• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রহস্যময় ব্যক্তি আজিজ মোহাম্মদ ভাই


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২৭, ২০১৯, ০৯:২৮ পিএম
রহস্যময় ব্যক্তি আজিজ মোহাম্মদ ভাই

ঢাকা : চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত আজিজ মোহাম্মদ ভাই’র বাসায় অভিযান চালিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকালে গুলশানের বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গুলশান-২ এর ৫৭ নম্বর সড়কের ১১/এ বাড়িতে এ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজিজ মোহাম্মদ ভাই বাংলাদেশে রহস্যময় ও গডফাদার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।  মাদক ব্যবসায়, বিনোদন জগতের কিছু হত্যাকাণ্ড তাকে ব্যাপক পরিচিত করে তোলে।  এসব হত্যাকাণ্ডের কোনো অভিযোগের প্রমাণ না পারায় রহস্যময় চরিত্র হয়েই থাকেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

তাঁর নামের সাথে ভাই থাকায় অনেকেই মনে করেন গডফাদার বলেই হয়ত তাকে ভাই সম্বোধন করা হয়। কিন্তু আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নামে ‘ভাই’ শব্দটি তাদের বংশপদবি।  এমনকি তার বাবা মায়ের নামের সঙ্গে আছে এ পদবি।  তার বাবার নাম মোহাম্মদ ভাই।  মায়ের নাম খাদিজা মোহাম্মদ ভাই।  মূলত তারা পারস্যের বাহাইয়ান সম্প্রদায়ের লোক।  বাহাইয়ানকে সংক্ষেপে বাহাই বলা হয়।  উপমহাদেশের উচ্চারণে এই বাহাই পরবর্তীতে ভাই হয়ে যায়।  

আজিজ মোহাম্মদ ভাই

পারস্য বংশোদ্ভুত আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের পরিবার ১৯৪৭ এ ভারত ভাগের পর তাদের পরিবারসহ গুজরাট থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে আসে।  এরপর ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় ঢাকার আরমানিটোলায়।

পারিবারিক সূত্রে সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও ব্যবসায় শুরু করেন।  অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্মের মতন প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তাঁর হোটেল ও রিসোর্ট ব্যাবসা।

৯০ এর দশকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন।  এসেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেললেন এ জগতে।  পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিকরা সমীহ করে চলতেন ৫০টির মত চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে।  দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্লামার আনতেও তার ভূমিকা ছিল।  নিজের প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ব্যাটারির ‘আলো আলো বেশি আলো’ বিজ্ঞাপনে মিতা নূরের ঝলমলে উপস্থিতি তখন বেশ নজর কেড়েছিল।

এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রেফতার হন।  প্রচলিত আছে- একজন নারী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই এরশাদ তাকে গ্রেফতার করিয়েছিলেন।  এরশাদ যে নারীকে পছন্দ করতেন, সে নারীকেই আজিজ পছন্দ করতেন।  এ ঘটনায় দ্রুতই প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প আছে।  একজন পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে।  কিন্তু সেটাকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করা হয়। 

সালমান শাহ  ও তার স্ত্রী ডানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই

তিনি ব্যাপক ভাবে আলোচনায় আসেন ১৯৯৬ সালে সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।  তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে সালমানকে হত্যা করার। কিন্তু এটাকেও আত্মহত্যা বলেই প্রচার করা হয়।  যদিও সালমান শাহ এর পরিবার ও তার ভক্তদের ধারণা এটা হত্যাকাণ্ড। পারিপার্শ্বিক আলামতেও এটাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই মনে হয়।  আবার আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর মত সালমানের স্ত্রী সামিরারও থাইল্যান্ড এ বসবাস সন্দেহকে বাড়িয়েই দেয়।

প্রচলিত আছে- সালমান শাহ নিহত হওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেয় আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সবার সামনে আজিজকে চড় মারে সালমান।  এটাকে মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই।  যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। সালমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আজিজকে। কিন্তু কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়।

এর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এই ব্যবসা নিজেদের কব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা।  বারবারই প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন আজিজ।

২০১২ সালে মাদক ব্যবসার অপরাধে আজিজের ভাতিজা, ইয়াবা সম্রাট বলে খ্যাত আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়েছে।

বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আনন্দ ফূর্তি করে সময় কাটাতে পছন্দ করা এই ব্যক্তিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পার্টিতে, ক্লাবে নারীদের সাথে ফূর্তিরত অবস্থায় দেখা যায় বলে গুঞ্জরণ আছে। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। পরিবারে আছে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!