• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যেভাবে দিন কাটছে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ পদচ্যুত সেই শোভনের


সোনালীনিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২, ২০২০, ০৮:৩৫ পিএম
যেভাবে দিন কাটছে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ পদচ্যুত সেই শোভনের

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার কর্মী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য থেকে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ সভাপতি পদে উঠে এসেছিলেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর এই উঠে আসা ছাত্রলীগের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ছাত্ররাজনীতিতে উত্তরবঙ্গের মানুষের মনে ব্যাপক আশার সঞ্চার করে। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই দুই বছর মেয়াদি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু এক বছর গড়াতেই অভিযোগ ও অনিয়মের কারণে তাঁকে সরে যেতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের সেই শোভন এখন মনোযোগ দিয়েছেন ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-১ আসনের রাজনীতিতে। নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিচ্ছেন। করোনাকালে বিলিয়েছেন মাস্ক, স্যানিটাইজার। দেশজুড়ে বন্যা দেখা দিলে ত্রাণ নিয়ে গেছেন এলাকার মানুষের কাছে।

তিনি বলেন, ‘এলাকায় পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। দাদা মানুষের সেবা করেছেন। এখন বাবা মানুষের সেবা করছেন। দায়বদ্ধতা থেকে আমিও মানুষের সেবা করব। যতটুকু সম্বল আছে, ততটুকু দিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়াব।’

শোভন-রাব্বানীর হাতে তৈরি হওয়া ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে সবাই এখনো ঠিক থাকলেও নেই শুধু তাঁরা দুজন—সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন শোভন। তবে তিনি জিততে পারেননি। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেলের নুরুল হক নুর শোভনকে পরাজিত করে ভিপি নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন শোভন। তবে ছাত্রলীগ থেকে অপসারিত হওয়ার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সিনেট সদস্য থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

শোভন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তাঁর দাদা মরহুম শামসুল হক চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি কুড়িগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫-পরবর্তী ১৯৭৭ সালে দেশ ও দলের ক্রান্তিলগ্নে আওয়ামী লীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

শোভনের বাবা নুরুন্নবী চৌধুরী ১৯৮১ সালে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ১৯৯১ সালে থানা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (২০০১-১০) ও ২০১১ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, শোভন ছাত্রলীগে সক্রিয় থাকলেও ছাত্ররাজনীতিতে সেভাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেননি। দাদা শামসুল হক চৌধুরীর সুনামের কারণে তাঁকে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকাকালে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠন নিয়ে বিতর্ক; বিবাহিত, অছাত্র ও হত্যা মামলার আসামিকে সংগঠনে পদ দেওয়াসহ অনিয়ম, মাদক সম্পৃক্ততা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে শোভন-রাব্বানী বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের একটি সক্রিয় বড় অংশকে পদবঞ্চিত করার অভিযোগও ওঠে। সেটা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দমাতে শোভন-রাব্বানীর অনুসারীরা চড়াও হলে ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগে মারধরের ঘটনা ঘটে। শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু কোটির উন্নয়নকাজের ক্ষেত্রে ঠিকাদারসহ উপাচার্যের কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল। এর জেরে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর আড়ালে চলে যান শোভন। কখনো ঢাকায় আবার কখনো গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সময় কাটান। রাজনীতিতে ফিরতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সুদৃষ্টির অপেক্ষায় থাকছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি কুড়িগ্রামে, সেখানকার মানুষ যেন ভালো থাকে সে জন্য তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। নিজের যতটুকু অবস্থা আছে, সেটা নিয়ে পাশে থাকি। বন্যা ও করোনায় তাদের পাশে ছুটে গেছি। শেখ হাসিনার মুখ যেন উজ্জ্বল করতে পারি সে জন্য কাজ করছি। এক কথায় শেখ হাসিনার পথ চেয়ে বসে আছি।’সূত্র:কালের কণ্ঠ

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!