• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘লাশগুলোর সঙ্গে সঙ্গমে মেতে উঠি বৃষ্টিস্নাত রাতে’


নিউজ ডেস্ক এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৬:১৫ পিএম
‘লাশগুলোর সঙ্গে সঙ্গমে মেতে উঠি বৃষ্টিস্নাত রাতে’

ঢাকা : ছোট্ট বেলার কথা, সেই ক্লাশ এইটে থাকতে একজনের সঙ্গে প্রেম হয়েছিল আমার। আমাদের সেই সম্পর্ক মাস্টার্স পর্যন্ত ছিল। এলাকাজুড়ে চেনা অচেনা প্রায় সব মানুষের কাছেই আমরা ছিলাম ‘আদর্শ জুটি’। চলার মাঝে হঠাৎ পারিবারিক সমস্যার জের ধরে সে হুট করেই সে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। একটা বারও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনা।

ওই ঘটনা ঘটার প্রায় তিন মাস পরে আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয় তার। তখন সে বান্ধবীকে বলে,‘ওর (আমার) সামনে দাঁড়ানোর মুখ নেই আমার। ওকে কিভাবে নিজের বিয়ের কথা জানাই?’

ভাবতেই কষ্ট হয়, এতো বছরের প্রেম হারিয়ে কেন জানি আমার জীবন থেকেই প্রেম ভালোবাসা চিরতরে হারিয়ে গেল। কোনভাবেই অন্য কাউকে জীবনসাথী হিসেবে মানার জন্য প্রস্তুত হতে পারিনি। মানুষটাকে যদি ভালোই বাসতে না পারলাম তবে কি লাভ বিয়ে করে? এসব সাতপাঁচ ভেবে আমার আর বিয়ে করা হয়নি।

বর্তমানে একটি প্রাইভেট ফার্মে বেশ ভালো বেতনের চাকরি করি। সেই চাকরির সুবাদে নিজের একটা এপার্টমেন্ট হয়েছে, স্কুটিও হয়েছে। সংসার বলতে এখন কিছুই নেই আমার। আছে একলা ঘর, বারান্দা, আসবাব, কাজের বুয়া। এ দিয়েই কেটে যাচ্ছে একা জীবন।

তবে আমার এমন চলাফেরা দেখে সমাজের লোক আমাকে হেয়ালি করে জিজ্ঞাসা করে , ‘জৈবিক চাহিদা কিভাবে মিটাই?’ আবার কেউ তিরস্কার করে বলে, ‘অফিসের বসেরা আছেনা চাহিদা মেটাইতে? ফ্রিতে সার্ভিস পাইলে বরের কি দরকার?’

অবশ্য বসেরা মাঝে মাঝেই গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করে। বোন বলে মায়া দেখিয়ে কাছে এসে নোংরা স্পর্শ দেয়ার চেষ্টা করে। এইসব কিছু সামলে নিয়েই চলছে আমার অবিবাহিত জীবন। বুঝলাম, জৈবিক চাহিদাই এখনকার বিয়ের ভিত্তি কিন্তু ভালোবাসা মূল্যহীন। পাশাপাশি শুতে পারলেই ওটাকে স্বামী স্ত্রী বলে। ভালোবাসায় কি যায় আসে?

সম্পর্ক ছিন্ন আর মানুষের হেয়ালি কথাবার্তা শুনতে শুনতে এখন আমি অনেক কিছু করতে শিখেছি। আমার মদ খাওয়ার অভ্যাস ছিল না কিন্তু এখন সেটাও পারি। চুকচুক করে মদ খাবার কারণে সমাজের বিশ্রী মন্তব্য, লালসার চোখ সমস্ত ভুলে একটা সুন্দর আমেজের মাঝে থাকতে পারি। তাছাড়া মিনিবারের বাহারি মদ আমাকে অনেক ভালো সঙ্গ দেয়।

তবে আমার বিশেষ শখের মাঝে আছে ব্ল্যাকম্যাজিক। কাজটা আমি বেশ কয়েক বছরের সাধনায় এক তান্ত্রিকের কাছ থেকে শিখেছি। কাপড়ের পুতুল, সুঁই, কাফনের কাপড়, রঙ্গিন সূতা, কালো আলখাল্লা, মোমবাতি আরো কিছু জিনিস এই কাজে লাগে। মাঝে মাঝেই বাদুড়, মৃত প্রাণীর যকৃৎ, নাড়িভুড়ি যোগাড়ে কিছু অসুবিধায় পড়তে হয় আমাকে। আধো অন্ধকার রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে জিরো পাওয়ারের বাল্ব জ্বালিয়ে ওপাশের এপার্টমেন্ট এর প্রেমের দৃশ্য দেখা যায়। আমি নিরাসক্ত দৃষ্টিতে মাঝে মাঝে ঢুলুঢুলু লাল চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি।

বাসার পাশেই কবরস্থান। বৃষ্টি হলে সেখানে সমস্ত কবর একসাথে সাম্যবাদী ভঙ্গীতে ভিজতে থাকে। ধনী, গরীব, নারী, পুরুষ, হিজড়া একসঙ্গে সবাই ভিজে। আগে যখন বৃষ্টি হতো আমরা দুজন মুষলধারায় অসহায়ের মতো ভিজতাম। আর এখন বাইরে ঝুম বৃষ্টি হলে, কালো বিদ্যা দিয়ে পুরুষ লাশগুলো জ্যান্ত করে ফেলি। লাশগুলোর সঙ্গে সঙ্গমে মেতে উঠি বৃষ্টিস্নাত রাতে। কিন্তু পুরুষকে এখন চরম ঘৃণা করি আমি। পুরুষের নেশা এখন গ্লাসের মধ্যে বাহারি মদেই খুঁজি। এরপর গ্লাসের পর গ্লাস মদ খেয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাই।

গায়ে কোন কাপড় নেয়। আয়নার দিকে চোখ পরতেই খুব আনন্দময় লাগছিল নিজেকে। আবার অস্বস্তিও লাগছিলো। স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আবারো গ্লাসভর্তি মদ ঢেলে একটু একটু করে খাওয়া শুরু করি। আবেদনময়ী ভঙ্গিতে চুমুক দিয়ে খাই একেক গ্লাস মদ।

আগের থেকে এখন অনেক বেশি মুখ খারাপ হয়ে গেছে। রাগে চিৎকার করে বলে উঠি, শুয়োরের বাচ্চারা! বলবার সময় মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হতে থাকে আমার। শেষকালে কিনা কোথাকার কোন প্রেমিকের হাতে নিজের জীবনটাকে এভাবে সপে দিতে হলো। বারো বছরের প্রেম ছিল আমার, তার সঙ্গে বিয়ে করারও কথা ছিল!

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!