• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনে প্রবেশ করতে চায় ইউএনএইচসিআর


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৩, ২০১৯, ০১:১১ এএম
রাখাইনে প্রবেশ করতে চায় ইউএনএইচসিআর

ঢাকা : মিয়ারমারের রাখাইনে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল ইউএনএইচসিআর এবং তাদের পাশাপাশি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রত্যাশিত ও কার্যকর প্রবেশাধিকার জরুরি বলে মনে করছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ার পর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।

ইউএনএইচসিআর মনে করে, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন শরণার্থীদের আস্থা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট সবার অবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা একপাক্ষিক নয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ইউএনএইচসিআর এ প্রক্রিয়ায় দুই দেশের সরকারকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও রোহিঙ্গারা ফিরতে আগ্রহী না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরুর দ্বিতীয় চেষ্টাও ঝুলে গেল অনিশ্চয়তায়। রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী প্রথম দলকে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত চারটি শর্তের কথা বলছেন।

তাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সে জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হতাশা ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন। রোহিঙ্গাদের এ অনাগ্রহকে দুঃখজনক বলছেন তিনি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরা নিশ্চিত করতে হলে তাদের মধ্যে আস্থা তৈরির বিকল্প নেই।

রাখাইনের অধিবাসী হিসেবে ১০৩৭টি রোহিঙ্গা পরিবারের যে তালিকা মিয়ানমার পাঠিয়েছিল, সেটি ধরে প্রত্যাবাসনের জন্য কয়েক দিন ধরে তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা। ওই রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহীদের প্রথম দলকে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল।

তালিকার ওই ১০৩৭টি পরিবারের ৩৫৪০ শরণার্থী থাকেন টেকনাফের ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর ক্যাম্পে। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য শালবাগান এলাকার ক্যাম্পে রাখা ছিল তিনটি বাস, চারটি মাইক্রোবাস ও দুটি ট্রাক।

ফিরে যেতে আগ্রহী পরিবারগুলোকে প্রথমে নেয়ার কথা ছিল ঘুমধুম কিংবা টেকনাফের ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেখানে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। সার্বিক নিরপত্তার জন্য পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সতর্ক অবস্থায় ছিলেন।

কিন্তু বিকেল ৪টায় সাক্ষাৎকার শেষ হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের কেউ মিয়ানমারে ফেরার জন্য গাড়িতে ওঠেননি। এমনকি জোর করে পাঠিয়ে দেয়ার শঙ্কায় তাদের কেউ কেউ ক্যাম্পের ঘরে তালা দিয়ে দূরে সরে ছিলেন।

এই পরিস্থিতির মধ্যে দুপুরে টেকনাফের শালবাগান এলাকার ২৬ নম্বর ক্যাম্পে আসেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতায় থাকা চীন দূতাবাসের দুজন এবং মিয়ানমারের একজন প্রতিনিধি এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রত্যাবাসন কমিশনার কালাম বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো শুরু হয়নি। সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা বলেছে, তারা দেশে ফিরে যাবেন না।

প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকায় থাকা ১০৩৭টি পরিবারের মধ্যে ৩৩৯টির একজন করে প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তাদের সবাই বলেছেন, শর্ত পূরণ না হলে তারা মিয়ানমারে ফিরতে চান না।

এর আগে গত বছর ১৫ নভেম্বর একইভাবে প্রত্যাবাসন শুরুর সব প্রস্তুতি নিয়ে দিনভর অপেক্ষা করার পরও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা তৈরি না হওয়ায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়।

২০১৭ সালে রাখাইনে দমন-পীড়ন শুরুর পর থেকেই ওই এলাকায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মিয়ানমার। যদিও আন্তর্জাতিক চাপে গত বছর তা কিছুটা শিথিল করা হলেও এখনও সেখানে যাওয়া আসার সুযোগ উন্মুক্ত হয়নি। দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ার পর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর রাখাইনে প্রবেশাধিকার চেয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!