• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লোক নাট্যদলের নতুন নাটক ‘আমরা তিনজন’


বিনোদন প্রতিবেদক নভেম্বর ১২, ২০১৯, ০১:৫৪ পিএম
লোক নাট্যদলের নতুন নাটক ‘আমরা তিনজন’

ঢাকা : মঞ্চে আসছে লোক নাট্যদলের নতুন প্রযোজনা বুদ্ধদেব বসুর গল্প অবলম্বনে নাটক ‘আমরা তিনজন’। নির্দেশনা দিচ্ছেন নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। আগামী ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নাটকটির ষষ্ঠ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। লোক নাট্যদল এর আগেও বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম মৌলিক নাটক ‘তপস্বী ও তরঙ্গিনী’ মঞ্চে এনেছিল এবং প্রায় অর্ধশতাধিক প্রদর্শনী করেছে।

১৯২৭ সালের ঢাকার পুরানা পল্টন। বিকাশ, অসিত এবং হিতাংশু-তিন বন্ধু। দিনের বেশিরভাগ সময় তিন বন্ধু একসঙ্গে থাকে, যতটা এবং যতক্ষণ থাকা সম্ভব। তিন বন্ধু একে-অপরের প্রেমে পড়ে আবার তিনজনই একসঙ্গে অন্য একজনের প্রেমে পড়ে, নাম তার-অন্তরা, বাড়ির সবাই ডাকে তরু বলে, তবে তিন বন্ধুর কাছে মেয়েটির নাম হয়ে যায় ‘মোনালিসা’।

এক দিন কাকতালীয়ভাবে রাস্তায় তাদের সঙ্গে দেখা হয় মোনালিসা ও তার বাবা-মার। মোনালিসার বাবা দে সাহেব তাদের বাসায় আমন্ত্রণ জানায়। বৃষ্টিমুখর একটি দিনে তারা মোনালিসার বাড়ি যায় কিন্তু তার সঙ্গে তেমন কোনো কথা হয় না। এর মধ্যেই মোনালিসা টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, তিন বন্ধুর ভীষণ মন খারাপ। মোনালিসার বাবা-মা তাদের সহায়তা চাইলে দিনরাত প্রায় এক মাস পরিশ্রম করে তারা মোনালিসাকে সুস্থ করে তোলে। মেয়েটির সঙ্গে তাদের একটি আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়।

তারপর এক দিন মোনালিসা ভালো হলো এবং চলে যায় রাঁচি। ঠিকানা রাখেনি বলে তিন বন্ধুর খুবই মন খারাপ হয়। তবে যেদিন ওরা ফিরল, সেদিন স্টেশনে কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি আর লালচে মুখায়বয়বের মোনালিসাকে দেখে তিন বন্ধু মুগ্ধ হয়। ট্রেনের মধ্যে মোনালিসার সেকি গল্প, দেখতে দেখতে তিন বন্ধু চারজন হয়ে উঠল।

হঠাৎ এক দিন মোনালিসার মা তাদের ডেকে জানায় মোনালিসার বিয়ের সংবাদ। খবরটি শুনে তিন বন্ধু হতভম্ব হয়ে যায়। বিয়ের পর মোনালিসা চলে যায় কলকাতা। এক দিন হঠাৎ জানা গেল মোনালিসা ঢাকায় আসছে এবং সে অন্তঃসত্ত্বা। তিন বন্ধু মোনালিসাকে ঘিরে থাকে সবসময়। ও যাতে ভালো থাকে, কখনো মন খারাপ না করে, সেই চেষ্টাতেই দিন কাটে তিন বন্ধুর।

এক অমাবশ্যার রাতে প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকে মোনালিসা। মোনালিসার চাপা কান্না তিন বন্ধুর বুক বিদীর্ণ করে দেয়। শীতের রাতে, মাঠের মধ্যে, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, অদৃষ্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিন বন্ধু রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষা করতে থাকে।

ভোরের প্রথম ছাইরঙা আলোয় ওরা দেখতে পায় দে সাহেবের বেদনার্ত নির্বাক মুখ। রাশি রাশি ফুল আরো কত কিছু দিয়ে সাজানো হলো মোনালিসার শবদেহ। তারপর মোনালিসার অন্তিম যাত্রা।

প্রসঙ্গক্রমে নির্দেশক বলেন, যখন যে কাজটি করি, মনে হয় এটিই আমার প্রিয় কাজ, অনেক ভালোবাসার, অনেক আদরের। ‘আমরা তিনজন’ নাটকের বেলাও তাই হয়েছে। সময়ের ফাঁকে ফাঁকে গল্পটা নিয়ে স্বপ্ন দেখি, কল্পনার রাজ্যে করি বিচরণ।

গত বছরের স্বপ্নের কাজ প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’, এ বছর ‘আমরা তিনজন’ গল্পটি পড়ার পর থেকেই নাটক করার ভাবনা আমাকে তাড়িত করে। অন্য দুটি নাটক ভাবনায় থাকলেও মাথা থেকে সরিয়ে দেয় ‘আমরা তিনজন’। গল্পটা বারবার পড়ি আর রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে তার আবহ তৈরি হয়ে যায়। নাটকের ক্যানভাসে প্রবেশ করার দারুণ বাসনা অনুভব করি।

নির্মিত হয়ে যায় একটি চরিত্র, অভিনেতা হিসেবেও যুক্ত হয়ে যাই। ষাটের দশকের ঢাকার স্মৃতি আমায় প্রাণিত করে। অন্যরকম প্রেমানুভূতিতে আবিষ্ট হই। বুদ্ধদেব বসুর মতো জিনিয়াসের সান্নিধ্য অনুভূত হয়। সঙ্গে পাই প্রিয় ঋতু বর্ষার স্মৃতি। রবীন্দ্রনাথ সাহস দেয়। নির্মিত হয়ে যায় দৃশ্যকাব্য ‘আমরা তিনজন’।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!