• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারনে শেয়ারবাজার ছাড়ছে বেক্সিমকো সিনথেটিকস


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০, ১১:৫৮ পিএম
যে কারনে শেয়ারবাজার ছাড়ছে বেক্সিমকো সিনথেটিকস

ফাইল ছবি

ঢাকা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপ বেক্সিমকোর মালিকানা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেড। গত মঙ্গলবার থেকে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে লেনদেন স্থাগিত রয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিটি স্বেচ্ছায় তালিকাচ্যুত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদনও করেছে।

১৯৯৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের এ কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে। লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ রয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। সর্বশেষ ২০১২ আর্থিক বছরের জন্য কোম্পানিটি ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিলো। লোকসানের বোঝা কমাতে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ‘জেড’ ক্যাটগরির এ কোম্পানিটি। লোকসান থেকে বাঁচতে কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানায়, ড্রন টেক্সাচারাইজিং ইয়ার্ন (ডিটিওআই) নামে এক ধরনের পলিয়েস্টার সুতা উৎপাদন ও বিক্রির জন্য কোম্পানিটি ১৯৯০ সালের ১৮ জুলাই ‘যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর’-এ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ১৯৯৩ সালের ৪ নভেম্বর ও ৬ নভেম্বর যথাক্রমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোম্পানির কার্যক্রম ছিল একক পণ্য অর্থাৎ ডিটিওয়াই ঘিরে। তবে তখন ডিটিওয়াই-এর ব্যাপক চাহিদা ছিল, তাই কোম্পানিটিও ভালো মুনাফা অর্জন করে এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। তখন থেকে কোম্পানি খুবই কঠিন সময় পার করতে থাকে। ডিটিওয়াই আমদানির ওপর সরকার শুল্ক হ্রাস করায় বারবার কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে থাকে।

শুল্ক হ্রাসের কারণে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সস্তা ডিটিওয়াই বাজার দখল করে। ফলে বাংলাদেশে এই ধরনের সুতা উৎপাদন করে মুনাফা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়ে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, গত ৭ বছর ধরে সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও কোম্পানি লক্ষ্যমাফিক উৎপাদন বা মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয় কোম্পানিটির। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের চেয়েও কম দরে কেনাবেচা হয়ে আসছে।

অবশেষে, কোম্পানি উৎপাদন কার্যক্রম ও কারখানা বন্ধে বাধ্য হয়। আইনানুযায়ী সকল দেনা পরিশোধের পর সকল শ্রমিক এবং বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও স্টাফকে ছাঁটাই করে।

কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা তালিকাচ্যুতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিশনে আবেদন করে। পরে কমিশন কোম্পানির সাথে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে একাধিকবার বৈঠকে বসে। সব কিছু ঠিকঠাক করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে করে কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়িয়ে বা কমিয়ে কেউ স্বার্থ হাসিল করতে না পারে। চুড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এটি হবে একটি ইতিহাস। এর আগে কোন কোম্পানি স্বেচ্ছায় তালিকাচ্যুতির আবেদন করেনি।

বিএসইসি সোমবার এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দিয়েছে। ১৯৬৯ এর সেকশন ৯ এর ৭ ধারা অনুযায়ী লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্যদিকে স্টক এক্সচেঞ্জ ১৯৬৯ এর সেকশন ৯ এর ৮ ধারা অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে ৩০ দিনের জন্য লেনদেন স্থগিত করতে পারে।

সর্বশেষ সোমবার ডিএসইসিতে কোম্পানিটির সর্বশেষ শেয়ার দর ছিল ৮ টাকা ৫০ পয়সা। ১৯৯৩ সালে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোধিত মূলধন ৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিকট রয়েছে দশমিক ০২ শতাংশ। এছাড়াও সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৪৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার।

এদিকে জানা গেছে, বেক্সিমকো সিনথেটিকসের শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১০ টাকায় কিনে নেবেন উদ্যোক্তারা। তাতে কোম্পানির প্রায় ৫৯ কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের দিতে হবে।

দেশের বিদ্যমান কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ার বাইব্যাকের আইনগত কোনো বিধান নেই। একইভাবে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্তি বিধিমালায় স্বেচ্ছায় তালিকাচ্যুতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মও নেই। এ কারণে বেক্সিমকো সিনথেটিকস কর্তৃপক্ষ বিএসইসির কাছে তালিকাচ্যুতির বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছে বলে জানা গেছে।

সোনালীনিউজ/এলএ

Wordbridge School
Link copied!