• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
মাতৃসদনের দেবদারু কাব্যগ্রন্থ থেকে

রাগীব হাসানের কবিতাগুচ্ছ


রাগীব হাসান জুলাই ৮, ২০১৮, ১১:৫২ এএম
রাগীব হাসানের কবিতাগুচ্ছ

প্রত্নলিপি

সেতুর পাশে দোকানের কাছে দাঁড়িয়ে দেখা হয়
ওই যে পরিত্যাক্ত লোকসেড, লতাগুল্ম নিয়ে পড়ে আছে,
ওখানেই একদিন লোহার প্রতিধ্বনি পাওয়া যেতো,
মৃতধ্বনি আজ কোন হাওয়ায় মিশে আছে ?

তোমরা গোলক হয়ে বসে থাকা থেকে উঠে গেলে,
সেতুর তলার ভোরের শান্তজল বাতাসে ফণা তুলছে,
কে দেখে কে দেখে ওই ঢেউ ?
ওখানে অনেক গভীর প্রত্নলিপি খুঁজে পাওয়া গেল
কখনও জীবন হয় কী ভোরবেলা, সমুদ্রের আকাশ ?
সূর্যহননে সব সুতা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ল
আমি গানের হৃৎপিণ্ডে পদ্মকোরক দৃশ্যমান হতে দেখলাম
ওগো স্বর্ণলেখা, ঔষধের গুড়োয় পড়ে থাকে যে
জীবন, তাকে তুমি উদ্ধার করো। নির্মম রঙিন
হলো কেন ? ক্ষুদ্রাকৃতির বইয়ে পড়া স্বপ্নব্যাখ্যা
ঘুম থেকে জেগে উঠে নিজের দেখা স্বপ্নের সঙ্গে
মিলিয়ে দেখো কী।
উড়ন্তবিমানের জানলা থেকে মধ্যাহ্নের রং কতটা বোঝা যায় ?
প্রচণ্ডভাবে শীত এসেছে নেমে, জাগরণে রাত্রি বাধা দেয়।
গ্যাসচালিত যান আলো চোখ নিয়ে গড়িয়ে পড়ে
পাহাড়ের ঝুকিপূর্ণ সড়ক থেকে হ্রদের গুল্মলতার ঝোপের মধ্যে ।
সড়কের পথে চলমান ধাতুমোড়ানো মহিষটির শিঙ কেঁপে ওঠে...

ডোমের ছুরিতে

মাতৃভাষা কোন জগতে বীজপত্র হয়ে ছড়িয়ে ছিলে ?
তার অবসন্ন বিকেলবেলা একখণ্ড চিন্তাব্রহ্মাণ্ড
চতুষকোণে শিহরন তোলে কে স্বাধীন ? ঘাসবিস্তারে
অমর্ত্য সোনার রেখাজ্জসরোবরের ঢেউ
পবিত্র মাতৃক্রোড়ে বসে মেঘের সংগীত, আর রাত্রিচ‚ড়ায়
গর্জন হাওয়া এবং সমুদ্রের ঢেউকে উন্মাদ করে তোলে,
দ্রাক্ষালতাজ্জ
কুয়াশা আবরণ বিদীর্ণ করে
আমার লিখিত রচনা ছুটে যায় একটু চুম্বনের আকাক্সক্ষায়
হায় স্বৈরিণী বৃষ্টি শুধুই প্রবাসে ছুটেছে।
আঙুর ফল দৃষ্টি বিভ্রমে আসতে চেয়েছিল রক্তমেঘের নীচে  
দূরভাষে সংকেত পাঠাবো, জেনে, কবুতরের ঠোটের শীত
রাস্তার মোড়ে বেদীতে ভাস্করের শরীরে নেমে এসেছে
ঘুমিয়ে রয়েছে ডোমের ছুরিতে
দস্তানার প্রয়োজন থেকে গেল, রাতের অপেরাজ্জ
শূন্য খিলান থেকে সহস্র পালক ধর্ম অবতল ছড়ালো, যা রাঙতায় মোড়া।

