• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোজায় নারীদের নিয়ে হুজুরের ওয়াজ ভাইরাল


সোনালীনিউজ ডেস্ক মে ১৯, ২০১৯, ০৯:২৬ এএম
রোজায় নারীদের নিয়ে হুজুরের ওয়াজ ভাইরাল

সবার আগে ওঠে কে আর সবার শেষে ঘুমায় কে? কাপড় ধোয়া, রান্না করা, ঘর গোছানো, সন্তান সামলানো কেবল মা আর স্ত্রীদের দায়িত্ব ভাবছেন?

কী মূল্যায়ন করেছেন তাদের? এসব তাদের দায়িত্ব নয়। এসব হচ্ছে এহসান। ওয়াজে নারীদের নিয়ে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

রাজধানীর পল্লবীর মসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ একটি ওয়াজ তার ফেসবুক পেজে গত বুধবার (১৫ মে) শেয়ার দেন। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ভিডিওটি ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ শেয়ার দিয়েছেন। এছাড়াও তার এ ওয়াজকে প্রশংসা করেছেন হাজার হাজার নেটিজেনরা। শনিবার রাতে মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

হঠাৎ কেন নারীদের নিয়ে এমন ওয়াজ?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আমি অনেকদিন ধরে বিষয়টি দেখেছি। আমি একান্নবর্তী ফ্যামিলির ছেলে। ছোট থেকেই দেখে এসেছি আমার মা কত কষ্ট করে আমাদের লালন-পালনসহ সংসার গুছাচ্ছেন। আমাদের বোনরাও সাংসারিক কাজে কত অবদান রাখেন। কিন্তু তারা কেউই এ নিয়ে আক্ষেপ করে না। তারা এটাকে খুবই সহজভাবে নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছি।

আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহর পরিচয়

রাজধানীর পল্লবীর মসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপারেটিভ রিলিজিয়াস বিষয়ে পিএইচডি করছেন। এছাড়াও তিনি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা ইবিএসের রিলিজিসিয়াস এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর।

পারিবারিক জীবনে তিনি দুই মেয়ের জনক। বড় মেয়ে নার্সারিতে পড়ে আর ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ৮ মাস। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ শহরে উকিলপাড়া। বাবা নওগাঁ আলিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুহাদ্দিস ও নওগাঁ কাঁচারি মসজিদের খতিব।

মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহদের সাত ভাইবোন। পাঁচ ভাই ও দুই বোন। এর মধ্যে দুই ভাই ঢাকা মেডিকেলের ডা. নূরুল্লাহ ও ডা. নিয়ামতউল্লাহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন।

কী বলেছেন ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে?

ওই ভিডিওতে মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, যেসব নারীরা সংসারের কাজ করে তাদের আমরা তেমন মূল্যায়ন করতে চাই না। তবে তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ কোনো কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। কারণ আপনার মা বা স্ত্রী ঘরে যে কাজগুলো করেন তা তাদের জন্য ইহসান। তারা তা করতে বাধ্য নয়।

রোজায় সাহরির কথা উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের মা ও স্ত্রীরা সাহরিতে সবার আগে উঠেছে, খাবারগুলো গরম করেছে, সবাইকে ডাকছে উঠরে বাপ সময় নাই, সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছেন, আবার খাওয়ার পরে সেই বাসনগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করছে। আপনি খেয়ে মসজিদে যাচ্ছেন নামাজ পড়তে। তিনি কিন্তু বসে নেই। বাসন ধোয়া ও মোছার কাজ শেষ হলেই তিনি নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাতে যান। খবর নিয়েছেন কখনো। তাদের প্রতি সম্মান দেখান , তাদের খবর নিন।

ইফতারের আগে নারীদের কাজ করতে করতে ঘাম ছুটে যায়। তারা পরিবারের জন্য নিজের আন্তরিক্তার সবটুকু ঢেলে দেন।

