• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন বছরে প্রযুক্তি বিশ্ব

যেসব পণ্য মাতিয়ে রাখবে ২০১৯


বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক জানুয়ারি ৫, ২০১৯, ০৯:১৭ পিএম
যেসব পণ্য মাতিয়ে রাখবে ২০১৯

ঢাকা : ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পাতা বদলে এখন চলছে ২০১৯ সাল। বছর বদলের সঙ্গে সঙ্গেই বদলে গেছে প্রাপ্তি-প্রদান কিংবা আবিষ্কার বা অর্জনের খাতাও। যার ব্যতিক্রম নয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতেও। স্মার্টফোন ইয়ার খ্যাত ২০১৮ সালের প্রাপ্তি এখন মোটামুটি সবারই জানা আছে। আর সেই সঙ্গে মনে প্রশ্ন জাগছে প্রযুক্তি বিশ্বে কী ঘটতে পারে নতুন বছরে।

স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ বা নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি, নতুন বছর মাতিয়ে রাখবে যেসব প্রযুক্তি সেই বিষয়গুলোকে নিয়েই সোনালীনিউজ-এর আজকের আয়োজন-

ফাইভজি : পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ফাইভজি। যার মাধ্যমে  বিদ্যমান ফোরজির চেয়ে মিলবে শত থেকে হাজারগুণ বেশি ইন্টারনেট গতি। আমূল বদলে যাবে ভবিষ্যৎ যোগাযোগ পদ্ধতি আর প্রযুক্তির চেনা-জানা দুনিয়াটিও। বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে যাওয়া এই নেটওয়ার্ক চালু হতে যাচ্ছে চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই। ইতোমধ্যেই যার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বিশ্বের উন্নত দেশের সব মোবাইল অপারেটররা।

শুধু নেটওয়ার্ক চালুই নয় বিশ্বের বেশিরভাগ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। যার মধ্যে স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অপ্পো, শাওমি, এলজি, ওয়ানপ্লাসের মতো প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসেই তাদের ফাইভজি ডিভাইস প্রদর্শন করবে বলে গুঞ্জন আছে প্রযুক্তি বিশ্বে।

ফাইভজি নেটওয়ার্কের কারণে ডাটা প্রসেসিং আরো দ্রুত, আরো সহজ হবে। যার কারণে আইওটি ডিভাইসের ব্যবহার আরো বেড়ে যাবে। ঘর থেকে শুরু করে শহরের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা চলে আসবে স্বয়ংক্রিয় ইন্টারনেট ডিভাইসের আওতায়। এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি মোবাইল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিভিন্ন ডিভাইসে নতুন চমক নিয়ে এসেছে। সেখানে নতুন আরো সংযোজন নিয়ে আসবে ফাইভজি, উন্নত হবে রোবটিকসও। গত কয়েক বছর ধরে ধারণার পর্যায়ে ছিল এমন সব যন্ত্র জায়গা করে নেবে ঘরে কিংবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে।

স্মার্টফোন : ২০১৯ সালকে পঞ্চম প্রজন্মের বছর বা ফাইভজি ইয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভুল হবে না। কারণ, এই ফাইভ জি নেটওয়ার্ককে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই বিশ্বের নামি-দামি মোবাইল ব্র্যান্ডগুলো তাদের নতুন ডিভাইস উৎপাদনের দিকে নজর দিয়েছে এবং চলতি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসেই তাদের ফাইভজি ডিভাইস প্রদর্শন করতে পারে বলে ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে।

ইতোমধ্যেই প্রযুক্তি বিশ্বের এই কোম্পানিগুলোর উৎপাদন করা বেশ কয়েকটি স্মার্টফোনের তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি সিরিজের নতুন চমক।

ধারণা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে গ্যালাক্সি সিরিজে ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন হিসেবে এস১০-এ এস১০ প্লাসের ঘোষণা দিতে পারে বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে, নতুন এই স্মার্টফোনে উদ্ভাবনী ফিচারের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি ডিসপ্লে যুক্ত করা হতে পারে প্রতিষ্ঠানটির ডিসপ্লে উন্নয়ন ও উৎপাদন বিভাগের তৈরি ‘সাউন্ড-এমিটিং’ ডিসপ্লে প্রযুক্তি। অর্থাৎ যে ডিসপ্লে শব্দ নির্গত করতে পারে।

এদিকে ফাইভজি উৎপাদনের তালিকায় পিছিয়ে নেই ওয়ান প্লাস, শাওমি কিংবা নকিয়াও। গুঞ্জন আছে নতুন বছরে ক্যামেরা পারফরম্যান্স দিয়ে এমআই ফ্যানদের চমকে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা ব্র্যান্ড শাওমি। সম্প্রতি শাওমির একটি টিজারের মাধ্যমেই এই আভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