নীলফামারী

দৌড়ে ছুটে যাবো কোথায় ? ঘোড়ার উন্মত্ত কেশর থেকে
সবুজ উদ্যানের পথচারিরা শিখে নেয় ইতিহাসজ্ঞান
কমলার স্বচ্ছ সংস্কৃতি, প্রশ্ন করে ধর্ম বৃষ্টিবাদারে কার সঙ্গেজ্জ
দৌড়েজ্জমহাপৃথিবীর শ্বেত আলো ধরে নিয়ে আসে।
প্রতিভার উন্নতি হয়, গির্জার ঘাসে কয়েক টুকরোজ্জ
শাদা পাতার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে।
সেই ফলক বারবার পড়িজ্জশিক্ষাভবনের নীচে কার জন্যে অপেক্ষা,
স্ফ‚র্তমান শিকারী বনের পথে রক্তমুণ্ড, চর্মচক্ষুজ্জ
সব দেখেজ্জনীলফামারী জুড়ে বৃষ্টি অগণন, পবিত্র।

মাতৃসদনের নার্সদের শাদা

আমি তার মুদ্রিত লেখা, হাড়ের অন্ধকার পার হয়ে যাই।
বিভাসার গহ্বর ছিল হিমজ্জবীজগণিতের মলিন পাতা উড়ে যায়
গাইবান্ধার দিকে। নীলকুঠিরে সোনালি তরবারি ঝোলানো নেই।
সেই ধাতবসন্ধ্যা, বাজার ফিরিয়ে আনেজ্জস্টেশনের প্রহরী,
ওগো প্রহরী, তীর্থছায়া, সরোবর, সম্পূর্ণজ্জআমার জীবনী শুনে
কী করবে, গর্ভাঙ্ক সবুজজ্জ
তার স্নানদৃশ্য আমি পথে পথে ফেলে যাই, ব্রিজ মনে
করিয়ে দেয়জ্জদুপুর হারিয়ে গেছে, আপেলের শীত উৎকীর্ণ
দেখি নক্ষত্র শরীরেজ্জপ্রতিভার মুখশ্রীতে
অগ্নিমুঞ্জরীজ্জহন্তারকই জানে যে হাসির কত মূল্য, চিন্তাশক্তির
বিনিময়ে পেয়ে যাইজ্জফর্মজ্জমাতৃসদনের নার্সদের শাদা।

বীজগণিতের অঙ্ক

সোনালি দুপুরজ্জঝুমবৃষ্টি পড়ে, তোমার মুখে পড়ে ফলের
আঘাত, সেই ব্যথা সহ্য করে উঠে নতমুখ হও কী ?
পুকুরের পাড়ের আমগাছগুলো যে কোথায় গেল ? চৈত্রদিনের
সোনালি দুপুর, তুমি পড়ে থাকতে সর্বাঙ্গে লাল নিয়ে

আমাদের মনে সে সময় কীসের ক্ষত জমে ছিল ? প্রাচীন
পালকগুলো ঝরে গেল, রহস্য উপন্যাস আর ভালো লাগল না।
বীজের মাংস, সেই প্রতিবিম্ব লক্ষ্য ছেড়ে দেয়নি, পুকুরের সিঁড়ি
নেমে গেছে যে অবতলে, সেখানে সে দাঁড়িয়ে থাকবে স্থির

বীজগণিতের অঙ্ক ছায়া মেলে রাঙা আখ্যানের মুখে পড়ে,
বৃষ্টিরেণু, আমি গত জীবনের কথা বার বার মনে করি
দেখি যে, আমাদের স্টেশনের কাঠের ওভারব্রিজে উঠেজ্জ
ধানখেতের দিকে তাকিয়ে আছি, রেলকোয়াটারের গাছের
মাথা থেকে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে কোথায় যেন
ভেজা ধানখেতের বিদ্যুৎপ্রভায় গিয়ে বসছে তারা।

মেঘের কুণ্ডলি

উড্ডীন গানগুলো ভেসে ভেসে চলে আসে ধানক্ষেতের কেন্দ্রবিন্দুতে, ময়ুর
তখন পেখম মেলে দেয়জ্জধূসর পেখম মেলে দেয়, কৃষিক্ষেত্রের দিকে কালো মেঘের
কুণ্ডলি চক্র করেও যায়। বীজখেতের জন্য চাই ঝরে পড়া বৃষ্টি, নীল নীল বৃষ্টি জ্জ
আবহমানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে এ ক্ষেত্রময়ে যন্ত্রচালিত ডিজেলচালিত মেশিন।
বিশুষ্কদিন এলে সঙ্গীতের মূর্ছনা জ্বলে ওঠে তারায় তারায়, আকাশের নীচ দিয়ে
হাওয়ার সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের চেতনাগীত ভেসে ভেসে চলে আসে, আমরা
চেয়েছিলাম তাদের যামিনী জেগে থেকে তাদের আকাক্সক্ষা পূর্ণ করবে।
নীল নীল বৃষ্টি ঠোটে চুম দাও
ধানখেতের নাভিতে চুম দাও
বীজের কোষে কোষে তোমার
আঁখিপদ্ম রেখে দাও, হৃদি বেজে
উঠবে, বিজন হাওয়া এলোমেলো হয়ে রয়েছে।  

