ঢাকা: একটা রুমে ১৮টি বাংক বেড, দেয়াল রাঙানো বাসন্তী রঙে। বেডগুলোর সঙ্গে আছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার কেবিনেট। আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। ঘরটা নারীদের জন্য। দুইরাত এই ঘরে থাকতে হলে একজন নারীকে গুনতে হবে সর্বনিম্ন ৭১ টাকা।
নারীদের আবাসন সমস্যা খানিকটা দূর করতে এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে রাজধানীর পল্লবীতে এভাবেই তৈরি হচ্ছে ‘বাসন্তী নিবাস’। আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এটি চালু হবে বলে জানিয়েছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
উদ্যোক্তারা জানান, ঢাকা শহরে কিংবা অন্য যে কোনও শহর এলাকায় একজন নারী শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে কিংবা চাকরির সন্ধানে বা কাজে এলে তাকে আবাসন সমস্যায় পড়তে হয়। শহরে পরিচিত বা আত্মীয়-স্বজন থাকলে খুব একটা সমস্যা হয় না বটে তবে সবার এমন সুবিধা থাকে না। যার পরিচিত কেউ নেই বা যিনি স্বেচ্ছায় আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় উঠতে চান না তেমন নারীদের অনেক শঙ্কা মাথায় নিয়ে উঠতে হয় আবাসিক হোটেলে। আর বসবাসের সময়টা একটু বেশি হলে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনেকেই আবাসিক হোটেলে না গিয়ে হোস্টেল বেছে নেন। সেখানেও গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। কারণ হোস্টেলের ভাড়া মাসিক চুক্তিতে দিতে হয়। নারীদের আবাসনের এমন সংকট দূর করতে এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ‘বাসন্তী নিবাস’ তৈরি করছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের তৃতীয়তলায় তৈরি করা হচ্ছে ‘বাসন্তী নিবাস’। বাসন্তী নিবাসের প্রবেশ মুখে রাখা হচ্ছে অভ্যর্থনার ব্যবস্থা। এরপর ভেতরের রুমের সঙ্গে একটি আলাদা পার্টিশন এবং দরজা।
দরজায় থাকবে চারকোনা একটি স্বচ্ছ কাচ। রুমের ভেতরে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে কালো রংয়ের বাংক বেড। প্রতি সারিতে ৪-৫ টি করে বাংক বেড সাজানো হয়েছে। ১৮টি বেডে একসঙ্গে ৩৬ জন এখানে থাকতে পারবেন।
তৃতীয়তলার পুরো ফ্লোর জুড়েই করা হচ্ছে নারীদের জন্য এই আবাসিক হোটেল। রুমের শেষ প্রান্তে আছে কমন বাথরুম। সেখানে অত্যাধুনিক ডিজাইনের বেসিন ও টাইলস বসানো হয়েছে। এখানে আছে হাইকমোডযুক্ত দুটি টয়লেট এবং দুটি গোসলখানা।
কাপড় ধোয়ার জন্য থাকবে ওয়াশিং মেশিনের ব্যবস্থা। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা এসব তথ্যের পাশাপাশি জানান, নারীদের জন্য এখানে আরও থাকবে সেনিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন। থাকবে আলাদা ডাইনিং রুম এবং ওয়াইফাই সুবিধা। ডাইনিংরুমে একসঙ্গে ৭ জন খাবার খেতে পারবেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কর্মীরা জানান, শিক্ষার্থী-চাকুরিপ্রার্থী-কিংবা সাধারণ নারীরা সীমিত সময়ের জন্য থাকার সুযোগ পাবেন এখানে। অভিভাবকরা যাতে তার সন্তানকে একা পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন সেটি বিবেচনা করে তৈরি করা হচ্ছে ‘বাসন্তী নিবাস’। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি রাত যাপনের খরচ ধরা হয়েছে ৭১ টাকা আর চাকরিপ্রার্থীদের জন্য ২৯৯ টাকা। এর বাইরে সাধারণ নারীরা থাকতে পারবেন। তবে তাদের খরচ করতে হবে ৮৮০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, এই ভাড়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত থাকবে শুধু নাশতা। নাশতা হিসেবে বিস্কুট, একটি কলা এবং এক কাপ কফি পাওয়া যাবে। বাদ বাকি খাবার বিদ্যানন্দ থেকে কেনা যাবে অথবা বাইরে থেকে এনেও খাওয়া যাবে। বিদ্যানন্দ প্রতিদিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করে। সেই একই খাবার সেখানকার স্বেচ্ছাসেবীরা খেয়ে থাকেন। হোটেলে যারা থাকবেন তারা চাইলে এই খাবার খেতে পারবেন, তবে এর জন্য নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
বাসন্তী নিবাসে থাকতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে কিংবা একজন চাকরিপ্রার্থী নারীকে তার প্রমাণস্বরূপ কাগজপত্র দেখাতে হবে। নিরাপত্তার জন্য এখানে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে এবং হোটেলের নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে সব কর্মচারী থাকবেন নারী।
সোনালীনিউজ/এইচএন
আপনার মতামত লিখুন :