• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
শীর্ষপর্যায়ের বৈঠক আজ

রাজনীতির নতুন মিশনে ড. কামাল


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১০, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম
রাজনীতির নতুন মিশনে ড. কামাল

ফাইল ছবি

ঢাকা : যুক্তফ্রন্ট ভেঙেছেন, জাতীয়  ঐক্যফ্রন্ট গড়েছেন, নির্বাচনে গিয়েছেন, ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। যে সংসদকে অবৈধ বলেছেন, তাতে যোগদানও করেছেন। এখন সরকার পতন আন্দোলনের কথা বলছেন, চাচ্ছেন মধ্যবর্তী নির্বাচন।

এমন চিত্রের নায়ক ড. কামাল হোসেন। দেশের সংবিধান প্রণেতা। রাজনীতিতে তিনি খেলছেন নিত্যনতুন খেলা।

গত বছরের শেষের দিকে আর নতুন বছরের মাঝপথে কৌশলের গতিপ্রকৃতি ধরতে পারছে তার জোটের অন্যতম শরিক ও জনজোগানদাতা বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা তার চালে ধরা খেয়েছেন নাকি ফল পেয়েছেন, সে হিসাবের চূড়ান্ত ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে। ড. কামালসহ তার মিত্ররা বলছেন বহুল প্রচলিত কথা প্রেম, যুদ্ধ আর রাজনীতি ন্যায়শাস্ত্র পড়ে জেতা যায় না। দরকার নানা ছলাকলার।

তবে নানামুখী সংশয় দেখা দিয়েছে ডান-বামপন্থিদের সমন্বয়ে গঠিত বিএনপির মধ্যে। দলটির নেতাদের প্রশ্ন সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য যে মঞ্চ ড. কামাল হোসেন তৈরি করতে চাচ্ছেন তাতে সরকারদলীয় জোটের শরিকরা কেন?

দলটির নেতাকর্মীরা এমনও ইঙ্গিত করেছেন সংসদের পর রাজপথ থেকে মাইনাস করতে আরেকটি চাল দিয়েছেন ড. কামাল। যে চালে আওয়ামী লীগের সঙ্গত্যাগী দীর্ঘ ২০ বছরের মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ইস্যু তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং ড. কামাল হোসেনও বিএনপিকে জামায়াত ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন।

বিএনপিপন্থি রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত, বিএনপি তাদের মিত্র জামায়াতকে ছাড়তে না পারলে ড. কামালের নেতৃত্বে বামপন্থিদের সমন্বয় ঘটবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। যেখানে মাইনাস হতে পারে বিএনপি। আর তাতে সংসদে সিঙ্গেল ডিজিটের মতো রাজপথ ছাড়া হওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে দলটি। এ বিবেচনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে।

ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সংসদে যোগদান ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে যে আলোচনা করেছে তাতে বিএনপির প্রতিনিধি থাকা প্রয়োজন ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সংসদের সাবেক এই স্পিকার বলেন, যে লক্ষ্যে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল তার বিশেষত্ব এখন নেই। আবার যে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে তার পেছনে কী আছে, তা তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আমরা ড. কামাল হোসেনকে পুনরুজ্জীবীত করেছি। তাকে সামনে রেখে পথচলা ঠিক হবে কি না, তা ভাবার সময় এসেছে।’

ফ্রন্টসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি, জাসদ-ইনুসহ বাম রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ড. কামাল হোসেন ও তার দেওয়া দায়িত্বপ্রাপ্তরা যোগাযোগ করেছেন। আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা সব দলকে এক মঞ্চে আসার।

এদিকে ঐক্যফ্র্রন্টকে সক্রিয় করতে আন্তরিক শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। এর অংশ হিসেবে শরিক বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে গত কয়েক দিনে অনানুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময়ও করেছেন তিনি। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব নিরসন করে সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে ফের রাজপথে নামার উদ্যোগ নিচ্ছেন জোটের এই শীর্ষ নেতা। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার প্রাথমিক কাজের অংশ হিসেবে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকটি হবে জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায়।

অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে এই জোট গঠন হয়। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে তারা। কিন্তু নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিভিন্ন ইস্যুতে জোটের শরিকদের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। নির্বাচনের দিন রাতেই ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। জোটের নির্বাচিত কোনো সদস্য শপথ গ্রহণ করবে না বলেও জানান তারা। কিন্তু জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম শপথ নেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর।

এরপর জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন এবং মুখপাত্র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘যারা শপথ নেবেন তারা জাতীয় বেঈমান।’ সুলতান মুনসুরকে জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটে মোকাব্বির খানের সময়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেন ড. কামাল। এরপর ২৫ এপিল শপথ গ্রহণ করেন বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে দলটি।

কিন্তু ২৯ এপ্রিল শপথ গ্রহণের শেষ দিন বিকালে চারজনকে শপথ নেওয়ার অনুমতি দেয় বিএনপি। চার সংসদ সদস্যকে শপথ গ্রহণের অনুমতি দেওয়ায় জোটের শরিকরা ক্ষুব্ধ হয় বিএনপির ওপর। ফলে জোটের গণজমায়েত কর্মসূচিও বাতিল করা হয়।

এ ছাড়া জোটের নানা অসংগতির সমাধান করা না হলে ৮ জুন জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী। এই আল্টিমেটামের সময় গত শনিবার পার হয়েছে। এরই মধ্যে ড. কামাল কথা বলেছেন কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে। এজন্য এখনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেননি কাদের সিদ্দিকী।

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া, নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া, বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে বাম দলের সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে নমনীয়তা প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কারণে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার জোর দাবি উঠেছে বিএনপিতে।

বিএনপির অনেকেই মনে করছে যে, বিএনপির যে পাঁচজন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেছেন সেখানে ড. কামাল হোসেনের হাত রয়েছে। এজন্যই ড. কামাল হোসেনের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য বিএনপির মধ্যে একটা জোরালো দাবি তৈরি হয়েছে।

ড. কামালের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টকে সচল করা, আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ এবং ঐক্যফ্রন্টের কলেবর বৃদ্ধি- এই তিনটি ইস্যুতে আজ ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের  বৈঠক ডেকেছেন। এই বৈঠকে যেন সব রাজনৈতিক দল আসে সেজন্য সবাইকে অনুরোধও জানানো হয়েছে। এজন্য আ স ম আবদুর রব বৈঠক করেছেন মির্জা ফখরুলের সঙ্গে। আর ড. কামাল হোসেন কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে বিএনপির মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যাবে কি যাবে না, এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

বিএনপির মধ্যে থেকেই অনেকে বলছেন যে, ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে তাহলে বিএনপিকে আরো মাশুল দিতে হবে এবং দল আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!