• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাস্তায় নারী দেখলেই শরীর রগরগ করে উঠা শুয়োরের ছানাগুলো...


আরিফ আজাদ জানুয়ারি ২, ২০২০, ০৫:৫২ পিএম
রাস্তায় নারী দেখলেই শরীর রগরগ করে উঠা শুয়োরের ছানাগুলো...

- 'তোমার নাম?'

- 'মোনালিসা'।

- 'বাহ! বেশ সুন্দর নাম'।

- 'থ্যাংক ইউ স্যার'।
 
- 'আচ্ছা মোনালিসা, তুমি কি জানো যে তুমি গর্জিয়াস রকমের সুন্দরী?'

- 'থ্যাংক ইউ স্যার'।

- 'আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই'।

-'অবশ্যই স্যার'।

- 'আমি অবশ্য তোমার কাছে H2O এর মানে কি জানতে চাইবো না। আমি জানতে চাই তোমার এই সৌন্দর্যের রহস্য কি?'

- (মুচকি হেসে চুপ করে থাকে মোনালিসা)।

- 'কি অদ্ভুত সুন্দর তোমার হাসি। তুমি কি জানো মোনালিসার হাসি কোটি টাকার চেয়েও দামি?'

- (লজ্জায় এতোটুকু হয়ে যায় মোনালিসা)।

- 'আমি অবশ্য তোমার হাসির কথা বলছিনা। আমি বলছি বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসা নামক চিত্রকর্মটির কথা। সেই অদ্ভুত মুচকি হাসিটা আজও হাজারো মানুষের কাছে রহস্যে ঘেরা। তুমি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে চেনো?'

- 'না স্যার'।

- 'ওহ। সো স্যাড। আচ্ছা মোনালিসা, এই যে হাজার হাজার দর্শক তোমাকে দেখছে, তোমার রূপের প্রশংসা করছে- এতে তোমার অনুভূতি কি? কেমন লাগছে তোমার?'

- 'খুব ভালো লাগছে, স্যার'।

- 'ফাইন। দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে বলা হলে তুমি কি বলবে?'

- 'আমি সবাইকে অসম্ভবরকম ধন্যবাদ আর ভালোবাসা জানাতে চাই। যারা এই অনুষ্ঠান দেখছেন, যারা মঞ্চ এবং মঞ্চের বাইরে, সবার জন্যে আমার বুকভরা ভালোবাসা। লাভ ইউ অল'- এতোটুকু বলে মোনালিসা দর্শকদের জন্য ফ্লাইং কিস বাতাসে ছেড়ে দিলো।

টিভিতে সম্প্রচারিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' নামক অনুষ্ঠানটা অধীর আগ্রহ নিয়ে দেখছে অদীতি। নিজের রূপের ব্যাপারে অদীতিও বেশ আত্মবিশ্বাসী। সেও স্বপ্ন দেখে এরকম একটি বড় প্ল্যাটফর্মে নিজেকে প্রমাণ করার। এজন্যে সে নিজেকে প্রস্তুত করছে। পুরো অনুষ্ঠানে জাজ হিশেবে থাকা ভদ্রলোকটি যেভাবে মোনালিসার প্রশংসা করলো, তা দেখে অদীতিও আপ্লুত। মোনালিসার জায়গায় সে যেন স্টেজে নিজেকেই দেখতে পাচ্ছে। জাজের আসনে থাকা সুদর্শন লোকগুলো তার প্রশংসায় গদগদ হচ্ছে। দর্শকরা তার রূপ, তার ফিগার দেখে তাকে প্রশংসাবাণে ভাসিয়ে দিচ্ছে। আহ! এই দৃশ্য ভাবতেই অদীতির গায়ে শিহরণ জাগা শুরু করে।

ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে অদীতি। সে স্বপ্নে দেখে- বিশাল এক স্টেইজে সে দাঁড়িয়ে আছে। মখমলের মতো নরম কাপড় তার শরীরে। চারদিকে হাজার হাজার দর্শক। তার দিকে তাক করে আছে শতো শতো ক্যামেরা। মূহুর্তের ক্লিকে অদীতির ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। তাকে দেখে সকলের সে কি প্রশংসা। শৌখিন পুরুষগুলো তাকে দেখে 'লাস্যময়ী', 'হেব্বি', 'মায়াবতী' নানান অভিধায় ভূষিত করছে।

