• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বেড়েছে


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৪, ২০১৮, ১২:১৯ পিএম
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বেড়েছে

ঢাকা : প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে আউটসোর্সিং আয় বাড়াতে চলমান লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটির মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ব্যয়ও (৭৭ শতাংশ)। ৩১৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরে এ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

রাজধানীর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই একনেক সভা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সভায় ৬৯০ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়ন (ভ্যাট অনলাইন) প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
 
২০১৬ সালে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে নেওয়া ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এর ব্যয় ১৩৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেড়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এই ব্যয় আরো ৭৭ শতাংশ বাড়ল। প্রকল্পের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় ১৪ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি সম্পূর্ণ নতুন। চলমান পাঁচ প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ১৪ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬ হাজার ২২৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ৫ হাজার ৪২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে আসবে ৬৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর বাইরে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে ৭৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিশেষ আগ্রহে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এ প্রকল্পের আওতায় সম্ভাবনাময় আউটসোর্র্সিং খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে। এ প্রকল্পটি বন্ধ না করে চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

তিনি আরো জানান, প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৫ দিনব্যাপী ২০ হাজার নারীকে মৌলিক প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ২ হাজার ৯০০ জনকে আউটসোর্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ে ৮৪০ জনকে বিশেষায়িত আউটসোর্সিং কাজে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ, বিভাগ/জেলাপর্যায়ে ৫৩ হাজার জনকে প্রফেশনাল আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ, আউটসোর্সিং বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১ হাজার ৯২০ গণমাধ্যমকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আরো জানান, ১৩৩ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ‘কেমিক্যাল মেট্রোলজি অবকাঠামো সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ডিআরআইসিএমের কেমিক্যাল মেট্রোলজি অবকাঠামো সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, পণ্য উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প, পরিবেশ, বাণিজ্য, গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ রফতানির ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা দূর করা সম্ভব হবে।

ফলে বাংলাদেশি পণ্যের বিদেশি বাজারের প্রবেশের পথ সুগম করা এবং উন্মোক্ত বাজার প্রতিযোগিতায় দেশীয় পণ্যের টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া একই বিষয়ে বিভিন্ন পরীক্ষণাগারের পরীক্ষণের ফলাফলের ভিন্নতা দূর করে দেশের পরীক্ষণাগারগুলোর পরীক্ষণের মান আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা হবে।

‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, কুমিল্লা জোন’ শীর্ষক অন্য একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলা, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম ও বুড়িচং উপজেলা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সদর, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলা, চাঁদপুর জেলা সদর, নোয়াখালী জেলা মাইজদি, বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, ফেনী জেলা সদর এবং লক্ষ্মীপুর জেলা সদর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশ মসলাজাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বে ১০৯ ধরনের মসলা চাষ করা হলেও বাংলাদেশে প্রায় ৪৪টি মসলা ব্যবহৃতত হয়। এর মধ্যে চাষ করা হয় মাত্র ৩৪টি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্যশস্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মসলার জমি খাদ্যশস্য চাষের আওতায় চলে এসেছে। এ কারণে মসলার উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। চাহিদার কারণে কিছু বিদেশি মসলা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। এমতাবস্থায় কাক্সিক্ষত মসলা উৎপাদন অর্জনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘জিএমডিএসএস এবং ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম স্থাপন’ শীর্ষক অন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। জাহাজ ও সাগরতীরের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক কনভেনশন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা পূরণ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নজরদারি, নৌপরিবহন সহায়তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সমুদ্রতীরভিত্তিক সুবিধা স্থাপন ও পরিচালনা করা, আধুনিক নেভিগেশনাল এইডস এবং ভেসেল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা উন্নয়ন, বিদ্যমান লাইট হাউস আধুনিকীকরণ এবং নতুন লাইট হাউস স্থাপন করা, অনুসন্ধান এবং উদ্ধার অপারেশন সমন্বয় করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের সংযোগ নদী খনন, সেচ সুবিধার উন্নয়ন এবং মৎস্য চাষ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন করেছে একনেক। কক্সবাজারের বাংলাদেশ-মিয়ানমার এ সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারসমূহের পুনর্বাসন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

বৃহত্তর নোয়াখালীর পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। মরজাল-বেলাব সড়ক ও পোড়াদিয়া-বেলাব জেলা মহাসড়ক দুটি যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বগুড়া শহর থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ‘ইন্ট্রোডাকশন অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীতে ব্যয় হবে ৭১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!