• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজউক নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ০৪:১৪ পিএম
রাজউক নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

ঢাকা: গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলছেন, ‘ভুল তথ্যের ভিত্তিতে রাজউককে হেয় করে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছে টিআইবি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন তিনি।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এর আগে ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজউকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাড়পত্র-নকশা অনুমোদনে দালালের মাধ্যমে চুক্তি হয়ে থাকে। রাজউকের কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে চুক্তি করে সুনির্দিষ্ট হারে নিয়মবহির্ভূত অর্থ নেয়া হয়। এ ছাড়া সেবাগ্রহীতা ইমারত নকশা অনুমোদনে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।

গণপূর্তমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সংবাদপত্রে টিআইবির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যে সংবাদ এসেছে সেখান থেকে আমি অবহিত হয়েছি- রাজউকে সেবা নিতে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ লাগে। এই বক্তব্যটি কোনোভাবে সত্য নয়, এর কোনো ভিত্তি নেই। এটা সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনবান্ধব একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হয়তো কারও দেয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতে হেয়প্রতিপন্ন করে আলাদা একটা বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছে তারা।’

তিনি বলেন, ‘তাদের এই অভিযোগের কী ভিত্তি, সেই ভিত্তি কোথায়? তারা সুস্পষ্টভাবে বলেননি একটি অভিযোগে তারা বলেছেন বিশেষ প্রকল্পের ক্ষেত্রে রিয়েল স্টেট ডেভেলপারকে ১৫ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এ জাতীয় কোনো প্রকল্পের অনুমোদনই হয়নি।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি এক বছরের বেশি সময় আগে মন্ত্রী হয়েছি। বিশেষ প্রকল্পে ১৫ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয় এই তথ্য তারা কোথায় পেলেন? এই জাতীয় কোনো প্রকল্পই তো পাস করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘তারা (টিআইবি) বলেছেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। আমি মন্ত্রী হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো নিয়োগই হয়নি। নিয়োগ না হলে রাজনৈতিক প্রভাবের অবকাশ আসল কোথা থেকে? নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে, আমরা এখন পর্যন্ত এডমিট কার্ডও ইস্যু করিনি। এর ভেতরে তারা বললেন, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, এটাতে তারা দুর্নীতির একটি অভিযোগ হিসেবে উত্থাপন করেছেন।’

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চাবি প্রদানের ক্ষেত্রে টাকা দিতে হয় বলেছেন- একবারই মাত্র উত্তরা থার্ড ফেজে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজউকে সংবাদ মাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে লটারি করে চাবি দেয়া হয়েছে। কেউ যদি অ্যাবসেন্ট থেকে থাকেন তারা পরবর্তী সময়ে চাবি নিয়েছেন। তাই টাকা নিয়ে দেয়ার কথাটি যথার্থ নয়।’

টিআইবি ভূমির ছাড়পত্র, আমমোক্তার নামা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে টাকা দেয়ার কথা বলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রাজউকে আইন করে দেয়া হয়েছে যে সেবা নিতে গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছি। এখন ঘরে বসেও একটি প্ল্যান স্ক্যান করে ল্যাপটপের মাধ্যমে নির্ধারিত অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদন করা যায়। সরকারি যে ফি দিতে হয় তা জমা দিয়ে রিসিট ও নম্বর দিলে সেই সেবাটা গ্রহণ করা যায়। ফলে এক্ষেত্রে আলাদা ঘুষ দেয়ার অভিযোগ আসার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘তারা দালালের কথা বলেছেন- একটা সময় রাজউক দালাল পরিবেষ্টিত থাকার অভিযোগ ছিল। বেশ কিছু দালালকে গ্রেফতার ও ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে, এরমধ্যে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রয়েছেন। যারা রাজউকের পরিত্যক্ত কক্ষের মধ্যে আলাদা অফিস করে সেখানে কমিশনারের প্যাড-সিল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করতেন। দৃশ্যমানভাবে বলা যেতে পারে রাজউকে এখন দালালের উপস্থিতি নেই।’

তিনি বলেন, ‘এরপরও যদি সুনির্দিষ্টভাবে তারা অভিযোগদাতার কথা আমাদের বলতেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি- রাজউকে নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন। উনি স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করব টিআইবি এ জাতীয় কোনো অভিযোগ আনার আগে আমাদেরকেও জানাবে, কী অভিযোগ পেয়েছেন, কাদের কাছ থেকে। টিআইবি কখনও রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো অভিযোগের বিষয়ে জানায়নি। যদি জানাতো তবে নিশ্চয়ই তাদেরকে আমরা সাহায্য করতে পারতাম।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। আমরা সেটাকে শক্ত ও কঠোরভাবে ধারণ করেছি। অনিয়ম যে সব দূর হয়ে গেছে, এ কথা বলা যাবে না। তবে যে সব দুর্নীতির অভিযোগ ছিল এর অধিকাংশই আমরা বিনাশ করেছি। আগামীতেও করতে চাই।’

আনুষ্ঠানিকভাবে টিআইবির কাছে কোনো প্রতিবাদ জানানো হবে কিনা- জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, ‘টিআইবি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নয় যে তাদেরকে আনুষ্ঠারিকভাবে...তারাই তো আমাকে কোনো অভিযোগ জানায়নি। তারা অনুমানভিত্তিক করেছে, আমরা গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। সেজন্য গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জানালাম তাদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই, অসত্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’

মানহানীর মামলা বা অভিযোগ করবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘বিষয়টি আজকেই জেনেছি। আমরা বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

দুর্নীতি বন্ধে এর আগে দুদকের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে- জানতে চাইলে পূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘দুদক আমাদের কিছু গাইডলাইন দিয়েছিল, এর প্রেক্ষিতে আমরা ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছি। সেই নির্দেশনার আলোকে চলমান কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এসেছে।’

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!