• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেসিং কার তৈরি হবে বাংলাদেশে


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮, ১০:২৪ পিএম
রেসিং কার তৈরি হবে বাংলাদেশে

ঢাকা : বাংলাদেশে তৈরি হবে রেসিং কার। তৈরি হবে সব পার্টসও। এমন স্বপ্ন দেখতেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আটজন মিলে প্রথম গঠন করেছিল টিম ক্র্যাক প্লাটুন নামে একটি দল। সেই দল এখন ৪০ জনে পৌঁছেছে। ফর্মুলা স্টুডেন্ট রেসিং কারে সফলতার পর এবার তারা তৈরি করতে যাচ্ছেন ইলেকট্রিক ভেহিকেল। সেই গল্পই শেয়ার করেছেন টিমের তিন সদস্য তানভীর শাহরিয়ার, জাহিদ হাসান ও মুসা মাহমুদ রানা।

নিজেদের সফলতা আর নতুন কাজ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তারা। গল্প শুরু করলেন প্রথম থেকেই। ২০১৬ সালে যখন পথচলা শুরু করেন তখন এই টিমের সদস্য ছিল আটজন। তারা অটোমোবাইল নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথমে তৈরি করেন চার চাকার একটি বাইক। সেটি নিয়ে ভারতে আয়োজিত কোয়াড বাইক ডিজাইন চ্যালেঞ্জ নামে একটি প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করেন। ওই প্রতিযোগিতায় মোট ২৪টি দল অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে ষষ্ঠ হয় ‘টিম ক্র্যাক প্লাটুন’। একই সঙ্গে বেস্ট ফ্যাশনেট টিমের উপাধিও পায় তারা।

এরপর তাদের কাজের গতি আরও বেড়ে যায়। সিদ্ধান্ত নেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বড় পরিসরে আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার। তবে এই প্রক্রিয়ার শুরুতে অনলাইন এক্সামে অংশগ্রহণ করতে হয়। জাপান, জার্মানি, চেক রিপাবলিক ও অস্ট্রিয়ার চারটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ মেলে তাদের। টিম ক্র্যাক প্লাটুন সিদ্ধান্ত নেয় জাপানে আয়োজিত ‘স্টুডেন্ট ফর্মুলা জাপান’ শিরোনামের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের। তবে ফর্মুলা স্টুডেন্ট রেসিং কার তৈরিতে যে যন্ত্রপাতির দরকার হয় সেগুলোর বেশিরভাগই বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। প্রায় সব যন্ত্রপাতিই তাদের বিদেশ থেকে নিয়ে আসতে হয়েছে। যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে নিয়ে আসলেও সব যন্ত্র মডিফাই করে তারা তৈরি করেন ফর্মুলা স্টুডেন্ট রেসিং কার। এসব কাজ করেন নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে।

তবে এতদূর পর্যন্ত পথচলা সহজ ছিল না টিম ক্র্যাক প্লাটুনের। জাপানের যে প্রতিযোগিতায় তারা অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেখানে রেজিস্ট্রেশনের জন্য দরকার ছিল প্রায় দেড় লাখ টাকার। কোথাও সহায়তা না পেয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নিজেদের পরিচিতজনদের থেকে এই টাকা সংগ্রহ করেন। অন্যদিকে গাড়ি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। তার পুরোটাই অবশ্যই বহন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কাঠখড় পুড়িয়ে গাড়ি তৈরির কাজ শেষ করলেও বিপত্তি ঘটে প্রতিযোগিতায় উপস্থিতি নিয়ে। কারণ ওই প্রতিযোগিতায় গাড়ি নিয়ে সশরীরে উপস্থিত হবে প্রতিযোগীদের। এজন্য দরকার হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। অনেক চেষ্টার পর রানার বিডি ও আইডিয়া কমিউনিকেশন তাদের সহায়তা করে। তবে তখন সময়টা ডেডলাইনের কাছাকাছি।

গাড়িটি দ্রুত জাপান পাঠানোর সব প্রক্রিয়াও শেষ করেন তারা। হংকং হয়ে জাপান নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল গাড়িটি। তবে ওই সময়ে হংকংয়ে টাইফুন হওয়ায় আটকে যায় গাড়িটি জাপানে প্রদর্শন করার প্রক্রিয়ায়। টিম ক্র্যাক প্লাটুনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাতটি টিমের গাড়ি আটকে যায় হংকংয়ে ট্রানজিট সমস্যায়। প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত গাড়িটি হাজির করতে না পারলেও ১১৪টি দলের মধ্যে ৮১তম হয় জাহিদদের টিম।

পরিবেশ বিপর্যয় ও জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে যখন সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন সেই মুহূর্তে তারা কাজ শুরু করেছেন ইলেক্ট্রিক ভেহিকেল নির্মাণে। নতুন এ প্রজেক্ট নিয়ে বেশ আশাবাদী ৪০ জনের টিম ক্র্যাক প্লাটুন। আগেরবার নানা সংকটে পিছিয়ে পড়লেও এবার নতুন গতিতে এগিয়ে যেতে চান তারা। তবে এবার যাতে আর্থিক সংকটের কারণে প্রজেক্ট মুখ থুবড়ে না পড়ে সেজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!