এদিকে মিন্নিকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানাতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বরগুনা জেলা পুলিশ। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই রিফাত শরীফকে খুন করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘রিফাত হত্যা মামলার একমাত্র প্রতক্ষদর্শী ও প্রধান সাক্ষী নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে অনেকদিন ধরে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম।

মঙ্গলবার সকালে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিন্নিকে তার বাবাসহ পুলিশ লাইনে নিয়ে এসে জবানবন্দি গ্রহণ ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ও বিভিন্ন সময় পুলিশের কাছে আসা তথ্য সমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। তাই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার রাত ৯টার সময় পুলিশ মিন্নিকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এ মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতে হাজির করে মিন্নির রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ। রিফাত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকলেও পুলিশের তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাদকের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!