• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটে ৫ এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক, লালমনিরহাট অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ০৮:০৯ পিএম
লালমনিরহাটে ৫ এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে সদর থানায় ভিত্তিহীন তিনটি মামলা ও দায়িত্ব অবহেলার দায়ে ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। সম্প্রতি লালমনিরহাটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মেহেদী হাসান মন্ডল পৃথক তিনটি মামলায় এ আদেশ দেন।

ওই ৫ কর্মকর্তা হলেন লালমনিরহাট সদর থানার উপ-পরিদর্শক এসআই মিজানুর রহমান, এসআই নুর আলম সরকার, এস আই সেলিম রেজা,এস আই জহুরুল ইসলাম ও এস আই জিল্লুর রহমান। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে সুপারিশ করেছেন আদালত। এদিকে আদালতের সুপারিশ করা আদেশের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, পুলিশের আইজিপি, লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার ও অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

মামলার এজাহার, পুলিশ রিপোর্ট  ও আদালতের জারীকৃত আদেশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুন এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে লালমনিরহাট শহরের সাপটানা মাঝাপাড়া গ্রামের ধনঞ্জয় কুমার বর্মণের (৩৮) বিরুদ্ধে ২০টি লোপেন্টা (টাপেন্টডিল) ট্যাবলেট রাখার অভিযোগে থানায় মামলা করেন। সদর থানার এসআই নুর আলম সরকার গত ৮ আগষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ।

৩ অক্টোবর এ মামলার রায়ে বিচারক বলেন, বৈধ ওষুধ রাখা সত্ত্বেও নঞ্জয় কুমার বর্মণকে ভিত্তিহীন মামলায় আসামি করা হয়েছে এবং রাসায়নিক পরীক্ষকের প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগপত্র দাখিল করে দায়িত্বে অবহেলা করা হয়েছে। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সুপারিশ করেন বিচারক।

এর আগে ১৮ মে লালমনিরহাট সদর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে লালমনিরহাট শহরের গার্ড পাড়ার আশরাফুল আলমের (৩২) বিরুদ্ধে ৩০টি ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট রাখার অভিযোগে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে থানায় একটি মামলা করেন।

৩০ জুলাই এসআই জিল্লুর রহমান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২ অক্টোবর এ মামলায় রায়ে বিচারক বলেন, বৈধ ওষুধ রাখা সত্ত্বেও শামসুল হককে ভিত্তিহীন মামলায় আসামি করা হয়েছে। এজাহারকারী এসআই সেলিম রেজা এবং রাসায়নিক পরীক্ষকের প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগপত্র দাখিল করে দায়িত্বে অবহেলার কারণে এসআই জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সুপারিশ করেন বিচারক।

এদিকে  গত ১২ মে এসআই সেলিম রেজা বাদী হয়ে লালমনিরহাট শহরে ওয়ারলেস কলোনীর শামসুল হকের (৩৬) বিরুদ্ধে ৩০টি ট্যাপেন্টা ট্যাবলেট রাখার অভিযোগে মাদক দ্যব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে থানায় মামলা করেন। এসআই জহুল ইসলাম ৯ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার রায়ে বিচারক বলেন, বৈধ ওষুধ সত্ত্বেও আশরাফুল কে ভিত্তিহীন মামলায় আসামি করা হয়েছে। এজাহারকারী এসআই জহুরুল ইসলাম এবং রাসায়নিক পরীক্ষকের প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগপত্র দাখিল করায় এসআই জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্তণালয়ে সুপারিশ করেন আদালত।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহাফুজ আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের  জানান, আদালতের নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে উচ্চ-আদালতে আমরা রিভিশন করেছি।

ওসির বক্তব্য সূত্র ধরে জেলার বিশিষ্ট  আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত চাইলে তারা সোনালী নিউজকে জানান, যে সব ওষুধ  মাদক দ্রব্য হিসেবে আখ্যাইত করে মামলা করা হয়েছে তা অনুচিত হয়েছে।

কেননা উল্লেখ্য ঔষধগুলো সরকারের ঔষধ প্রশাসন কতৃক উৎপাদন ও বাজার জাতের লাইসেন্স  প্রাপ্ত । তারা আরো বলেন, মামলার আলামতে রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টে  কোনো মাদক দ্রব্য উপাদান পাওয়া যায় নি। তারপরেও মামলার অভিযোগ পত্রে ওই বৈধ ওষুধ  গুলোকে মাদতদ্রব্য হিসেবে দাবী করা আইন বিরোধী। এ ঘটনায় রিভিশন করা মানে নিজেরদের পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তারা।

এ বিষয়ে জেলার অপর এক সিনিয়র আইনজীবীর নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী নিউজকে জানান, এসব মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা মুলত পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার শিকার হয়ে বিনা দোষে হাজত খেটেছেন ।  যা সু নির্দিষ্ট  ভাবে মানব অধিকার  লঙ্ঘন ।

তিনি আরো বলেন,  ভুক্ত ভোগীরা চাইলে হাইকোর্টে রিট করতে পারেন। একই সাথে তিনি আরো বলেন এসব আদেশ যদি স্থগিত  ছেয়ে রিভিশন করা হয় তবে সেটি উচ্চ আদালতে গৃহিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তিনি দাবী করেন নিম্ন আদালত যেসবের ভিত্তিতে আসামীদের অব্যাহতি  দিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ  দিয়েছেন তা শতভাগ আইন সম্মাত।  

কেননা মামলার এজহার পুলিশ প্রতিবেদক আলামতের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টের  আলোকেই এই আদেশ জারী করেছেন নিম্ন আদালত। পুলিশের রিভিশন উচ্চ আদালত গ্রহন করে যখন উল্লেখিত বিষয় গুলো পর্যালচনা করবেন তখন নিম্ন আদালতের আদেশ বহান থাকবে বলে আমরা মনে করছি। কেননা আদালত সুনির্দিষ্ট  অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমানের ভিত্তিতে বিচার করে থাকেন।

যেহেতু মামলা গুলো ইয়াবা আইনে করা হয়েছে  এবং রাসায়নিক পরীক্ষায় ইয়াবার কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি উপরন্তু রাসায়নিক পরীক্ষায় যে উপাদান পাওয়া গেছে তা উৎপাদনে কোনো বিধি-নিষেধ  আরোপ করেনি সরকার ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!