• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধের মামলায় আ’লীগ নেতাসহ দুইজন গ্রেফতার


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০২:০২ পিএম
যুদ্ধাপরাধের মামলায় আ’লীগ নেতাসহ দুইজন গ্রেফতার

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রাজাকার আব্দুর রশিদ মিয়া ও রাজাকার শাহেব আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে সদরের নারায়নপুর ত্রীমোহনী থেকে সাদা পোশাকের একদল পুলিশ ওয়ারেন্টের ভিত্তিত্বে তাদের গ্রেফতার করে।

আ’লীগ নেতা মিয়া আব্দুর রশিদ এ সময় ডাকবাংলা চালকল মালিক সমিতির নির্বাচন পর্যবেক্ষন করছিলেন।  ঘটনাস্থলে থাকা হলিধানী ইউনিয়নের মেম্বর মতিয়ার রহমান ও সাগান্না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, দুপুরের দিকে সাদা পোশাকের একদল লোক আব্দুর রশিদকে তুলে নিয়ে যায়।  আমরা তাদের চিনতে পারিনি।  

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, মানবতা বিরোধী মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা অনুয়ায়ী আব্দুর রশিদ ও শাহেব আলী নামে দুইজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।  

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ সদর উপজেলার কোলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য আশির উদ্দীন তার এলাকার ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। যার নং ঝি/সি ৭৯/০৯। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি প্রাথমিক অনুসন্ধান করে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপে সে সময় মামলাটি আপোষরফা করতে বাধ্য হন মুক্তিযোদ্ধা আশির উদ্দীন।

অভিযোগ পত্রে আশির উদ্দীন উল্লেখ করেন, ৭১ সালে পাকিস্থানী পক্ষ ত্যাগ করে জীবনের ঝুকি নিয়ে তিনি দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেন। এ খবর জানতে পেরে রাজাকার মসলেম উদ্দীন, আব্দুর রশিদ, আলাউদ্দীন, হাকিম আলী খোন্দকার, শাহজাহান, আসমত ও শাহেব আলীসহ ৫০ জন রাজাকার কোলা গ্রামে তার বাড়ি ঘেরাও করে। আশির উদ্দীন ও তার আরেক ভাই মহিরুদ্দীন এ সময় কাশিপুর গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। রাজাকাররা তাদের দুই ভাইকে না পেয়ে বড় ভাই আজিবর মন্ডল, হবিবার মন্ডল ও আনসার মন্ডলকে ধরে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের ব্রীজের নিচে হত্যার পর লাশ গুম করে।  আসামীরারা এ সময় তাদের ৫টি ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের আরো ২৫টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বলিয়ে দেন। রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বৃদ্ধ পিতা দুখি মাহমুদ ও মা কামিনী খাতুনকে। মুক্তিযোদ্ধা আশির উদ্দীনের মৃত্যুর পর তার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন দেশে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে আরেক দফা অভিযোগ করেন বলে তাদের পারিবারিক সুত্রে বলা হয়েছে।

গত ৯/১০ মাস আগে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল থেকে তদন্তে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর জালিয়ে দেওয়া ও স্বজনদের হত্যার প্রমান সংগ্রহ করে। অভিযোগ পাওয়া গেছে দেশ স্বাধীনের পর আইডিএল, জামায়াত, চরমপন্থি সংগঠন হক গ্রুপ, সর্বহারা ও সর্বশেষ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন রাজাকার আব্দুর রশিদ।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের আশ্রয় প্রশ্রয়ে রাজাকার থেকে রাতারাতি আওয়ামীলীগার হয়ে নৌকা প্রতিকে ইউপি নির্বাচন করেন এবং বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। তার দুই ছেলে হারুন ও বজলুর রশিদও যুবলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।

চাঁদাবাজী, ইয়াব, অস্ত্র ব্যাবসা ও শালিস বিচারের নামে কোটি কোটি সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন এই রাজাকার পরিবার। তাদের অত্যাচারে হলিধানী ইউনিয়নের মানুষ এক রকম অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।  গুজব আছে আওয়ামীলীগকে সিঁড়ি বানিয়ে ঝিনাইদহ, ঢাকা ও ভারতেও বাড়ি তৈরী করেছে রাজাকার আব্দুর রশিদ।  

এ বিষয়ে আব্দুর রশিদের বড় ছেলে হরুন অর রশিদ জানান, কে বা করা আমার পিতাকে ধরে নিয়ে গেছে তা আমি বলতে পারি না। তবে ঝিনাইদহের কোন জায়গায় খুজে আমি আমার পিতার সন্ধান পায়নি।     

সোনালীনিউজ/এআর/এএস

Wordbridge School
Link copied!