কিছুনারী নৃত্যরত

বনজঙ্গলের পথ বনজঙ্গলের ভেজা পথ বনজঙ্গলের হিমপথ
টিয়া পাখির হলুদ ঠোট, হরিণদের দৌড়, বনকুকুরের হর্ষ-বেদনা
প্রাচীন যুগের হাওয়া আবার ফিরে আসে চন্দ্রযান রাতে, চন্দ্রপরিবৃত্ত
মৃত্তিকার ঘাসে, সাপেরা নির্বীজ হয়ে আছে ?  কিছুনারী নৃত্যরত
বনবিভাগের অতিথিশালায়, তাদের কার্মাত চোখ, উপস্থিতিদের
হৃদয় মাতাল, আজকের হাওয়ার শরীরে কে মিশিয়ে দিয়েছে কালো
জামের রংয়ের মদ ? অবিমিশ্র জ্ঞান বলে ওঠে, নিমগাছ ভ‚ত-ভবিষ্যের
বাণীদাতা।

সাজোয়াযান

লতাগুল্মজাল, প্রসদ্ধি আর সর্পিল আলো আপেলকে জড়িয়ে রয়েছে
আমার কী প্রসাধন ছিল ? যুদ্ধের তাঁবু আরও বিষাদে ভাসতে চাইছে ?
গম্ভীর আকৃতি রক্তফলের হিরণ্য ছুঁয়ে যায়।
চক্রবাক, একটা রৌদ্রকণা এনে দিতে পারবে,
বিদ্যায়তনের মাঠ সেই প্রথম রাত থেকে শীতে জ্বলছে
মনোবীজের দেহ এত মনোলোভা উৎসারণে শুধুই
জানা হয়, রৌদ্রআলোছায়াময় দিনে রুগ্ন প্রাচীন দালান
পায়রা ছেড়ে দেওয়ার সময় ডেকে ছিল,
কারুকৃতির দ্রাক্ষা পড়ে ছিল তার সারাদেহে, অগ্নিমুকুলজ্জ
যৌথবাহিনি মরুভ‚মিতে ধূলা উড়িয়ে চলে যেতে যেতে প্রতীক গড়ে  
জ্জসাজোয়াযান ঋতুপথে নিস্তব্দ হয়ে পড়ে আছে

প্রসবিনী

বিস্ময়ঘেরা সুপরিবাগান চিরদিন দিঘীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে, তমসা এসে
চুল ছড়িয়ে দেয়, হাওয়ায় মাতাল হয়ে ওঠে ঘনসুপরিগাছের চ‚ড়া।
দিঘীর ঢেউয়ের সঙ্গে তমসা কী কথা বলছে ? তমসার স্তন যুগলের সঙ্গে ঢেউয়ের
স্পর্শ লাগলে যৌনক্রিড়া হলে তাদের শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। ঘেমে যায়,
লবণ ঝরে শরীর থেকে।  
দিঘীর অন্যপাড়ে মেহগনি বাগান নিস্তব্দ দাঁড়িয়ে আছে, চিরকাল দাঁড়িয়ে থাকবে!
ঘননীল জোছনা ওষ্ঠ রাখে মেহগনি বাগানের যৌনিমূলে, শিৎকার করে ওঠে
মেহগনি বাগান ? নরম জোছনার জিহ্বা মেহগনির নরম লাল যৌনিতে লাগাতে
তরল জেগে ওঠে, শঙ্খচ‚ড় কেবল পাশ থেকে দিঘী আর ধানখেত অনুভব করে যায়।
ধানখেতের মধ্যদিয়ে যে বিদ্যুৎলতারা চলে গেছে, তার ওপর বসে
দুটি সখাসখি পাখি গল্পে মেতে রয়েছে, তমসা ঝরে পড়ে, পক্ষিণীই আগে
বুঝতে পারে সে প্রসবিনী
বিদ্যুৎরেখা থেকে উড়ে যায়  মেহগনির বাগানের নীড়ে, উষ্ণতায়, পক্ষিণী যে
ঋতুমতী ছিল, ঋতুশ্রাব এসেছে, রক্তক্ষরণে ব্যথা উঠে ছিল ভুলে গেছে।

