• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যে পথে হাঁটছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মে ১৮, ২০১৯, ০১:২৩ পিএম
যে পথে হাঁটছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক

ঢাকা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনই কোনো ধরণের বাণিজ্য আলোচনায় বসতে চাইছে না চীন। এমনটাই খবর প্রকাশ করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া। কোনো বৈদেশিক চাপে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয় বলে দাবি বেইজিংয়ের।

যদিও ওয়াশিংটন বলছে, এবারের শাস্তিমূলক শুল্ক থেকে কৃষকদের ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা রাখতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। এমনই এক পরিস্থিতিতে বিশ্বের শীর্ষ এই দুই দেশের মধ্যে থাকা বাণিজ্য সম্পর্ক ঠিক কোন পথে হাঁটছে, এবার সে দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলমান বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কখনই আন্তরিক ছিল না। কেননা সম্প্রতি কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই আলোচনার পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট করেছে ওয়াশিংটন।

এর আগে গত বুধবার (১৫ মে) যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানিউচিন বলেছিলেন, ‘চীনের সঙ্গে চলমান সমঝোতা প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে আমি খুব শিগগিরই বেইজিং সফরে যেতে চাই।’ যদিও পরদিন চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে।

তারা জানায়, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের এই সফরের পরিকল্পনা সম্পর্কে চীন সরকারের হাতে কোনো তথ্য নেই। একইসঙ্গে চীনের টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে টেকনোলজি লিমিটেডের ওপর ওয়াশিংটনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বেইজিং।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একদিকে বলা হচ্ছে যে তারা আলোচনা চায়; যদিও একই সঙ্গে তারা কিছু ছলচাতুরী করছে, যাতে এই আলোচনার পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমঝোতায় কোনো আন্তরিক প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। বরং তারা একাধিক চাপ প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনের জনগণের মতামতকে অবজ্ঞা করে, তাহলে ওয়াশিংটন কখনই বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো জবাব পাবে না।’

এমনই এক জটিল পরিস্থিতিতে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি জাপানে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় জি২০ সম্মেলনের দিকে। অনেকেরই ধারণা সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের একটি বিশেষ বৈঠক হতে পারে। এর আগে গত ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে উভয় নেতার মধ্যে সাক্ষাতের মাধ্যমে আলোচনায় ফিরে আসেন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা। যদিও পরবর্তীতে চলতি মাসে আবারও সেই আলোচনা পুরোপুরি ভেস্তে যায়।

চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ও দেশটির কূটনীতিক ঝু শিওমিং বলেন, ‘আলোচনার প্রধান ইস্যুগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ছাড় না দেয়, তাহলে আলোচনায় অংশ নেওয়া চীনের জন্য এক রকম অর্থহীন।’

চীনের এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘ওয়াশিংটনের কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষিতে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে বেইজিং কোনো মোহজালে আবদ্ধ নয়। চীনের বর্তমান অবস্থান এখন কঠোর হতে বাধ্য। কেননা তারা এই চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য কোনো তাড়াহুড়োর মধ্যে নেই।’

ঝু শিওমিং এও বলেছেন, ‘গত বৃহস্পতিবারের মন্তব্যের মাধ্যমেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এটা পরিষ্কার করেছেন যে; নিকট ভবিষ্যতে আর কোনো বাণিজ্য আলোচনা হচ্ছে না।’

এর আগে চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গাও ফেং বলেছিলেন, ‘যে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই চীনের তিনটি প্রধান উদ্বেগের সুরাহা করতে হবে। ওয়াশিংটনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আমাদের বাণিজ্য আলোচনার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

গত শুক্রবার বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্কারোপের বিপরীতে যুক্তিযুক্ত মাত্রায় পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এসবের প্রেক্ষিতে দেশটির জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের মুখপাত্র মেং ওয়েই বেইজিংয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, ‘এরই মধ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে কমিশন। প্রয়োজনে আমরা অবশ্যই পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

এ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান সংকট নিরসনে বেইজিং ঠিক কোন পথে হাঁটছে, এমন বিষয়ে ‘বিবিসি নিউজ’ বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছে। প্রথমত. বিশ্বব্যাপী ট্রেজারি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ড বিক্রি করে দিতে পারে চীন।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, গত মার্চ মাসে সরকার আড়াই বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বন্ড বিক্রি করেছে। যা দেশটির অর্থনীতিকে যে কোনো সময় চাইলে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

যদিও চীনের সামনে আরও একটি যে পথ খোলা আছে, তা হলো বাজারে ইউয়ানের মান হ্রাস করা। কেননা ইউয়ানের মান কমালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যের দাম আপনাআপনি কমে যাবে। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ প্রতিস্থানি খুব সহজেই চীনা পণ্য কিনতে পারবে।

যদিও এতে মার্কিন শুল্কের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। যার অংশ হিসেবে সম্প্রতি চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কয়েক দফায় ইউয়ানের মান হ্রাস করেছে।

বেইজিংয়ের জন্য তৃতীয় যে পথটি খোলা আছে, তা হলো খুব শিগগিরই বিদেশি বিনিয়োগ কমিয়ে ফেলা। কেননা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এত দিন সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অথবা এফডিআই।

কিছুটা প্রতিকূল বাণিজ্যিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও মুনাফা ঘরে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে চীন। ২০১৮ সালে শীর্ষ এই দুই দেশের মধ্যে তিক্ত বাণিজ্যযুদ্ধ চললেও বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় সর্বাধিক এফডিআই প্রাপক দেশ ছিল এই চীন। যে কারণে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে আসন্ন বৈদেশিক বিনিয়োগের অনুমোদন দিতে পারে সংস্থাটি। সূত্র : ‘রয়টার্স’, ‘বিবিসি নিউজ’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!