• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে পূরণ হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন


রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ মে ২১, ২০১৯, ০৮:৩৪ পিএম
যেভাবে পূরণ হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন

ফাইল ছবি

ঢাকা: স্বপ্ন দেখাটা শুরু হয়েছিল অনেক আগে। সেই স্বপ্ন আর সত্যি হয় না। উল্টো স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় বাংলাদেশকে পুড়তে হয়েছে বারবার। ১৯৯৪ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচটি না হারলে হয়তো বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলতে পারত ১৯৯৬-এ। যেটি হয়েছিল এই উপমহাদেশেই।

বাংলাদেশের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। তার আগে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে কতই না চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়েছে। সবারই মনে থাকার কথা ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফির কথা। কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডকে (নেদারল্যান্ড) পর্যদস্তু করার পর পরই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। ফাইনালে কেনিয়াকে হারানোর পর পৃথিবীর বৃহত্তম এই ব-দ্বীপে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে। গ্রাম থেকে শহরে শুধুই রংয়ের মাখামাখি। গোটা দেশের চিত্রই ছিল এরকম।

সেই আনন্দ আরও দ্বিগুন হলো ১৯৯৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর, তারপর আকাশে উড়তে থাকা পাকিস্তানকে যখন মাটিতে নামাল বাংলাদেশ। ৩১ মে নর্দাম্পটনে ইতিহাস রচিত হলো। সেই ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস পাইয়ে দিতে রাখল বড় ভূমিকা। এখন বিশ্বকাপে অংশ নিতে বাংলাদেশকে খেলতে হয় না আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে। এই প্রাপ্তি এমনি এমনি আসেনি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই বিশ্বকাপে নিয়মিত খেলছে বাংলাদেশ।

আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠেছিল সেই ১৯৮২ সালে। এরপর ১৯৯০ সালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কিন্তু নিয়তি বাংলাদেশের ললাটে বিশ্বকাপ রাখেনি! সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েই তুষ্ট থাকতে হয়েছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। ঠিক এ সময়ই ঢাকায় তুমুল জনপ্রিয়তঠা পেয়ে যায় ক্রিকেট। বিশেষ করে ঢাকা লিগ হয়ে ওঠে দারুন জমজমাট। আর এর অন্যতম কারণ ছিল বিদেশী ক্রিকেটারদের উপস্থিতি। তখন আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানে পুরো দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার মতো ব্যাপার!

আস্তে আস্তে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশাও বেড়ে যায় ক্রিকেটপ্রেমীদের। ১৯৯৪ সালে যে দলটা আইসিসি ট্রফিতে অংশ নেয় সেই দলটি ছিল ১৯৯০ এর তুলনায় শক্তিশালি। আশা করা হয়েছিল এই দলটিই পুরণ করতে পারে বাংলাদেশের অধরা বিশ্বকাপ স্বপ্ন। কারণ পরের বিশ্বকাপ (১৯৯৬) যে এই উপমহাদেশেই।

১৯৯০, ১৯৯৪ এবং ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফির তিনটি টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আকরাম খান। ১৯৯৭-এর আইসিসি ট্রফি জয়ের মহানায়কও তিনি। আকরামের জবানিতেই শুনুন সেই সময়ের কথা, ‘১৯৯০-এর দলটি সেমিফাইনালে উঠেছিল এবং জিম্বাবুয়ের সঙ্গে অল্প ব্যবধানে হেরে গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৪ এর দলটির প্রতিটি বিভাগই ছিল শক্তিশালি। এ  কারণেই আমরা টুর্নামেন্টটিতে খেলতে গিয়েছিলাম বড় আশা নিয়ে।’ এরপর আকরাম যোগ করেন, ‘টুর্নামেন্টে আমরা  দারুন শুরু করেছিলাম। তবে প্রথম রাউন্ডে আমরা হেরে গিয়েছিলাম সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও হেরে যাই নেদারল্যান্ডের কাছে। ২০৬ রানই আমরা তাড়া করতে পারিনি। শুরুটা অত্যন্ত ধীরগতির হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠা যায়নি। এরপর কেনিয়ার কাছে হেরে আমাদের সব আশা শেষ হয়ে যায়।’

কেনিয়ার সঙ্গে ম্যাচটি ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৪। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যেটি ছিল অন্ধকারময় এক দিন। ম্যাচটিতে বাংলাদেশের জয়ের বিকল্প ছিল না। আকরামের ভাষায়,‘ আমরা দ্রুতই তাদের (কেনিয়া) উইকেট ফেলে দেই। কিন্তু  মরিচ ওদুম্বে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ থেকে আমাদের দুরে ঠেলে দিল। দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটি গড়ল তারা (১১৬ রান, ওদুম্বে এবং দীপক চুদাসামা)। স্কোরবোর্ডে উঠল ২৯৫ রান। এই রান অতিক্রম করা  ছিল সবসময়ই কঠিন।’

শুরুটা বাংলাদেশেরও হয়েছিল দারুন। প্রথম উইকেট জুটিতেই আমিনুল ইসলাম বুলবুল (৭৪) এবং জাহাঙ্গীর আলম (৫৭) তুলে ফেলেন ১৩৯ রান। কিন্তু ওই রানেই তারা দুজনেই আউট হলে সর্বনাশ হয়ে যায় বাংলাদেশের। আকরাম-মিনহাজুল আবেদীন নান্নু মিলে ৫০ রান যোগ করে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছেন। সেদিন পুরো দেশের সঙ্গে নাইরোবির সিমবা ইউনিয়ন গ্রাউন্ডের ড্রেসিংরুমে মুষড়ে পড়েছিলেন ক্রিকেটাররাও।

সেদিনের কথা এখনও ভোলেননি আকরাম,‘ ম্যাচের পর আমরা নিরব হয়ে যাই। এ কি হলো! সত্যি কথা বলতে তখন ভাবছিলাম বাংলাদেশের ক্রিকেট বুঝি শেষ হয়ে গেল। দলে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন। জানতাম তাদের অনেককেই পাওয়া যাবে না ১৯৯৭ সালে। বলতে গেলে এঁটা ছিল আমার ক্যারিয়ারে কঠিন এক মূহুর্ত।’

বাংলাদেশের ক্রিকেট শেষ হয়ে যায়নি, আকরামের পূর্বানুমান অসত্য প্রমাণিত হয়েছে ক্রিকেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তায়। দেখতে দেখতে চলে এল মালয়েশিয়ায় ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি। বাংলাদেশকে নেতৃত্বে দেন সেই আকরাম যিনি ১৯৯০ এবং ১৯৯৪ দুটি টূর্নামেন্টেই খেলেছেন। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বলতে যা বোঝায় বাংলাদেশের প্রথম সত্যিকারের নায়ক আকরাম সেটাই করে দেখালেন। হল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে একাই জিতিয়েছেন তিনি অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংস খেলে। ওই ম্যাচটি জিততে না পারলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলাই হয় না। এরপর সেমিতে স্কটল্যান্ড এবং ফাইনালে সেই কেনিয়াকে হারিয়েই আইসিসি ট্রফিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!