নিরঞ্জনকে

ছিন্নপত্রে উঠে আসে শঙ্খচ‚ড়, একটা মরাল উড়ে যায় দক্ষিণে, অনন্ত শীত
ছিদ্র করে জেগে ওঠে তামাটে জ্ঞান, প্রজ্ঞাপিত হয়ে ওঠে যুগসন্ধি, সেই লিপিকা
লৌহমরিচার ভয়ে বরফে রাখে পা, জলাশয় এবার পূবের হাওয়া দাও
কয়েকটা শুভ্র আগুন, সৈনিকের পোশাক, মসুলের দুর্গপতন, ক‚ট অভ্যাসে জেনে
নেয়া যায়।
ছিন্নপত্রে উঠে আসে শঙ্খচ‚ড়, বজ্র ভেঙে পড়ে বার বার, ঝুড়ির মধ্যের
ওসব রক্তাক্ত তুলো ব্যবহার করা হয়েছে। সিনেমা হলের অন্ধকার কার নির্দেশে
গাছে গাছে জেগে আছে, গির্জার ফাকা মাঠ শূন্য রয়েছে,
লরির চালক জানে কোথায় কোথায় রয়েছে মদ, আর নিরঞ্জনকে পাওয়া যায়।

মেশিনের ওপর

কোথাও একটা গান ভেসে ওঠে, তার অপরূপ আমি ঠিক
বুঝতে পারি না, তার কলিগুলো টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে
পড়ে মেশিনের ওপর, চিনিকলের মাথায়, ভেজা পথের শেষে।

ভেসে ওঠা গানের ভেতর কাফকার চিঠির কয়েকটি বিষণ্ন আলো
দেখা যায়, রুগণ একজন মানুষের অভিজ্ঞান চিহ্নিত হয়ে আছে,
আকাশ ঝেপে বৃষ্টির নাচকে নেমে যেতে দেখা গেল
জ্জবৃষ্টি কী হন্তারকের মতন নাচল ?

সেই সব দুঃখদিনে, সেই সব আনন্দদিনেজ্জসংগীত আচ্ছন্ন করে।

কতগুলো চাকা

ফিরে দেখো ইতিহাসের ভেতরে কতগুলো চাকা
চলে গেল, স্বাস্থ্য ভেঙে চুরমার হল, জ্ঞান বিপর্যস্ত
হয়ে পড়ে থাকল বারান্দায়, টবের
বিশুষ্ক পাতা তাকে উদ্ধার করতে পারেনিজ্জএই কিন্তু
ইতিহাসের ঘটনা, তারপরও তা অত্যুজ্জ্বল বা অত্যুজ্জ্ব নয়।

ধাতব শিরস্ত্রাণ

আরও চক্র করো আরও বর্ম নিয়ে এসো, এ ঘন মর্মর, এ ঘননীল প্রাচীন
বাঁচিয়ে রাখো, হাওয়া আসছে দক্ষিণ দিক থেকে হাওয়া আসছে
পশ্চিম-উত্তর-পূর্ব দিক থেকে হাওয়া আসছে আরও রণসাজে জেগে ওঠো,
বৃষ্টিতে ভিজতে...
থাকো ওই ধাতব গোলক ঘিরে, ধাতব শিরস্ত্রাণ মাটিতে যেন না লুটায়
সব অনিশ্চিত থেকে ফিরে আসা পাখির নিঝুম পালক থেকে বিষণ্ন
ঢেউয়ের ফণার তীক্ষণ্ন কামড় থেকে বন্ধুহীন বিদ্যুতের ঘুম থেকে
প্রজ্ঞাময় দগ্ধ হতে শিখে নিয়েছে, লুদ্ধ বনকুকুর শিকারিকে তাড়া করে,
দুর্জ্ঞেয় প্রাচীর থেকে দুর্গ থেকে যে অভিজ্ঞান শুশ্রষা চায়, আলো চায়,
জিজ্ঞাসার হৃদয়ঘিরে লাবণী এনে দাও, সারৎসার জানুক, টিনের বাক্সে
বজ্রবিদ্যুৎ ধরে রাখা হয়েছে, ঘননীল প্রাচীনেজ্জ
নিঝুম দুপুরে মুখ তারা বের করে রেখেছে, আশ্বিন ছলছল চোখে
আজ জেগে ওঠো কার জন্যে ?

