• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ খালেদা জিয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১১, ২০২০, ১২:২৫ পিএম
রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ খালেদা জিয়া

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন আর রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর পরিবারের সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করে মুক্ত করেছেন খালেদা জিয়াকে। তার এখন মূল লক্ষ্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া।

আর পরিবারের সদস্যদেরও একই চাওয়া। আপন বলতে দেশে এক বোন আর এক ভাই জীবিত আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। তারাই সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করে তাকে জামিনে বের করে এনেছেন। যা দীর্ঘদিন আইনী লড়াই করেও পারেননি তার বাঘাবাঘা আইনজীবীরা। যেকারণে পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছেন না সরকারের শর্ত ভঙ্গ করে খালেদা জিয়া আবার কারাগারে যাক। সেজন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারের নিয়মের মধ্যে থেকে বিদেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা হোক। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া নিজেও আপাতত রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাচ্ছেন না।  

গত ২৫ মার্চ মুক্তির পর সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য বিবৃতি দেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এমনকি দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে দেখাও করেননি। ঐক্যফ্রন্ট ও ২০দলীয় জোটের ২৬টি দলের মধ্যে শুধু নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না একবার সাক্ষাৎ পেয়েছেন। ২০দলীয় জোটের নেতারা সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করলেও কেউ পাননি। এতে বোঝা যাচ্ছে, তিনি রাজনীতির চেয়ে চিকিৎসাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পরের দিন ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান। ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেলেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখনও তারেক রহমানই আছেন। গত চার মাসে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেও সভাপতিত্ব করছেন তারেক রহমান। এ থেকেই বোঝা যায়, রাজনীতির প্রতি ততটা আগ্রহ নেই খালেদা জিয়ার। 

এমনকি ঈদের দিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়া দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন, কয়েকটি পত্রিকায় এমন সংবাদ প্রকাশ হলেও দলের পক্ষ থেকে তার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলীয় নেতাদের সাথে কুশল বিনিময় ছাড়া কোনো কথা হয়নি খালেদা জিয়ার।

খালেদা জিয়া চিকিৎসকরা বলছেন, ম্যাডাম অসুস্থ। একদিকে করোনা অন্য দিকে শারীরিক অসুস্থার কারণে আপাতত রাজনীর মাঠে দেখা যাবে না চেয়ারপারসনকে। চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যেতে হবে। সেজন্য শিগগিরই আবেদনও করা হতে পারে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ঈদের পরের দিন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর 
গণমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। বিদেশে তার হাঁটু রিপ্লেস করা হয়েছিল। সেখানে সারাক্ষণ ব্যথা থাকে। সেজন্য চিকিৎসা নিতে তার বিদেশে যেতে হবে।

পারিবারিক সূত্র বলছে, সরকারের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠাতে চাচ্ছেন তারাও। সেক্ষেত্রে সরকারও নমনীয়তা দেখিয়ে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এজন্য সরকারের উচ্চ মহলে দেন-দরবারও করছেন। প্রয়োজনে এনিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হতে পারেন।  

একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া নিজে যদি বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন তাহলে সেই আবেদন মনজুর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ৬ মাস শেষ হওয়ার আগেই যদি খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যান তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

দলটির একজন নীতি নির্ধারক বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনী প্রকৃয়ায় হয়নি। যা হয়েছে তা সরকারের ইচ্ছায়, সরকার মুক্তি দিয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে। তিনি দীর্ঘদিন দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হননি। বরং তার স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতি হয়েছে। এখন পরিবারের সদস্যরা চাইছেন তাকে বিদেশে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দিতে। রাজনীতির বাদ দিয়ে দেশের একজন বয়জ্যেষ্ঠ নাগরিক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার সুচিকিৎসা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। আমি আশাবাদি সরকার তার পরিবারকে সেই সুযোগ দিবেন।
 
সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!