• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লতিফ সিদ্দিকীর অনশনের ৩০ ঘণ্টা পার, বাড়ছে ঝুঁকি


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮, ১১:০১ পিএম
লতিফ সিদ্দিকীর অনশনের ৩০ ঘণ্টা পার, বাড়ছে ঝুঁকি

ঢাকা : থানার ওসিকে প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে ৩০ ঘণ্টা যাবৎ অনশন করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এরই মধ্যে তিনি আমরণ অনশনের লিখিত ঘোষণাও দিয়েছেন।

দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি আর ঠান্ডার মধ্যেই তিনি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে এ অনশন কর্মসূচী করছেন। আমরণ অনশন ঘোষণার পর সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. মো. শরীফ হোসেন খান জানান, লতিফ সিদ্দিকী উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তিনি ওষুধও খাচ্ছেন না। খাবার না খাওয়ায় ধীরে ধীরে তাঁর শরীরের সুগার কমে যাচ্ছে। এতে শরীর নিস্তেজ হয়ে শারীরিক ঝুঁকি বাড়ছে।

এর আগে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, সদর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ও নিকটাত্মীয়রা তাকে দেখতে যান।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তার সাথে দেখা করতে এলে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমার অনশন প্রতিবাদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে নয়, স্থানীয় সাংসদের সহিংসতামূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে।

তিনি আরও বলেন, আমি শেখ হাসিনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই না, আমি সরকারকে বিব্রত করতে চাই না। আমি চাই, সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন। আমি যদি শেখ হাসিনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইতাম, তাহলে আমি এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এই অবস্থান ধর্মঘট করতাম। তাহলে কি হত? যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। আমি তা চাই নাই। আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। আমি জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে চাই না। আমি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। দাবি মানা হলে কাউকে বলতে হবেনা নিজেই চলে যাব, যতক্ষণ মানা না হবে ততক্ষণ কোথাও যাব না।

অনশনের দ্বিতীয়দিন সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) রিটার্নিং অফিসারের কাছে দেয়া লিখিত ঘোষণায় তিনি বলেন, আমার অনশন ধর্মঘটের ১৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত কিন্তু কোন প্রতিকার না পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একই সঙ্গে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার।

ঘোষণায় তিনি উল্লেখ করেন, আমার যদি কোন ক্ষতি হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে বলে ঘোষণা দিচ্ছি।

রোববার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল-বল্লভবাড়ি এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খানের কর্মী-সমর্থকরা হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত গাড়িসহ চারটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবাদে রোববার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি নিয়ে এসে তিন দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন লতিফ সিদ্দিকী।

দাবিগুলো হচ্ছে, কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার, অপরাধীদের গ্রেফতার ও সরকার দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পর্যন্ত আর কোন সহিংসতামূলক কার্যকলাপ করবে না মর্মে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মুচলেকা প্রদান।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, কালিহাতীতে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে তাঁর কর্মী-সমর্থকদেরকে পুলিশ ফোন করে প্রকাশ্যে-গোপণে হুমকি দিচ্ছে। সরকার দলীয় প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা নিয়মিত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। তিনি ইতোপূর্বে তিনটি পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার কোন ব্যবস্থাই নেননি।

ওই হামলায় আহত ইউপি সদস্য মোর্শেদা খানম ডলি জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার তাঁর লাইসেন্সকৃত বন্দুক নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেয়। সরকার দলীয় প্রার্থী হাছান ইমাম খানের কর্মী ওবায়দুল তালুকদার, আব্দুল হাই মেম্বার, জহুরুল, সোহেল সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর, রাসেল, সুলতান মেম্বার সহ প্রায় দেড়শ’ লোক হামলায় অংশ নেয়। তিনি সহ অন্যকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে লতিফ সিদ্দিকীকে রক্ষা করেন। অথচ তাঁর (লতিফ সিদ্দিকীর) ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী পুলিশ দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কালিহাতী থানার এএসআই মো. সেলিম হোসেন জানান, বাড়ির ভেতরে বসে কথা বলার সময় বর্তমান সংসদ সদস্য এমপি হাছান ইমাম খানের লোকজন অতর্কিতভাবে হামলা করেছে। আমরা লতিফ সিদ্দিকীকে রক্ষা করেছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!