তিনি বলেন, এতো গেল সাহরির কথা। আবার আসেন ইফতারের আগে রান্না করছেন, ইফতারি তৈরি করছেন। ইফতারের পরে আপনি খেয়ে মসজিদে দৌঁড় দেন নামাজের জন্য। আবার বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে, কেউ টিভি দেখেন, কেউ মোবাইলে নেট চালান। কিন্তু এই মা বা স্ত্রী কিন্তু আপনার ও আপনার শিশুদের জন্য খাবার তৈরি করতে হয়রান। রাতে কী খাবেন? সাহরিতে কি খাবেন, খাওয়ার পরে ধোয়া-মোছার কাজ তো রয়েছে। কিন্তু আমরা তারাবি পড়ে ঘুমাই মা কিন্তু ঘুমায় না। কত কষ্ট করে আপনার আমার জন্য। কিন্তু তারা কিন্তু তা করতে বাধ্য নয়। বা না করলে গোনাগারও হবেন না।

তিনি আরো বলেন, তারাবির পরে এসে তৈরি খাবার পেয়ে যাচ্ছি। খেয়ে ঘুম। ভেবে দেখেছেন কি আপনার মা, স্ত্রী বোন আপনার জন্য কী করছেন?

বিয়ে করে নিয়ে এসেছেন বলেই করতে বাধ্য তারা এটা। না, তারা কিন্তু বাধ্য নয়। তারা কিন্তু কোনো কিছুর বিনিময়ে করছে না।

পরিবারের ভালোবাসা থেকে তারা এটি করছে। কিন্তু আপনি আমি কি করছি তাদের জন্য। ভেবে দেখেছেন কি? তাই এই মানুষগুলোর জন্য সহনুভূতিশীল হতে হবে, ভালোবাসতে হবে, তাদের ধন্যবাদ জানাতে হবে। না হলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে প্রিয় ভাইয়েরা।

হযরত ওমর (রাঃ) উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, এক লোকের স্ত্রী তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তাই সে সিদ্ধান্ত নিল তার স্ত্রীতে তালাক দেবে। পরে সে এই সমস্যা সমাধানের জন্য হযরত ওমর (রাঃ) এর কাছে যায়।

হযরত ওমর (রাঃ) এর বাড়িতে যাওয়া পরে তিনি বাইরের থেকে হযরত ওমর (রাঃ) এর স্ত্রী চিৎকার ও চেঁচামেচি শুনতে পেলে এবং নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিলেন আমার আর বিচার দেওয়ার দরকার নেই।

কারণ হযরত ওমর (রাঃ) এর স্ত্রী যেভাবে চিৎকার ও চেচমেচি করছেন তা আমরার স্ত্রীর চেয়ে অনেক গুণে বেশি। তখন তিনি বাড়ির দিকে রওনা হলেন। পরে হযরত ওমর স্ত্রী সঙ্গে কথা শেষ করে দরজা খুলে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান।

পরে তাকে ডেকে বলেন তুমি কেন এসেছিলে। পরে লোকটি তার স্ত্রীর খারাপ আচরণের কথা বলে। পরে হযরত ওমর তাকে বলেন, স্ত্রী আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে আমি কিছু মনে করি না। কারণ তিনি আমার সংসার ও ছেলে মেয়েদের জন্য অনেক কষ্ট করেন। আমার সেবাযত্ন করেন। তাই এটা খুবই স্বাভাবিক। পরে লোকটি চলে গেলেন ও তার ভুল বুঝতে পারেন।

এই মাওলানা বলেন, অনেকে বলে থাকেন বউয়ের মেজাজ খিটখিটে, কেন খিটখিটে কখনও ভেবে দেখেছেন, খবর নিয়েছেন, একদিন বাচ্চাদের যত্ন নেন, ঘর গোছান, মসলা বাটেন, রান্না করেন দেখবেন মেজাজ ঠিক থাকবে না।

তিনি বলেন, অনেকে স্ত্রীদের কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান না, উপহার সামগ্রী কিনে দেন না, সারা বছর একই কাজ সে শুধু করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে, কোনো মানুষের মেজাজ ঠিক থাকবে। কতদিন পর্যন্ত তিনি পারবেন। আর কেনই বা তার মেজাজ ঠিক থাকবে।

স্ত্রীকে সম্মান করার নাম এহসান উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি এহসান হয়, গিফট বিনিময় হয়, হাদিয়া বিনিময় হয় তবে আপনি নিয়ামত পাবেন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!