• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লাহোরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান লড়াই


ক্রীড়া প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৪, ২০২০, ০২:৫০ পিএম
লাহোরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান লড়াই

ঢাকা : বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশের পাকিস্তান সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টি লড়াই আজ শুক্রবার। বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর একপর্যায়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত তার সুরাহা হয়। তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ পাকিস্তান সফর করবে। প্রথম দফার সফরে টাইগাররা বুধবার রাতেই লাহোরে পৌঁছেছে। লাহোরের গাদ্দাফী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় আজ বেলা তিনটায় প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়াবে।

যারা বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে পাকিস্তান গেছেন, তারা সকলেই সদ্যসমাপ্ত বঙ্গবন্ধু বিপিএলে খেলেছেন। তাই তাদের মূল অনুশীলনটা হয়ে গেছে বিপিএলেই। তারপরও তিন দিনের ছোট্ট একটা প্রস্তুতি ক্যাম্পে অংশ নেন ডাক পাওয়া খেলোয়াড়রা। টি-টোয়েন্টি সিরিজের বাকি দুই ম্যাচও লাহোরে অনুষ্ঠিত হবে ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি।

বাংলাদেশ এবং সাবেক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এ পর্যন্ত ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পরস্পরের মোকাবেলা করেছে। তার মধ্যে পাকিস্তান ৮টিতে এবং বাংলাদেশ ২টিতে জয়লাভ করেছে। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রথম লড়াইয়ে পাকিস্তান ৩০ রানে জিতেছিল। এরপর পাকিস্তান একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ৪ উইকেটে, ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল করাচিতে ১০২ রানে, ২০১০ সালের ১ মে গ্রস আইসলেটে ২১ রানে, ২০১১ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় ৫০ রানে, ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পাল্লেকেলেতে ৮ উইকেটে. ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ ঢাকায় ৫০ রানে জয়লাভ করে। পরের দুটি ম্যাচে জয়ী হয় বাংলাদেশ। ঢাকায় ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল ৭ উইকেটে এবং একই ভেন্যুতে ২০১৬ সালের ২ মার্চ ৫ উইকেটে জয়লাভ করে বাংলাদেশ। দু’দলের সর্বশেষ ম্যাচে কলকাতায় পাকিস্তান ৫৫ রানে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়। শেষ দিন ম্যাচের দুটিতে বাংলাদেশ জয়লাভ করে। ফলে এটাই এক ধরনের প্রেরণা টাইগারদের জন্য।

সিরিজ জয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ঢাকা ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘যদি র্যাংকিংটা দেখেন তবে অবশ্য ভিন্ন কথা বলে। আমরা ৯ নম্বরে ওরা এক নম্বরে। তারা ধারাবাহিকভাবে ফর্মে আছে এই ফরম্যাটে। আমার কাছে মনে হয় যেভাবে আমরা ক্রিকেট খেলছি বিগত কয়েক সিরিজে, আমি খুব আশাবাদী আমরা ভালো করতে পারব।  ইনশাল্লাহ আমরা সিরিজ জেতারই চেষ্টা করব।’ দল নিয়েও স্বস্তির কথা জানালেন রিয়াদ, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে (দল নিয়ে) খুবই খুশি। এই মুহূর্তে যারা স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন সবাই খুবই ভালো পারফরম্যান্স করেছে এবারের বিপিএলে। ব্যাটসম্যানরা সবাই রান পেয়েছে। বোলাররা যারা ছিল সবাই উইকেট পেয়েছে। আমি সবকিছু নিয়ে খুবই আত্মবিশ্বাসী।

মুশফিকুর রহিম না থাকায় তামিমের পাশাপাশি রিয়াদকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। অধিনায়ক নিজেও সেটা জানেন। ফলে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বটা বেশি থাকবে বলে মনে করেন তিনি, ‘আমি এবং তামিম ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই অনুভব করি আমাদের দায়িত্ব একটু বেশিই থাকবে। বিশেষভাবে টপ অর্ডারে তামিমের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি ম্যাটার করে। ও খুব ছন্দে আছে, অনেক রান করেছে বিপিএলে। আমি ব্যক্তিতগতভাবে মনে করি যে, আমি যেন আমার দায়িত্বটা পালন করতে পারি। আমার যে দায়িত্ব থাকবে ব্যাটিং লাইনআপটকে গভীরে নিয়ে যাওয়া, আমি এই বিষয়টা করার চেষ্টা করব। আমার মনে হয় প্রতিটা খেলোয়াড়েরই দায়িত্ব থাকবে। অনেকেরই হয়তো ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে যেতে পারে। আমার ধারণা, তারা (ব্যাটসম্যানরা) এটা মানিয়ে নেবে।’

