• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রিশান ফরাজী গ্রেফতার


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৮, ২০১৯, ১১:৫০ এএম
রিশান ফরাজী গ্রেফতার

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামি রিশান ফরাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।এছাড়া ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে ১২ আসামির মধ্যে  ৫, ৬, ৭ ও ১০ নম্বর আসামি।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টায় বরগুনা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি 

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামী রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী আপন এই দুই ভাই সরাসরি রিফাত শরীফ হত্যায় অংশ নিয়েছিল। সম্প্রতি রিফাতকে বরগুনা থেকে গ্রেফতার হয়েছে রিফাত ফরাজী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা ৭ দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী (২৩), ৪ নম্বর আসামি চন্দন (২১), ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান (১৯), ১১ নম্বর আসামি অলিউল্লাহ অলি (২২) ও ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় (২১) গ্রেফতার হয়েছে।

এছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকী মিন্নি জড়িত থাকায় তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

গত ২৭ জুন সকালে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার রিফাত শরীফের বাবা আবদুল আলিম দুলাল শরীফ বরগুনা সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

জানা যায়, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী আপন এই দুই ভাই সরাসরি রিফাত শরীফ হত্যায় অংশ নিয়েছিল। রিফাত ও রিশান বরগুনা শহরের ধানসিঁড়ি সড়কের দুলাল ফরাজীর ছেলে। রিফাত ফরাজী বরগুনা কলেজিয়েট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও ২০১৪ সালে বরগুনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে। এরপরই সে বরিশালের ইনফ্রা পলিটেকনিকে ভর্তি হয়। ভর্তির পর সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

পরপর সেমিস্টারে অকৃতকার্য হওয়ার পর সে বরগুনায় চলে আসে। গড়ে তোলে 007 সন্ত্রাসী গ্রুপ। এই গ্রুপে আছে তার ভাই রিশান ফরাজীও। ইতিমধ্যে তাদের হাতে অসংখ্য মানুষ লাঞ্ছিত হয়েছেন। তুচ্ছ কারণে লোকজনকে মারধর করত তারা। এসব কারণে কয়েকবার তারা গ্রেফতার হলেও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভায়রার ছেলে হওয়ায় খুব স্বল্প সময়েই মুক্তি পায় তারা।

সেই নির্মম হত্যাকাণ্ড

জানা গেছে, প্রতিদিন রিফাত ফরাজীর বাহিনীর আনাগোনা ছিল বরগুনা সরকারি কলেজে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, নতুন শিক্ষার্থীদের 007 গ্রুপের সদস্য করাসহ কলেজ ক্যাম্পাসে মাদকের আখড়া বসিয়েছিল রিফাত বাহিনী। ছোট ভাই রিশানের দায়িত্ব ছিল বন্ড গ্রুপের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করা এবং ওই সদস্যদের পর্যবেক্ষণে রাখা।

কলেজ ক্যাম্পাসে আড্ডা ও বখাটেপনায় অতিষ্ঠ থাকলেও রিফাত বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলত না। বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, রিফাত বাহিনীর অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও তিনি আমলে নিতেন না।

এ ব্যাপারে বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য হল, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোটখাটো ঘটনা অহরহ ঘটে। আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে এলে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি ওদের দু’বার পুলিশে সোপর্দ করেছিলাম।’

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধকে আমরা অপরাধ হিসেবেই দেখব। এর সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। ইতিমধ্যে মামলার অর্ধেক আসামি গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।’

গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে (২৩) স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাত শরীফকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নি হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজীর নাম বলেন।

হত্যাকাণ্ডের ১৫দিন নয়ন বন্ডের মা বলেন, তার ছেলের সঙ্গে মিন্নির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ঘটনার আগের দিনও মিন্নি তাদের বাড়িতে গেছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর ঘটনার মোড় নেয়। সেই ভিডিওটি ভারাল হলে দেখা যায় ঘটনার শুরুতে মিন্নির নিলিপ্ত অবস্থায় ছিল। এবং হত্যাকাণ্ডের শেষে জুতা ব্যাগ খুঁজছে। এছাড়া পূূর্বে ভিডিওতে রিফাত জেদ করে কেন মিন্নিকে রেখে গেয়ে তারও উত্তর পাওয়া যায় সেই ভিডিওতে। এসব ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ মিন্নিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংবাদ সম্মেলন করেন। পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন মিন্নিও।

মঙ্গলবার (১৬ ‍জুলাই) সকাল পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার নয়াকাটা গ্রামের বাড়ি থেকে মিন্নিকে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরকেও তার সঙ্গে নেওয়া হয়। মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর রাতেই তার বাবাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে রিফাত হত্যায় তার স্ত্রী মিন্নির সংশ্নিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাই এই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এরপর বুধবার (১৭ জুলাই)  মিন্নির রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হলে, আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে মিন্নি রিমান্ডে রয়েছে।  

এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর জানান, আমার মেয়ে খুব অসুস্থ। যদি ওকে রিমান্ডে নেয়া হয় তাহলে সে আরো অসুস্থ হয়ে পরবে। রিমান্ড ফেরাতে মিন্নির বাবা মেয়ের অসুস্থতার কাগজপত্র নিয়ে আদালতের হাজির হন। 

তবে কিশোর মিন্নির রিমান্ড ফেরাতে পারেননি।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!