• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যে কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশীরা


সোনালীনিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯, ০৪:৩৩ পিএম
যে কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশীরা

ঢাকা: জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ দুই পদের প্রার্থীরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রার্থীদের মতো তাদের সমর্থক আর অনুসারীদের মধ্যেও চলছে তুমুল প্রতিযোগিতা। নিত্যনতুন কৌশলে কে কার চেয়ে প্রচারে এগিয়ে, তা নিয়ে সরব সবাই। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। প্রচারে ব্যবহার করছেন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভার, ইউটিউব।

নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী রয়েছেন ৯ জন আর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রয়েছেন ১৯ জন। ভোটে অংশ নেবেন সংগঠনটির সারাদেশের ১১৭টি ইউনিটের ৫৩৩ জন কাউন্সিলর।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী জানান, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছাত্রদলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাউন্সিলর কার্ড বিতরণ করা হবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে তাদের কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এ বি এম মোশারফ হোসেন জানান, নির্বাচন পরিচালনার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ফজলুল হক মিলন এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে আছেন শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও আজিজুল বারি হেলাল। পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবিএম মোশারফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু।

তারা জানান, ভোটের দিন তাদের কাছে সকাল ৮টায় ব্যালট পেপার হস্তান্তর করবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তবে কোথায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তারা রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন। এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি। সেখানে না হলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভোট হবে। কোথায় ভোট নেওয়া হবে তা বৃহস্পতিবার নির্ধারণ হবে বলে তিনি জানান।

নেতাকর্মীরা জানান, ২৭ বছর পর কাউন্সিল সামনে রেখে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা দিনমান ভোটের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত। একে অন্যের ভোটের ব্যাংকে ভাগ বসানোর কৌশল নিচ্ছেন। প্রার্থীদের পক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রভাবশালী নেতারাও কাজ করছেন।

নেতাকর্মীরা জানান, প্রভাবশালী সভাপতি প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণবঙ্গে দু'জন আর উত্তরবঙ্গে দু'জন রয়েছেন। সংগঠনের সাবেক বৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানের বাড়ি বৃহত্তর  যশোর অঞ্চলে। আবার সংগঠনের সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদক ফজলুর রহমান খোকন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি সাজিদ হাসান বাবুর বাড়ি উত্তরবঙ্গে।

এছাড়া আরেক প্রভাবশালী সভাপতি প্রার্থী মামুন খানের রাজনীতি উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক হওয়ায় তিনিও এ অঞ্চলের ভোটে ভাগ বসাবেন। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গের ভোটও ভাগ হয়ে যেতে পারে। আবার শ্রাবণের কর্মী-সমর্থকরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও অন্যান্য বিভাগের মতো উত্তরবঙ্গের ভোটে ইতিমধ্যে প্রভাব বিস্তার করায় ওই তিন প্রার্থীর একচেটিয়া ভোটের সম্ভাবনা কম। একইভাবে অন্যান্য প্রার্থীও একে অন্যের ভোটের মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের মধ্যেও ভোটের হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন তাদের সমর্থকরা। এর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে জুয়েল মৃধা (সাইফ মাহমুদ জুয়েল) ও মো. হাসান (তানজিল হাসান) রয়েছেন। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুনের সমর্থিত প্রার্থী সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কারিমুল হাই নাঈম এবং অপর সিন্ডিকেটের প্রার্থী শাহ্‌ নাওয়াজ রয়েছেন।

আরেক প্রার্থী কুমিল্লা জেলার ডালিয়া রহমান থাকায় এ অঞ্চলের ভোটে ভাগাভাগি হবে। তাই প্রার্থীরা চেষ্টা করছেন- উত্তরবঙ্গের যে কোনো একজন সভাপতি প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে তাদের ভোটে ভাগ বসানোর। আমিনুর রহমান, শেখ আবু তাহের, জাকিরুল ইসলাম, মশিউর রহমান, ইকবাল হোসেন শ্যামল কাজ করছেন নিজস্ব কৌশলে। নেতাকর্মীরা জানান, ভোটের মাঠে মূলত আমিনুর রহমান, জুয়েল মৃধা, শাহ নাওয়াজ, ইকবাল হোসেন শ্যামল, আবু তাহের, কারিমুল হাই নাঈমের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে।

ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ছাত্রদলের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করতে চান তিনি। লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম জোরদার করবেন তিনি।

সভাপতি প্রার্থী ফজলুর রহান খোকন বলেন, তার নির্বাচনী ইশতেহারে ১০ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে তিনি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনকেই প্রধান ও প্রথম গুরুত্ব দিয়েছেন।

সভাপতি প্রার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, অদম্য-১৯ নামে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করেছেন। এতে তিনি বিএনপির ১৯ দফা পরিকল্পনার আলোকে ১৯টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাইফ মাহমুদ জুয়েল তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেন, তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে পারলে সংগঠনের কর্মকাে সফলতার জন্য পুরস্কার ও ব্যর্থতার জন্য তিরস্কারের ব্যবস্থা করবেন। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠন, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সহায়তায় আইনি সহায়তা কেন্দ্র করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেবেন।

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আমিনুর রহমান আমিন বলেন, তার ইশতেহারে ছাত্রদলকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকনির্ভর না করে কমিটির সবাইকে নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করা, মাদকমুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, সংগঠন গতিশীল করতে নিয়মিত কর্মিসভা, সব পর্যায়ে ছাত্রদের দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন গণমুখী পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শাহ নাওয়াজ বলেন, তার ইশতেহারে উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিএনপি ঘোষিত ভিশন-২০৩০ প্রচার, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা।

১৯৯২ সালে সর্বশেষ হওয়া ছাত্রদলের পঞ্চম কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে বিএনপির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও গুম হওয়া বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।সমকাল

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!