এদিকে বাংলাদেশ দল যতই ভালো প্রস্তুতি নিক না কেন, একটা বড় ধরনের খুত থেকেই যাচ্ছে। আর সেটা মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে। মুশফিক আগে থেকেই পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞার কারণে সফরে নেই। এই দুই তারকা খেলোয়াড়ের অভাব কীভাবে পূরণ হবে সেটাই ভাবনার বিষয়। তাছাড়া, সৌম্য সরকারকে দলে নিয়ে এবং মেহেদি হাসান মিরাজকে না নিয়ে নির্বাচকরা ভুল করেছেন বলেই মনে হচ্ছে। এই সফরে সুযোগ থাকছে না কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার। গতকাল বৃহস্পতিবার শুধু একটা দিনই অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ না থাকা এবং জাতীয় দলের পর্যাপ্ত অনুশীলনের সময় না পাওয়াতে দল চিন্তিত নয়। কারণ, সবেমাত্র বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি খেলার কারণে ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই।

২০০৮ সালে সর্বশেষ পাকিস্তান সফর করেছে বাংলাদেশ দল। দীর্ঘ ১১ বছর পর আবার তাদের মাটিতে খেলতে গেল মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বে। নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল এবার পাকিস্তান সফরে যাওয়া নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তা খতিয়ে দেখে বাংলাদেশ সরকার পাক সফরের সবুজ সংকেত দেয় স্বল্প সময়ের জন্য। এ কারণেই তিন ধাপে পাকিস্তান সফরে তিন সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। প্রথম ধাপ শেষে পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ দল। এরপর দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি খেলতে দ্বিতীয় দফায় ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান যাবে দল। তৃতীয় দফায় এপ্রিলে গিয়ে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের আগে একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে।

বাংলাদেশ প্রথম পাকিস্তান সফর করেছিল ২০০১ সালে। সে বছর একটি মাত্র টেস্ট খেলেছিল তারা স্বাগতিকদের বিপক্ষে। এরপর ২০০৩ সালে নিজেদের ইতিহাসের দীর্ঘতম সফর করে বাংলাদেশ পাকিস্তানেই। সেই সফরে ৩টি টেস্ট ও ৫টি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ-পাকিস্তান। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে আবার ৫টি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলতে পাকিস্তান যায় মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল।

এরপর গত ১২ বছরে আর এই দেশ সফরে যায়নি বাংলাদেশ। আসলে পরের এক দশকেরও বেশি সময় পাকিস্তান ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্যই এক ‘নিষিদ্ধভূমি’। ২০০৯ সালেই লাহোরে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ওপর ঘটে এক সন্ত্রাসী হামলা। আর এরপর থেকে এই দেশটিতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একরকম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই ছিল না।

পাকিস্তানে সর্বশেষ যে বাংলাদেশ দল সফর করেছিল, সেই দলের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার এখনো সক্রিয় আছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমও ছিলেন সেই ২০০৮ সালের দলে। কিন্তু তারা এখন টি-টোয়েন্টি সফরে যাওয়া দলে নেই। মাশরাফি এখন টি-টোয়েন্টি খেলেন না। সাকিবের এক বছরের নিষেধাজ্ঞা আর মুশফিকের সফর বয়কটের ফলে বর্তমান দলে পাকিস্তানে আগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে কেবল তামিম আর অধিনায়ক রিয়াদের।

বাংলাদেশ স্কোয়াড : মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন, হাসান মাহমুদ।

পাকিস্তান স্কোয়াড : বাবর আজম (অধিনায়ক), আহসান আলী, আম্মাদ বাট, হারিস রৌফ, ইফতেখার আহমেদ, ইমাদ ওয়াসিম, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হাফিজ, মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মুসা খান, শাদাব খান, শাহিন শাহ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক ও উসমান কাদির।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!