• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুবলীগের কোন দুর্নীতিবাজ যেন গণভবনে না আসে


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ১২:১৯ পিএম
যুবলীগের কোন দুর্নীতিবাজ যেন গণভবনে না আসে

ঢাকা: আসন্ন সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের জন্য আগামী ২৩ অক্টোবর তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। তবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যেসব যুবলীগ নেতা বিতর্কিত হয়েছেন, তারা সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। পদ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগের কারণে খোদ যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

যুবলীগের একাধিক জানায়, সম্মেলন সামনে রেখে আগামী রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসবে যুবলীগ। তবে শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী, যুবলীগ চেয়ারম্যানসহ সংগঠনের বিতর্কিত নেতাদের সে বৈঠকে উপস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর ২০ অক্টোবর গণভবনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে কারা উপস্থিত থাকবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার (১৬ অক্টোবর) বৈঠকে বসেছিলেন যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। 

এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যুবলীগের যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ২০ অক্টোবরের বৈঠক থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ছাড়াও সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়ায় তাকেও বৈঠক থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে যুবলীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘চেয়ারম্যান (যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী) যেহেতু অনেক দিন ধরে নিষ্ক্রিয়, তাই তিনি সম্ভবত গণভবনে যাবেন না। এর চেয়ে বেশি আমি আর কিছু বলতে পারব না।’

সর্বশেষ ২০১২ সালে যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে যুবলীগ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওমর ফারুক চৌধুরী। এরপর পদভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৬০-৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি অনেককে পদ-পদবী দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

গণভবনের বৈঠক শুধু নয়, এর আগে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই। এদিকে, তার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। শুধু তাই নয়, তার দেশত্যাগেও ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

জানা গেছে, যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে দিয়ে সব টাকা সংগ্রহ করা হতো। অভিযানের মুখে সেই আনিসের এখন হদিস মিলছে না। এর মধ্যে আনিসকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। অন্যদিকে, যারা টাকার বিনিময়ে পদ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে পরে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রমাণ পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ‘মনস্টার’ সম্বোধন করে তাদের পদ থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সভায় যুবলীগের কিছু নেতার কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

গেল ৭ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতাদের একটি ছবি দেখান শেখ হাসিনা। ওই ছবিতে সশস্ত্র ব্যক্তিদের পাহারায় যুবলীগের একজন নেতাকে অবস্থান করতে দেখা যায়। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে জুয়ার আড্ডায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনেন। এরপর থেকেই যুবলীগের এসব নেতার ব্যাপারে খোঁজ-খবর শুরু করে আওয়ামী লীগ।

পরে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অভিযানে এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা জি কে শামীমসহ বেশ কয়েকজন।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন অভিযোগ আসায় যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকেও সম্মেলনের আগে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে যে কঠোর রয়েছেন সেই বার্তাটা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, আগামী জাতীয় কংগ্রেসের বিষয়ে নেত্রীর গাইডলাইন দরকার আমাদের। এ বিষয়ে নেত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকের অনুমতি নিতে আজ (বুধবার) নেত্রীর সঙ্গে আমি দেখা করেছি। তিনি আমাদের আগামী রোববার বিকেল ৫টায় গণভবনে সময় দিয়েছেন।

এ সময় সংগঠনের চেয়ারম্যানের বিষয়ে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান যেহেতু প্রেসিডিয়াম বৈঠকে আসেন নাই, সেহেতু রোববারের বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন কিনা সেটা পরিষ্কার নয়।

হারুনুর রশীন আরো বলেন, গণভবন একটি পবিত্র জায়গা। এখান থেকে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নেত্রী তার সমস্ত পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যান। কাজেই এই পবিত্র জায়গায় কোনো বিতর্কিত লোকের যাওয়া উচিত নয় বলে মনে করি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!