টিজার অনুযায়ী চলতি বছর রেডমি প্রো ২ মডেলের নতুন একটি স্মার্টফোন আনতে যাচ্ছে যার পেছনে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে শাওমি। ডুয়েল রিয়ার ক্যামেরার এ ফোনে উচ্চ মানের ছবি তোলার জন্য থাকবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফিচার। কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৬৭৫ মডেলের চিপসেট ব্যবহূত ফোনটির সেলফি ক্যামেরার ডিজাইনেও কিছু পরিবর্তন করা হতে পারে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর আর ফেস আনলক ফিচার।

এদিকে নিজেদের সামনে এগিয়ে রাখতে ৫ ক্যামেরার সেটআপসহ নিজেদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন নিয়ে হাজির হচ্ছে মোবাইল বিশ্বের আস্থাভাজন ব্র্যান্ড নোকিয়া। ফিচার ফোনের তুলনায় স্মার্টফোন বাজারে জনপ্রিয়তা কম থাকায় গত বছরেই এক ডজন স্মার্টফোন নিয়ে আবারো আলোচনায় আসে ফিনল্যান্ডের এই প্রতিষ্ঠানটি। আর এইচএমডি গ্লোবালের হাত ধরে আসা এই পাঁচ ক্যামেরার সেটআপ হতে পারে আসন্ন স্মার্টফোন বাজারের নতুন ট্রেন্ড।

ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন : ডিসপ্লে ভাঁজ করা যাবে এমন ফোল্ডেবল স্মার্টফোন নিয়ে আলোচনা ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। এমনকি ২০১৮ সালে এটাও অনেকে নিশ্চিত ছিল স্যামসাংই প্রথম এমন ফোন বাজারে আনতে যাচ্ছে। কিন্তু বছরের শেষ দিকে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে রয়োলে করপোরেশন নামের অখ্যাত একটি মোবাইল কোম্পানি বিশ্বের প্রথম ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন উন্মোচন করে ফেলে।

তবে এতে দমে যায়নি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাজারে কীভাবে আরো ভালো এবং অভিনব ফিচারে নিজেদের প্রথম ফোল্ডেবল স্মার্টফোন নিয়ে আসবে সেই চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই তো প্রথম প্রদর্শনীতে সম্পূর্ণভাবে উন্মোচন করা হয়নি স্যামসাংয়ের ফোল্ডেবল স্মার্টফোন। যা সম্পূণরূপে প্রকাশ করা হবে এ বছরেই। তাই আশা করা যাচ্ছে এই বছরের প্রথমার্ধেই ব্যবহারকারীদের হাতে ফোল্ডেবল স্মার্টফোন তুলে দিতে পারে বিশ্বখ্যাত স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো। আর এই তালিকায় স্যামসাংয়ের পাশাপাশি আছে এলজি, হুয়াওয়ে, অপ্পো এবং মাইক্রোসফটও।

স্বচালিত গাড়ি বা ট্রাক : বিগত কয়েক বছর ধরেই আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করা আরেকটি বিষয় হচ্ছে স্বচালিত গাড়ি। ইতোমধ্যেই এই প্রযুক্তির সঙ্গে সন্নিবেশ ঘটিয়ে তা বাস কিংবা ট্রাকের ওপরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে।

এমনকি প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরে বাণিজ্যিকভাবে কয়েকটি গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে আলোচনায় ছিল গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়াইমো এবং রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারও। ইতোমধ্যেই বেশ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ইতোমধ্যেই স্বচালিত এসব গাড়ির বিরুদ্ধে দুর্ঘটনার অভিযোগ থাকলেও ২০১৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে এ ড্রাইভারবিহীন গাড়ির ব্যবহার আরো বাড়বে বলে আশা করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

স্বচালিত গাড়ির পাশাপাশি স্বচালিত ট্রাক নিয়েও গবেষণা চলছে জোরালোভাবে। বছর খানেক আগেই এমন একটি ট্রাকও বাজারে নিয়ে এসেছিল বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভলবো অটোমোবাইলস। ভলবোর সেই স্বচালিত ট্রাকটি মূলত আবর্জনা সংগ্রহ কিংবা বর্জ্য অপসারণের কাজে ব্যবহূত হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে এমনই কিছু ট্রাক সুইডেন-ভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেনোভার জন্য বর্জ্য অপসারণে কাজ করছে। এ দিকে আবর্জনা সংগ্রহ করতে চলতি বছরে অন্তত পাঁচটি প্রধান শহর এই স্বচালিত রোবটিকস ট্রাক ব্যবহার করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে।

তবে চলতি বছরে তা বাণিজ্যিক রূপ পেতে পারে বলেই ধারণা করছে অনেকে। তাইতো চালকবিহীন ট্রাক তৈরির তালিকায় নিজের নামও রেখেছেন এলন মাস্কও। তার প্রতিষ্ঠান টেসলাও এই বছর স্বচালিত ট্রাক নিয়ে আসছে। আর ইতোমধ্যেই পণ্য পরিবহনের জন্য ওয়ালমার্ট ৩০টিরও বেশি ট্রাকের অর্ডার করেছে, যা চলতি বছরের শেষ নাগাদ হস্তান্তর করা হতে পারে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!