• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পোশাক খাত


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১০, ২০১৯, ১২:০৪ পিএম
যে কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পোশাক খাত

ঢাকা : রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়া তৈরি পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন দমাতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। রাজধানীর উত্তরা ও পল্লবী এলাকায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা গত মঙ্গলবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।

এ ছাড়া ঢাকার অদূরে আশুলিয়া, সাভারের হেমায়েতপুর এবং নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। বেতন বৈষম্যের কারণে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে গত ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। জানুয়ারি মাস থেকে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাওয়ার কথা। তবে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রমিকরা।

নির্বাচনের আগে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা, উত্তরা, আজমপুর, আবদুল্লাহপুর এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে দীর্ঘসময় বিক্ষোভ করেন। সাভারের হেমায়েতপুরেও শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

অন্যান্য স্থানে নির্বাচনের কারণে আন্দোলনে ভাটা পড়লেও ব্যতিক্রম ছিল পল্লবী থানার কালশী। এখানে প্রতিদিনই সড়ক অবরোধ করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা। পল্লবী থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শ্রমিকরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা থানার ওসি নজরুল ইসলামকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং ইটপাটকেল দিয়ে আঘাত করে। এ ব্যাপারে গতকাল মুঠোফোনে নজরুল ইসলাম বলেন, এরা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। খুবই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে রাস্তাঘাট বন্ধ করছে। খতিয়ে দেখতে হবে এর নেপথ্যে অন্য কোনো শক্তি বা ইন্ধন আছে কি না।

তিনি আরো বলেন, আমরা পুলিশ সদস্যরা তো তাদের প্রতিপক্ষ নই। আমরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করি।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, মূল মজুরি কম হারে বাড়ানোর পুরনো কৌশলটি মালিকপক্ষ এবারো নিয়েছে। তার কারণে শেষ পর্যন্ত নতুন কাঠামোতে শ্রমিকের একটি বড় অংশের মূল মজুরি প্রকৃতপক্ষে বাড়েনি। ফলে ওভারটাইম ও উৎসব ভাতাও বাড়বে না তাদের। পাঁচ বছর পর নতুন মজুরি কাঠামোয় প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণেই শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন, এমনটিই জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিকনেতা।

তিনি আরো বলেন, ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে ওপরের  গ্রেডে, যেখানে দক্ষ শ্রমিকরা কাজ করেন। সেসব  গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়ানো দরকার ছিল, সেটি  হয়নি।  সে জন্য শ্রমিকরা খুশি হতে পারেননি।

জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, এখানে একটু সমস্যা আছে। যে কারণে আজকের এই আন্দোলন সেটা হচ্ছে ২০১৩ সালে নিম্নতম মজুরি বোর্ড হয়েছিল ৩ বছরের ব্যবধানে আর এবার হয়েছে ৫ বছর পর। সঙ্গত কারণেই নিম্নপর্যায়ের শ্রমিকদের চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান দেখা দেয়। তার মানে শ্রমিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন বাড়েনি। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডে এ সমস্যাটি প্রকট হয়েছে। আর গার্মেন্ট সেক্টরে শতকরা ৮০ জন এই তিন গ্রেডে কাজ করে থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা বলুন আর সমস্যা সমাধান বলুন- এ ক্ষেত্রে সরকার, মালিক ও শ্রমিক তিন পক্ষ বসে পুরো বিষয়টি সমাধান করা উচিত।

সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, উল্লিখিত বেতন বৈষম্য ছাড়াও কিছু কিছু পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মূল বেতন বকেয়া রাখে। ২-৩ মাস পেরিয়ে গেলেও তারা বেতন দেন না। ওভার টাইম দেন না ঠিকমতো। এতে ও শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাঁধে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!