• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
দাম বেড়েছে চাল-ডাল-তেল, পেঁয়াজ-রসুন-মরিচ, আটা-সবজির

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০, ০৭:১২ পিএম
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার

ঢাকা : নিত্যপণ্যের বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামছাড়া। গত সপ্তাহে নতুন করে চাল কেনার ব্যয় বেড়েছে। একই সময়ে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধিতে নতুন করে চাপে পড়েছেন ক্রেতারা।

দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পাম ও সয়াবিন তেল। সপ্তাহের ব্যবধানে এ দুটি তেলের দাম লিটারে গড়ে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া বন্যার পর থেকে সবজির দাম চড়া। এখন আগের চেয়ে সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা ও বোতলজাত সব ধরনের সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল মানভেদে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা পাম তেলের দামও বেড়েছে। এখন প্রতি লিটার পাম ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ও পাম সুপার ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল যথাক্রমে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে পাম ও সয়াবিন তেল, চাল, প্যাকেট ময়দা, রসুন, মসুর ডাল ও শুকনো মরিচের দাম খুচরা বাজারে বেড়েছে।

রাজধানীর বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মান ও বাজারভেদে পেঁয়াজের দামে এখন তারতম্য রয়েছে। আমদনি করা রসুনের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।

খুচরায় পেঁয়াজের দামে তেমন হেরফের না থাকলেও পাইকারিতে দাম আবার কিছুটা বাড়ছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইউনুস। তিনি বলেন, পাইকারিতে আমদানি পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এখন মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চালের দামও কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, মাঝারি চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা ও সরু চাল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্যাকেটজাত ময়দার দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মাঝারি দানা মসুর ডাল ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্য ডাল আগের সপ্তাহের মতো একই দামে পাওয়া যাচ্ছে।

এ ছাড়া শুকনা মরিচের দাম কেজিতে গড়ে ২০ টাকা বেড়ে মানভেদে ২২০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জাফর উদ্দিন বলেন, বাজারে বেশ কয়েটি নিত্যপণ্যের দাম বেশ বাড়তি। এ নিয়ে প্রতিদিনই ক্রেতাদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এখন নতুন করে কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোয় ক্রেতারা আরও চাপে পড়েছেন।

তিনি বলেন, আগে যেসব ক্রেতা গড়ে প্রতি মাসে ৮-১০ হাজার টাকার পণ্য কিনতেন, করোনা সংক্রমণের পরে তারা ৫-৬ হাজার টাকার পণ্য কিনছেন। এ সময়ে নতুন করে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের চাপ আরও বেড়েছে। এখন সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা বাজারও কম করছেন।

বাজারে সবজির দাম এখন বেশ চড়া। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। এখন ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ কিনতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। এখন প্রতি কেজি পেঁপের দাম ৪০ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি। পটোল, ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। বেগুন ও করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, কুষ্টিয়ায় বোরো মৌসুমে সরকারের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেও অসহযোগিতার কারণে কালোতালিকাভুক্ত হচ্ছে জেলার ২৬১টি চালকল। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা তাহসিনুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, যারা চুক্তি করেও চাল দেয়নি তাদের তালিকা করা হয়েছে।  কি কারণে চাল দিতে পারেনি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  আইন অনুযায়ী এসব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

পাশাপাশি এসব মিলের জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রণোদনা বাতিল ও আগামী দুই মৌসুম চাল সরবরাহ থেকে চুক্তির বাইরে রাখার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগ। জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে ৩৪ হাজার মেট্রিক টন মোটা চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে সময় বাড়িয়েও সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার মেট্রিক টনের কিছু বেশি।

জানা গেছে, জেলায় অটো ও হাসকিং মিলিয়ে চালকল রয়েছে ৫৩৫টি।  এর মধ্যে অটো চালকলের সংখ্যা ৪৯টি।  আপদকালীন মজুদের লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব চালকল থেকে চাল কেনার চুক্তি করে স্থানীয় খাদ্য বিভাগ। তবে চুক্তিভঙ্গ করে এবার ২৫৮টি হাসকিং (ম্যানুয়াল) ও ৩টি অটো রাইস মিল এবার এক ছটাক চালও সরবরাহ করেনি। আংশিক সরবরাহ করেছে ১২টি মিল। তবে ২৬৫টি চালকল পুরো চাল সরবরাহ করেছে।

কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জানান, এ বছর দেশে প্রচুর ধান উৎপাদনের পরেও ধানের বাজার বেড়ে যায়।  আর বোরো মৌসুমে মোটা ধানের উৎপাদন হয় একেবারেই কম। এ কারণে সরকার নির্ধারিত দরের তুলনায় চালের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে গেছে। মিল মালিকরা কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান দিয়েও চাল সরবরাহ করেছে। তবে যারা চুক্তি করে চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আগে ভাবলে ভাল হয়।

ছোট মিলাররা এমনিতেই দেউলিয়া হয়ে গেছে, তার ওপর কড়া পদক্ষেপ নিলে তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। বাংলাদেশ অটো মেজর এন্ড হাসকিং মিল মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, বোরো মৌসুমে যারা লোকসানে চাল দিয়েছে তাদেরকে আগামীতে বাড়তি সুবিধা দিতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!