• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রঙ বদলে রাতারাতি ‘সু-প্রভাত’ হয়ে গেল ‘সম্রাট’


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২০, ২০১৯, ০৮:৪১ পিএম
রঙ বদলে রাতারাতি ‘সু-প্রভাত’ হয়ে গেল ‘সম্রাট’

ঢাকা: রাজধানীর সদরঘাট থেকে গাজীপুর মহানগরীর গাজীপুরা রুটে চলাচলকারী ‘সু-প্রভাত স্পেশাল বাস সার্ভিস’ পরিবহনের কিছু বাসের রঙ বদলে এখন ‘সম্রাট ট্রান্সলাইন (প্রা.) লি.’ নামকরণ করা হচ্ছে।

বুধবার (২০ মার্চ) গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গাজীপুরা এলাকায় সু-প্রভাত পরিবহনের বাসের রঙ বদলে রাতারাতি সম্রাট পরিবহন নামে পরিবর্তিত হতে দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা বসুন্ধরা গেট এলাকায় গত মঙ্গলবার সু-প্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় প্রাণ হারান বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী। একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মারা যাওয়ার পর রাতারাতি বদলে যাচ্ছে সু-প্রভাত বাসের চেহারা। এ কোম্পানির বিভিন্ন বাস রঙ বদলে সম্রাট পরিবহনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এছাড়া গাড়ির মালিকরা তাদের সুবিধা মতো কোম্পানিতে নিজেদের বাস অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যস্ত।

একাধিক শ্রমিক, বাসচালক ও সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সু-প্রভাত স্পেশাল বাস সার্ভিসটির রুট পারমিট রাজধানীর সদরঘাট থেকে রামপুরা হয়ে উত্তরা পর্যন্ত। এক প্রভাবশালী পরিবহন নেতার প্রভাবের কারণে চলছে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর গাজীপুরা পর্যন্ত। ৭০টি বাস চলার অনুমোদন থাকলেও চলছে প্রায় সাড়ে তিনশ বাস।

সু-প্রভাতের টঙ্গী স্টেশন রোডের সুপারভাইজার কামরুল ইসলাম জানান, সু-প্রভাত পরিবহনের বাসের রঙ বদলে অন্য পরিবহনের নামে চলার বিষয়টি তার জানা নেই। বিষয়টি মালিক কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সু-প্রভাত পরিবহনের কোনো বাস অন্য কোম্পানির নামে পরিবর্তিত হচ্ছে- এমনটা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

তিনি জানান, সু-প্রভাত পরিবহনের কোনো বাস গাজীপুরে প্রবেশ করতে পারবে না। কোনো কোম্পানি তাদের বাস অন্য কোম্পানিতে পদ্ধতিগতভাবে স্থানান্তর করতেই পারে। তবে বাসটি যে কোম্পানিতে যাচ্ছে সে কোম্পানিটির বৈধ অনুমোদন আছে কি-না সেটা দেখতে হবে।

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সু-প্রভাত বাসের ধাক্কায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর নিহতের ঘটনায় ওই বাসের নিবন্ধন বাতিল করেছে বিআরটিএ।

শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ এ সিদ্ধান্ত জানায়।

বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, দুর্ঘটনাজনিত কারণে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ৪৩ ধারা মোতাবেক ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫ নং বাসের রেজিস্ট্রেশন সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে।

বিআরটিএর এই সিদ্ধান্তের ফলে সু-প্রভাত পরিবহনের বাসটি আর সড়কে চলতে পারবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর জন্য ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫ নং বাসটির বেপরোয়া গতিকেই দায়ী করেছে বিআরটিএ।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র আবরারের মৃত্যুর পর সকালে প্রগতি সরণিতে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়া সু-প্রভাত বাসের সেই চালক সিরাজুল ইসলামের (২৪) বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গুলশান থানার ওসি (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম বুধবার বেলা পৌনে ৩টার পর তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে হাজির করে। এ সময় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।

আদালত শুনানি শেষে চালকের বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গুলশান থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

এদিকে বাসচাপায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর পরিবারকে জরুরি খরচ বাবদ ১০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।

সুপ্রভাত পরিবহনকে কর্তৃপক্ষকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করতে বলেছেন আদালত।

সড়কে সাধারণের নিরাপত্তা দিতে কর্তৃপক্ষের অব্যাহত ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নিহত আবরারের পরিবারকে কেন পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক শেষে ২৮ মার্চ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!