• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লেবাননে বাধ্য হয়ে দেহ ব্যবসায় জড়াচ্ছেন বাংলাদেশি নারীরা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মার্চ ৩, ২০১৯, ০৭:৩৯ পিএম
লেবাননে বাধ্য হয়ে দেহ ব্যবসায় জড়াচ্ছেন বাংলাদেশি নারীরা

ঢাকা : বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী ভিসায় লেবাননে আসা নারীকর্মীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। লেবাননে কতিপয় দালালদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট এবং এ সিন্ডিকেটের সদস্যরাই গৃহকর্মী ভিসায় লেবাননে আসা নারী কর্মীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অথবা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের লোভ-লালসা দেখিয়ে তাদের মালিকের কর্মস্থল থেকে ভাগিয়ে আনছেন।

সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ভাগ্য অন্বেষনে ছুটে আসা এসব নারী কর্মীদের নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালচক্র। কাজের কথা বলে প্রথম ধাপে বাংলাদেশ থেকে যেমন হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা, তেমনি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো কাজ না দিয়ে করাচ্ছেন অনৈতিক ব্যবসা।

প্রতারক চক্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে একদিকে এসব নারী কর্মীদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠছে, তেমনি লেবাননের শ্রমবাজারেও দেখা দিয়েছে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব।

সম্প্রতি লেবাননে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা, ভুক্তোভোগী নারী কর্মী এবং দেশটির গণমাধ্যমের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী ভিসায় লেবাননে আসা নারী কর্মীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই পেশায় জড়াচ্ছেন। লেবাননে আসা নারী কর্মীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে, অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের লোভ দেখিয়ে কর্মস্থল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর ঘটনাও ঘটছে।

এর বাইরে দেশটির বিভিন্ন থানায় লেবানিজদের দায়েরকৃত এমন হাজার হাজার অভিযোগ তো রয়েছেই।

লেবাননের বুরুজ হাম্মুদ, ছাবরা বাজার, নাভা, এন্তালিয়াস, জলদ্বীপ, হাইসিল্লোম, আলকুলা, রাবেয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এই সিন্ডিকেট নারী কর্মীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে নারীদের এনে অথবা লেবাননে থাকা অবৈধ নারী কর্মীদের দিয়ে ছোট ছোট রুম ভাড়া করে পতিতালয় তৈরি করছে এই সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, লেবাননে নারী কর্মীদের হত্যাসহ গুরুতর ঘটনাও ঘটছে এসব কারণে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে শাহীনা বেগম নামে এক নারী খুন হওয়ার অপরাধে ৪ বাংলাদেশি নারী কর্মী বর্তমানে দেশটিতে কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া গত বছরের ১১ নভেম্বর বৈরুতের হাজমিয়ে এলাকায় পরকীয়ার জেরে এক নারী তার স্বামীকে হত্যা করে। এরও আগে গত বছরের ২ এপ্রিল বৈরুতের আলবস্তা এলাকায় পরকীয়ার জেরে এক বাংলাদেশি তার স্ত্রীকে হত্যা করে। আর এসবের কারণ হিসেবে দেখা গেছে, নারী কর্মীদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে দ্বন্দ্ব-বিচ্ছেদ। এসব অপরাধের কারণে লেবাননে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে এক ধরনের বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর মতো লেবাননেও শুরু হয়েছে লিভ টু-গেদার। বহু নারী-পুরুষ প্রবাসীরা এখানে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একই সঙ্গে হরহামেশাই বসবাস করছে। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, মিসর, সুদান, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের পুরুষদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলছে এসব বাংলাদেশি নারী কর্মীরা। এসব কারণে বর্তমানে বাংলাদেশিদের প্রতি লেবানন সরকারের এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশি প্রবাসীদের আকামায় কোনো ধরনের সমস্যা পেলেই পুলিশ কোনো সুযোগ না দিয়েই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

সর্বশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি লেবাননের টিভি চ্যানেল ‘ও টিভি’তে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লেবাননের বুরুজ হাম্মুদ এলাকায় শাহনাজ নামে এক বাংলাদেশির রুমে একজন লেবানিজ খদ্দের ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রবেশ করেন এবং গোপন ক্যামেরা দিয়ে এসব অনৈতিক কাজের সম্পূর্ণ কথোপকথন ও ভিডিও করে মিডিয়ায় প্রচার করেন।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র থেকে জানা যায়, শাহনাজ নামে ওই বাংলাদেশি নারী একটি রুম ভাড়া নিয়ে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নারীকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বেলায় পতিতাবৃত্তির কাজ করতো। বিগত ১০ বছর আগে লেবাননে আসা শাহানাজ লেবানেন চলা সিন্ডিকেটের মূল হোতা বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ শাহানাজের বাসায় হানা দিলে সেখান থেকে তাসলিমা নামে এক নারীকে আটক করা গেলেও শাহনাজ পালিয়ে যায়।

লেবাননে দেহ ব্যবসায় জড়িত দু’জন নারী কর্মী বলেন, ‘আমরা চুক্তিভিত্তিক ভিসায় লেবাননে আসার পর এক শ্রেণীর দালালদের খপ্পরে পড়ি। এরপর আমরা পালিয়ে বাইরে চলে এসে অবৈধ হয়ে পড়ি। পরে কোনো উপায় না পেয়ে এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ি।

সীমা (ছদ্মনাম) নামে ওই দেহ ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘আমি কন্ট্রাক থেকে বাইরে পালিয়ে এসে যে ভুল করেছি, সেই ভুল যাতে অন্য কেউ না করে।’

এ বিষয়ে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার বলেন, ‘দূতাবাসের জনবল সংকট থাকায় এ বিষয়ে কিছুই করতে পারছি না। দূতাবাস যদি এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, তাহলে এখানকার স্থানীয় মিডিয়াতে ব্যাপারটি প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ও থাকে। সেখানে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার বিষয়টিও জড়িত’।

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশি নারীদের এসব কর্মকাণ্ড দেশের সুনামকে ক্ষুন্ন করছে, দেশের জন্য বদনাম বয়ে আনছে। তাই প্রবাসীদেরকে এ ধরণের কাজ থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে দূতাবাস বিভিন্নভাবে কাউন্সিলিং করে যাচ্ছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রায় দেড় লক্ষাধিক বাংলাদেশি লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অনেকে দুর্গম এলাকায় কাজ করেন। ফলে সকলের কাছে পৌঁছানো দূতাবাসের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এত বড় দায়িত্ব কেবল দূতাবাসের একার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়।’

লেবাননে বসবাসকারী সকল প্রবাসীদেরকে এ ধরণের অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

পশ্চিম এশিয়ার দেশ লেবানন ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন বর্ণের মানুষের বসবাস। পাহাড়-সাগর বেষ্টিত লেবাননে বহিরাগতই দেশের মূল চালিকাশক্তি। কাজের সন্ধানে ছুটে যাওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের ১ লাখ ৫০ হাজার মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। লেবাননে কাজ করতে আসা বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা তাই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতারণায় লিপ্ত হয়েছে শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। যাদের প্রতারণায় ইতিমধ্যে পা দিয়ে বহু নারী তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!