• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগকে ঘিরে অশনিসংকেত!


নিজস্ব প্রতিনিধি জুলাই ১৬, ২০১৯, ০৩:২৩ পিএম
ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগকে ঘিরে অশনিসংকেত!

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে কারা আসছে; নেতাদের পকেট থেকে নাকি রাজপথ থেকে। দীর্ঘদিন মাঠে থাকা কর্মীরা হতাশ। অন্যদিকে রাজনীতিতে আনকোরা সুবিধাবাদীদের আগমনের গুঞ্জন! ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক এ দুর্বলতার দায়ভার কার?

দফায় দফায় উদ্যোগী হওয়ার পরও যখন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। হতাশা তখন প্রকট। এ হতাশা শুধু যে পদবঞ্চিতদের তাই নয়। হতাশা প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহে স্বাধীনতাকালীন ও পরবর্তী ছাত্রলীগের নেতৃত্বদানকারী নেতারাও। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, নিজস্ব কেন্দ্রিক ব্যক্তি, গ্রুপিং, আস্থার সঙ্কটকে দায়ী করা হয়েছে। 

৭১ এ ময়ময়নসিংহ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান গৌরীপুর আসনের এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, নেতৃত্বশূন্য হবে ছাত্রলীগ। রাজনীতির শুরুতে স্বপ্ন ঝরে পড়বে। যোগ্য নেতৃত্ব আসবে না। মাঠে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্নরা বঞ্চিত হলে সাংগঠনিক দুর্বলতা তৈরি হবে। আনকোরা নেতৃত্ব দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।

ময়মনসিংহের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দায়ী করে এমপি নাজিম বলেন, এটি মনিটরিং করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। যা তারা করতে পারেনি।

ছাত্রলীগের সোনালী অতীতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ অনেকেই ছাত্র জীবনে সারা বাংলাদেশে পরিচিত ছিলেন। বর্তমান রাজনীতিতে সেক্রিফাইস নেই। একজন আরেকজনকে পিছনে টেনে ধরার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলেই যোগ্যদের মূল্যায়নের মাধ্যমে সংগঠন শক্তিশালী হবে।

তিনি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগকে সাংগঠনিকভাবে সচল রাখতে মাঠে থাকা কর্মীদের নিয়ে অতিসত্বর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি পরামর্শ দেন। ছাত্রলীগে এখন বয়সসীমা রয়েছে। তাই একটি ছেলে অথবা মেয়ে ছাত্রলীগ করার জন্য এসে বঞ্চিত হলে পরবর্তী পথচলা বন্ধ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাদের অন্য সংগঠনেও জায়গা পাওয়াটা কষ্টকর হয়।

এদিকে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হাসান বাবু বলেন, ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের জন্য ভয়াবহ দুর্যোগ। ছাত্রলীগের রাজনীতে এমন অবস্থা কখনো হয়নি। অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগকে বাঁচানো দরকার।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফ হাসান অনু বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ছাত্রলীগ আমার কর্মী গড়ার পাঠশালা। পাঠশালা এখন ছাত্র শূন্য। অপাত্রে কন্যা দান করলে যা হয়। কষ্ট লাগে ছাত্রলীগের এ অবস্থা দেখলে। হৃদয়ে ধারন করি ছাত্রলীগকে তাই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। শুধু শুধু ওদেরকেই দোষ দিয়ে কি লাভ- এদেরকে যারা দেখভাল করে আগে তাদেরকে রাজনৈতিক মন মানসিকতা তৈরি করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত ছাত্রলীগতো এমনই হবে।

ময়মনসিংহে সর্বশেষ তাজ রানা ও আক্তারুজ্জামান রবিন এর কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবিএম আক্তারুজ্জামান রবিন বলেন, প্রায় ৮ বছর পূর্ণতা পায়নি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ। ইতিমধ্যেই নেতৃত্বের সংকট পড়েছে ছাত্রলীগে। পদপদবী ছাড়া রাজনীতিতে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ নেই। পরবর্তী নেতৃত্বে কাকে আনা হবে সে প্রশ্নে যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া এখানে কষ্টকর।

তিনি আরও বলেন, আমার জানামতে, বর্তমান ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছে সাইফুজ্জামান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসেন। তাদের কাছে এ কমিটি পূর্নাঙ্গ করার জন্য তালিকা জমা দিয়ে অপেক্ষমান ছিলো রকিব ও সাচী। কালক্ষেপনে কেন্দ্রীয় সম্মেলন পেরিয়ে বর্তমান নেতৃত্বের কাছেও ফের পূর্ণাঙ্গ তালিকা জমা দিয়েছে তারা। ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সংকট সমাধানে একমাত্র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেই এখানে ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় ছাত্রলীগের দুর্বলতা স্পর্শ করবে ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগকে।

গুঞ্জন রয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল রাজনীতিকে নিজস্ব করনে নিজেদের আশির্বাদ পুষ্ঠদের আনতে মরিয়া। অন্যদিকে বর্তমান জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক দপ্তর সেলে যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছেন তাতে রয়েছে বিগত দিনে মাঠে থাকা  দক্ষ একনিষ্ঠ স্থানীয় ক্লিন ইমেজের যোগ্য ছেলেরা। যারা কমিটিতে এলে ময়মনসিংহের রাজপথে ছাত্রলীগই পরিনত হবে আওয়ামী লীগের প্রধান শক্তি। এতে ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধার হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের ধারনা।

ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রকিবুল ইসলাম রকিব বলেন, বিগত সময়ে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা বাস্তবায়ন,জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে প্রচলিত গুজব রুখে দিতে, বিএনপি-জামাতের আগ্রাসন প্রতিহত করতে, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ সর্বদা বিচক্ষণ ভূমিকা রেখেছে যা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে আমরা এ যাবত যতবারই আমাদের প্রাপ্য অধিকারের সাংগঠনিক স্বীকৃতি চাইতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দ্বারস্থ হয়েছে ঠিক ততবারই স্থানীয়ভাবে আমাদের বাঁধা প্রদান করা হয়েছে। সত্যি বলতে কি আমরা ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ রাজপথে রাজনীতিতে সব সময়ই আওয়ামীলীগের সহায়ক ভূমিকা পালন করেছি কিন্তু পরিণামে বারবার প্রহসনের শিকার হয়েছি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী  ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি কপি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও উপ দপ্তর সম্পাদকের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা হয়েছে। এরপর থেকে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের প্রত্যেক কর্মী মধ্যে আবারও আশা জেগেছে এবং রাজপথ প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে।

ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সরকার মো. সব্যসাচী বলেন, শিক্ষা শান্তি প্রগতির পতাকা হাতে দেশ মাতৃকার সেবায় নিজেকে সর্বদাই নিবেদীত রেখেছি রাজপথে। দলের সকল নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছি। ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ তাদের কর্মীদের প্রাপ্য সাংগঠনিক স্বীকৃতির আশায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র রাজনীতিটা রাজনীতিকদের হাতে রাখতে হলে যারা মাঠের কর্মী তাদেরকে পদায়ন করতে হবে। ছাত্ররাজনীতির ধারাবাহিকতায় আমি ও আমার সভাপতি দায়িত্ব পেয়েছিলাম। আমরা যাদের মাঠে ময়দানে সংগঠনের জন্য পেয়েছি;তাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ করতে তালিকা জমা দিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!