• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

লবণগুজব পকেট কাটল মানুষের


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২০, ২০১৯, ১২:৪১ পিএম
লবণগুজব পকেট কাটল মানুষের

ঢাকা : দর প্রতি কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে-গতকাল সকাল থেকেই মানুষের মুখে মুখে এমন খবরে লবণ কেনার হিড়িক লেগে যায় রাজধানীসহ সারা দেশে। এতে আধাবেলার মধ্যেই বেশির ভাগ দোকানে লবণ ফুরিয়ে যায়।

তারপর দুপুর নাগাদ যেসব দোকানে লবণের বাড়তি মজুত ছিল, ওই সব দোকানি সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন। এভাবে পেঁয়াজের পর কৌশলে ভোক্তাদের পকেট কেটেছে লবণও।

তবে লবণের সংকটের বিষয়টি পুরোপুরি গুজব-সেটা নিশ্চিত করেছে সরকার। শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনসহ (বিসিক) আরো কয়েকটি সরকারি সংস্থার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি দেশের লবণ উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতিও এ নিত্যপণ্যের সংকটের বিষয়টি গুজব বলেই জানিয়েছে।

সমিতির সভাপতি নূরুল কবির বলেন, লবণের সংকট রয়েছে-এ কারণে দাম বাড়বে বলে যে প্রচার হচ্ছে সেটা সত্য নয়। এমন গুজব কানে আসার পরপরই আমরা সব ব্যবসায়ীকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত লবণ রয়েছে, যা চাহিদার থেকেও অনেক বেশি।

অন্যদিকে দেশে লবণ সরবরাহকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এসিআই সল্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর জানান, এখন লবণ সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। কোম্পানির পক্ষ থেকেও দাম বাড়ানো হয়নি। ক্রেতাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পাশাপাশি ন্যায্য দামে পরিমিত পরিমাণে লবণ কেনার পরামর্শ দেন তিনি।

শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ টনের বেশি ভোজ্যলবণ মজুত রয়েছে। যেখানে সারা দেশে প্রতি মাসে লবণের চাহিদা কমবেশি এক লাখ টন। ফলে লবণের কোনো ঘাটতি বা সংকট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

সংস্থাটির তথ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণচাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন লবণ মজুত রয়েছে।

এছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুত রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আবারো লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে।

একটি মহল গুজব ছড়িয়ে পণ্যটির বাজার অস্থিতিশীল করেছে বলে অভিযোগ করে মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকট রয়েছে মর্মে গুজব রটনা করেছে।

এর মাধ্যমে তারা অধিক মুনাফার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

এদিকে গতকাল সারা দেশে পরিস্থিতি এতটাই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে যে, সকাল থেকে দোকানে দোকানে লবণের জন্য হিড়িক দেখা যায়। ক্রেতারা বলছেন, তারা শুনেছেন লবণের কেজিপ্রতি দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ আশঙ্কায় তারা পরিবারের জন্য বাড়তি লবণ কিনে রাখছেন।

অন্যদিকে সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও লবণের সংকটের প্রচারণা চলে।

এতে প্রায় সারা দিন দোকানগুলোতে লবণ কিনতে মানুষ ভিড় করে। এর মধ্যে কোথাও লবণ মিলেছে, কোথাও পায়নি। যেখানে পাওয়া গেছে সেখানে আবার দাম বেশি।

তারপরেও কেউ দুই কেজি, কেউ পাঁচ কেজি লবণ কেনেন। এমনকি কোথাও কোথাও বন্ধ দোকান খুলে, আবার কোথাও অন্যান্য পণ্য বিক্রি বন্ধ রেখে মজুত লবণ বিক্রি করতে দেখা গেছে। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও ছিল একই অবস্থা।

দুপুর আড়াইটা নাগাদ রাজধানীর ভাটারা এলাকায় মমতাজ উদ্দিন কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৮টি মুদি দোকানের মধ্যে ৫টিতে লবণ নেই।

আর ভাই ভাই, বরিশাল ও সাগর স্টোরে কিছু লবণ ছিল। ফলে এ দুই দোকানের বিক্রেতারা বেশি পরিমাণে লবণ বিক্রি করতে চাচ্ছিলেন না। তবে ক্রেতারা ছিলেন নাছোরবান্দা। একেকজন ২ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত লবণ কিনতে চান।

সাগর স্টোরের স্বত্বাধিকারী জিয়াউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে প্রায় ছয় বস্তা লবণ বিক্রি করেছি, অন্যদের মতো দাম বেশি রাখিনি। তবে ক্রেতারা জোর করে বেশি বেশি লবণ নিয়ে যাচ্ছেন। দাম দিয়ে কিনতে বলে বাধাও দেওয়া যাচ্ছে না।

অপরদিকে বাজারে প্যাকেটজাত লবণের প্যাকেটের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা ৩৫ টাকা। সে লবণ কিছু দোকানে ৫০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে অপরিচিত ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে রাজি হননি তারা। ক্রেতাদের বাড়তি চাপ দেখায় খুচরা বিক্রেতারাও আর ছাড় দিয়ে বিক্রি করেননি।

আবার দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও চড়া দামে লবণ বিক্রির খবর আসে। ওই সব এলাকায় বেশি দামে লবণ বিক্রি করে জরিমানাও গুনেছেন অনেক বিক্রেতা।

এ পরিস্থিতিতে লবণের বিষয়টি তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এর নম্বর ০২-৯৫৭৩৫০৫ (ল্যান্ড ফোন) ও ০১৭১৫-২২৩৯৪৯  (সেল ফোন)। অতিরিক্ত দাম নিলে অথবা লবণ-সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে বিসিক চেয়ারম্যান মোস্তাক হোসেন বলেছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট অনলাইন মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!