• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের হাতে উজাড় হচ্ছে ঝাউবন


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৮, ২০১৬, ০২:২১ পিএম
রোহিঙ্গাদের হাতে উজাড় হচ্ছে ঝাউবন

বিশেষ প্রতিবেদক
প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে শরণার্থী হিসাবে আগত রোহিঙ্গারা বসতি বানাতে গিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলজুড়ে ঝাউবন উজাড় করে দিচ্ছে। খোদ বন বিভাগের অভিযোগ- প্রতি রাতেই দুর্বৃত্ত ও রোহিঙ্গারা বিপুলসংখ্যক ঝাউগাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে টেকনাফ সৈকতের বাহারছড়া, শামলাপুর ও শীলখালী ইউনিয়নের প্রায় ৪ কিলোমিটার বিস্তৃত ঝাউ বাগান উজাড় হয়ে গেছে। এমনকি এক সপ্তাহেই রোহিঙ্গা ও দুর্বৃত্তরা প্রায় ১০ হাজার গাছ কেটে নিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ- বন কর্মীদের যোগসাজশে একদল দুর্বৃত্ত ও রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত ঝাউগাছ কাটছে। স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০০২-০৩ সালে টেকনাফ উপকূলীয় এলাকার ৪ কিলোমিটার বালুর চরে প্রায় ২ লাখ ঝাউগাছের চারা রোপণ করা হয়। তাছাড়া বন বিভাগ ২০০৬-০৭ সালে বাহারছড়া, শামলাপুর ও শীলখালী সৈকতপাড়েও আরো ৭০ হাজারের মতো ঝাউগাছ রোপণ করেছিল। মূলত ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা রক্ষা পেতেই বন বিভাগ এ উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সৃজিত ঝাউবাগানের ভেতরেই হাজার হাজার অবৈধ রোহিঙ্গার বসতি গড়ে উঠেছে। যদিও গতবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন ওসব অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা আবারো বাগানের ভেতর বসতি তৈরি করছে।
সূত্র জানায়, ঝাউ বাগানের ভেতরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা প্রতি রাতেই গাছ কেটে নিচ্ছে। তাছাড়া একশ্রেণীর দুর্বৃত্তও রয়েছে যারা বন কর্মীদের যোগসাজশে বড় বড় ঝাউগাছ কেটে নিচ্ছে। বিগত এক সপ্তাহে শামলাপুর ও শীলখালী ঝাউবাগান থেকে দুর্বৃত্তরা প্রায় ১০ হাজারের মতো ঝাউগাছ কেটে নিয়ে গেছে। সারি সারি ঝাউগাছের মাঝে বড় গাছগুলো কেটে নিয়ে গেলেও গোড়ালি দেখা যাচ্ছে। আবার অনেক গাছের কাটা গোড়ালি বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। অধিকাংশ গাছেই করাত ও দায়ের চিহ্ন রয়েছে। মূলত ওই এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদের পর থেকেই ঝাউগাছ বেশি উজাড় হচ্ছে। রোহিঙ্গা ও দুর্বৃত্তরা গাছ কেটে বসতবাড়ি তৈরির জন্য জায়গা করছে। কেউ কেউ আবার ঝাউ গাছগুলোকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। আবার কেউ ফিশিংবোট তৈরিতেও কাজে লাগাচ্ছে। বড় সাইজের একটি ঝাউগাছ বিক্রি হয় প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। মূলত বোট তৈরিতেই বেশিরভাগ ঝাউগাছ ব্যবহার হচ্ছে। বন বিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর যোগসাজশে ওসব ঝাউগাছ উজাড় হচ্ছে। আর বন বিভাগ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নিলে কিছুদিনের মধ্যে ঝাউবাগানের একটি গাছও থাকবে না।
এদিকে বন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন- পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় কোনোভাবেই ঝাউ বাগান রক্ষা করা যাচ্ছে না। রাতের আঁধারে ঝাউ গাছগুলো দুর্বৃত্তরা কেটে নিচ্ছে। গাছ কাটার অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। তারপরও ঝাউগাছ নিধন থামানো যাচ্ছে না। আর বন বিভাগের কোনো কর্মচারী গাছ কাটার বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ সঠিক নয়। তবে স্থানীয় পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে ঝাউবাগান থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির বলেন, দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে ঝাউগাছ কেটে নেয়ার বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে বন বিভাগ কাজ শুরু করেছে। তবে লোকবল সঙ্কট হওয়ায় এতো বড় বাগান পাহারা দিতে বনপ্রহরীরা হিমশিম খাচ্ছেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!