পরেরদিন একটা সংবাদ ভাইরাল হলো। 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ' প্রতিযোগিতার 'মোনালিসা' নামের এক প্রতিযোগিকে রাস্তায় কিছু তরুণ উত্যক্ত করেছে। তাকে দেখে বিশ্রী কমেন্ট করেছে। বখাটেদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ মোনালিসা নিজের ফেইসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস লিখেছে এরকম, 'রাস্তায় নারী দেখলেই শরীর রগরগ করে উঠা শুয়োরের ছানাগুলো ঘরের ভিতর থাকলেই পারে। রাস্তায় বের হয় কেনো?'

মোনালিসা নামের সেই তরুণীর পোস্ট দেখে মাথা খারাপ হয়ে যায় অদিতীর। উত্যক্তকারীদের অদিতীও বখাটে, রাস্তার ছেলে, মেয়েদের শরীর দেখলেই লালসা বেরিয়ে পড়া কুকুরের বাচ্চা বলে আচ্ছামতো গালি দিয়ে কমেন্ট করে।

মোনালিসা আর অদীতি- দুজনেরই বড় বড় স্বপ্ন। দুজনেই চায়- বড় আসনে, বড় স্টেজে বসে থাকা পুরুষটা তাকে দেখে, তার রূপের প্রশংসা করুক। তার শরীরের প্রশংসা করুক। তারা চায় বড় আসনে উপস্থিত হওয়া দর্শককূল তাদের দেখে বলুক, 'ওয়াও! হাউ সুইট শী ইজ!', তারা চায়- তাদের দেখে বিচারকের আসনে থাকা ভদ্রলোক, যার এখনো টগবগে যৌবন, সেও বলুক- 'তুমি খুব লাস্যময়ী'। বড় স্টেজে পুরুষকূল যতোই তার রূপের, তার শরীরের প্রশংসা করে, ততোই সে খুশী হয়। সে আরো বেশি করে মেলে ধরতে চায় নিজেকে। সে নিজের ব্যাপারে এমন মন্তব্য আরো শুনতে চায়..আরো..আরো।

কিন্তু, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কোন পুরুষ যদি তাকে বলে, 'হাই সুইটি, কি কিউট তুমি', তখন মোনালিসা আর অদীতিদের মান ইজ্জত চলে যায়। তাদের নারীত্বে এ যেন বিশাল রকমের কলঙ্ক। তাদের গা গিনগিন করে এমন মন্তব্য শুনে। মনে হয়, এমন মন্তব্য শোনার চেয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া উত্তম।

রাস্তার সেই পুরুষটা তখন হয়ে যায় বখাটে, উত্যক্তকারী, শুয়োর আর কুকুরের বাচ্চা। কিন্তু, একই মন্তব্য যখন সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিচারকের আসনে থাকা সেই বিচারক, কিংবা দর্শকশ্রেণীর কোন দর্শক করে, তখন মোনালিসা আর অদীতিরা তাদের জন্য বুকভরা ভালোবাসা জানায়।

নারীবাদের নামে, নারী স্বাধীণতার নামে নারীদের পণ্য বানিয়ে ফেলার ফাঁক-ফোঁকর এগুলোই। এই নারীবাদ আপনাকে শেখাবে, 'সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে পারলেই তুমি সত্যিকার সাহসী নারী'।
আবার, সেই একই নারীবাদ বলে, 'রাস্তায় যে পুরুষ তোমাকে উত্যক্ত করে, সে হলো শুয়োরের বাচ্চা'।
কি এক চমৎকার ডাবল স্ট্যান্ডবাজি!

আমরা কোনটার পক্ষেই নই। না সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নারীদের ডিজিটাল পণ্য বানানোর পক্ষে, না আমরা রাস্তায় উত্যক্ত করা বখাটে লোকটার পক্ষে। আমরা নারীদের সত্যিকার মর্যাদার কথা বলি। নারী হলো মুক্তো। ঝিনুকের মধ্যেই সে সুরক্ষিত। নারী চাঁদ নয় যার জোছনার প্রশংসা সবাই করে, নারী হলো সূর্যের মতো, যার দিকে চোখ পড়লেই চোখ নামিয়ে ফেলতে হয়।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!