অগ্নিমঞ্জরী

ছুঁয়ে যাও সেই আগুন, ফিরে এসেছ, থাকো, মেহগনির বাগান থেকে
ঘুরে এসো, কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো, কত বিশাল মেহগনি
বাগান, তার কচি পাতাগুলি হাওয়ায় অলৌকিক শব্দ তুলেছে।

অগ্নিমঞ্জরী ছুঁয়ে যাবে বলে বেরিয়ে ছিলে ঘর থেকে, নিরুদ্দেশকাল
ছিল বুঝি শুধুই রক্তকণিকায়, অগ্নুৎপাতের আভা এসে শরীরে বিধেছে
মাতৃরেখাই টেনে আনল শেষে, এখন ওই কাঠের ক্যাশবাক্স নিয়ে
বসে আছো...

শীর্ষচ‚ড়ায় উঠে দেখলে ঝনঝন করে বিদ্যুৎলতা গলে পড়ছে
বরফ কারখানা নিস্তব্দ হয়ে এলো, রাস্তার ধারে লোহা দিয়ে প্রকাণ্ড সব
ধাতব তোরঙ্গ নির্মাণ হচ্ছে, ধুলো উড়ছে, মানুষজন যাচ্ছে, এই বস্তুনীলয়ে
রাখা হবে, সলমা জরির কাজ করা বিবাহের পোশাক, উপহার সামগ্রী,
কিছুটা ফাঁকা থাকবে... তা ভরে উঠবে বাজার থেকে কিনে আনা
নতুন জামা কাপড়ে...

সমুদ্র জলে

ঘর আজ সমুদ্র হয়ে উঠল, শ্বেতমর্মর মেঝে সমুদ্র
জলে ভেসে গেল, আমি সেই সমুদ্র জলে পা ঢুবিয়ে লিখতে
বসেছি, জানলা দিয়ে দেখছি যে আকাশে উড়ন্ত বরফকফিন  
ঐ কী রাক্ষসের মুখ, প্রকাণ্ড নিমগাছের
পাতার আড়ালে যেবার আমি সূর্যহীনতায় কালো কালো ভাসমান মেঘের
দৈত্য ও দানবীর মুখ দেখেছিলাম
রক্তচক্ষু এরিয়েজ্জআমার শ্বেতপ্রভা পুড়ে গেল অনিশ্চিত হিমে।
ঘর আজ ভেসে গেল সমুদ্র জলে, সমুদ্র লবণজল বেলচা দিয়ে
এই সমুদ্র লবণজল সেচে আবার সমুদ্রগর্ভে ফেলে দিলাম, সমুদ্র
ঘূর্ণাবর্ত হয়ে জেগে উঠেছে, দুলছে গাছপালা, শ্বেতমর্মর বাড়ি, উঠোন,
গ্যারেজে রাখা ব্যক্তিগত শকট ও আমার চেয়ারটিও কম্পনে হেলে পড়ছে।
কম্পনে আরও হেলে পড়ল শয্যায় মিথুনরত দম্পত্তি, তাদের জন্যে
বিপত্তি হলোজ্জএই ঘুর্ণাবর্ত, সূর্যহীন রাত্রি, আকাশদণ্ড, আকাশের রোমহর্ষক রাক্ষসমুখ।

মেঝেতে পড়ে থাকা মনীষী জাঁ পল সাত্র্রে আত্মজীবনী উঠিয়ে নিয়ে
এবার চল জঙ্গলের পথে, বনকুকুর হল্লা করছে কেন, জিজ্ঞাসা করা যাক।
এখন ঘুর্র্ণাবর্ত নেই, উপক‚ল ভীষণ শান্ত, উপজাতীয়দের ঘরগুলো বিধ্বস্ত,
হতাহতের সংখ্যাটি কেমন বিদ্যুৎবিহীন রাতে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি,
সমুদ্রঢেউয়ে কতগুলো জাহাজ আঘাত পেল, কতটা হেলে গেছে তাও জানা হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!