• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লোভের আগুন আমাজনে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক আগস্ট ২৫, ২০১৯, ১২:৩৭ পিএম
লোভের আগুন আমাজনে

ঢাকা : প্রতিবছরই কমবেশি দাবানল লাগে আমাজনের অরণ্যে। আমাজনে মাস খানেক ধরে চলতে থাকা একটানা অগ্নিকাণ্ডের পরে এমনটাই জানা গেছে। তবে অন্যবারের দাবানলের চেয়ে এবারের দাবানল অনেকটাই আলাদা। প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা অরণ্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতেই আলোচনায় উঠে এসেছে এই অরণ্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হয়েছে হ্যাশট্যাগ ‘প্রে ফর আমাজন’।

পরিবেশবিজ্ঞানীদের অভিযোগ ছিল, লাভের আশায় কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে ইচ্ছে করে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে আমাজনের রেইনফরেস্ট। যা পৃথিবীর মোট চাহিদার ২০ শতাংশ অক্সিজেনের জোগান দেয়, যাকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। তবে এমন অভিযোগের কোনো প্রমাণ ছিল না পরিবেশবিজ্ঞানীদের কাছে।

এই দাবানল যে প্রাকৃতিক নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো তার পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার স্যাটেলাইটের পাঠানো ছবি খুঁটিয়ে দেখে পরিবেশবিজ্ঞানীরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন এই দাবানল শুধুই প্রাকৃতিক নয়। মানুষের মাধ্যমে ছাড়া এত বড় ধরনের দাবানল একেবারেই অসম্ভব।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, বলিভিয়ার সুপার ট্যাঙ্কার আগুন নেভাতে শুরু করার পরে আগুন অনেকটা স্তিমিত হলেও, এখনো অন্তত আড়াই হাজারটি ‘পকেট ফায়ার’ রয়েছে পুরো অরণ্যে।

অর্থাৎ এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি, জ্বলছে ধিকধিক করে। যা নিয়ে চিন্তিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও। আসন্ন জি-৭ সামিটে এই আমাজন-বিপর্যয় প্রসঙ্গে জরুরি আলোচনার প্রস্তাব রেখেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল।

পরিবেশবিজ্ঞানীদের দাবি, চাষযোগ্য জমি তৈরির জন্য এবং খনিজ সম্পদের লোভে নির্বিচারে গাছ নষ্ট করার জন্য আগুন লাগানো হয়েছে। তাতেই হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর ফুসফুস।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৩ সালেও এমনই সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল আমাজনের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায়। সে সময় ব্রাজিলের মাতো গ্রোসো এলাকা ছেয়ে গিয়েছিল প্রবল দূষণ ও কালো ধোঁয়ায়। এবারও একই ঘটনা ঘটেছে আমাজন থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের শহর সাও পাওলোতে।

২০০৩ সালের সেই বিপর্যয়ের স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গিয়েছিল জঙ্গলের গাছ কেটে, শুকনো করে, পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতেই দাবানলের তৈরি হয়। তবে সেবার বড় কোনো ক্ষতির আগেই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল আগুন।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাজন একটি রেইনফরেস্ট। বৃষ্টির কারণে এই অরণ্য চিরসবুজ থাকে। সারা বছরই বনটি বৃষ্টিতে সিক্ত থাকে। সূর্যের আলো প্রায় ঢোকেই না এ অরণ্যে। আর এখানেই বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন। এমন সিক্ত ও সবুজ অঞ্চল, এত বিস্তীর্ণভাবে কী করে দাবানলের শিকার হয়?

যদিও জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আমাজনের আবহাওয়া একটু শুষ্ক থাকে। তাই সহজে আগুন নেভে না। প্রতি বছরই কমবেশি দাবানল কবলে পড়তে হয় আমাজনকে। তবে এবারের স্যাটেলাইট ছবি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সেই যুক্তি মানতে নারাজ পরিবেশবিদরা।

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, দগ্ধ অরণ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের জঙ্গল কেটে সাফ করে মাটির চিত্রই বদলে ফেলা হয়েছে। ভেজা ঘাসে ভরে থাকা জমি একেবারে ফাঁকা ও শুকনো হয়ে গেছে।

স্যাটেলাইট ছবিতে আরো ধরা পড়েছে, এসব করতে গিয়ে অরণ্যের গভীরে ট্রাক্টরও ব্যবহার করা হয়েছে। উপড়ে ফেলে শুকানো হচ্ছে আমাজনের মাটি। ফলে আলগা হচ্ছে গাছের শিকড়, তাতেই মরে যাচ্ছে অনেক গাছ। আর তাতে সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে যাচ্ছে এই চিরসবুজ এই অরণ্য থেকে।

আমাজনের এই পরিস্থিতির জন্য ইতোমধ্যেই দায়ী করা হয়েছে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোকে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেআইনি জমিনীতি গ্রহণ করেছেন। এই নীতিতে আমাজনের জঙ্গলের জমিতে কৃষিকাজ বা খননের কড়াকড়ি অনেকটাই কমে গেছে। সেই কারণে জমি ও খনি মাফিয়ারা এই জঙ্গলকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের।

এদিকে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিশ্বে গরুর মাংসের চাহিদা বেড়ে যাওয়াটাও আমাজনে আগুন লাগানোর অন্যতম কারণ।

তথ্যমতে, বিশ্বে গরুর মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ব্রাজিল। মার্কিন কৃষি দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৈশ্বিক রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ আসে ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটি থেকে। সামনের বছরগুলোতে এই পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হয়।
ব্রাজিলের আমাজন বনাঞ্চলে যে আগুন জ্বলছে তার বেশির ভাগই লাগাচ্ছে কাঠুরে ও পশুপালকেরা। গবাদিপশুর চারণভূমি পরিষ্কার করতে এসব আগুন লাগানো হচ্ছে বলে পরিবশেবিদরা দাবি করছেন। আর এতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন দেশটির বাণিজ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো।

ব্রাজিলের গরুর মাংস উৎপাদনকারী কৃষকদের কাছে এটা স্বাভাবিক বাণিজ্য হলেও বাকি বিশ্ব এটাকে আতঙ্ক হিসেবে দেখছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাজন বনাঞ্চলে আগুন লাগানোর ঘটনায় ব্রাজিল সরকার চুপ থাকায় দেশটি থেকে গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ।

তবে কারণ যেটাই হোক আমাজন কিন্ত আগুনে জ্বলছেই। যত দিন যাচ্ছে, ততই মরে যাচ্ছে গাছ। শিকড় আলগা হয়ে গিয়ে শুকিয়ে যাওয়া গাছেদের মধ্যে আগুন বেড়ে চলেছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মাইলের পর মাইল সবুজ। জঙ্গলের ছাদে ঘিরে থাকা ঘন গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেসব ছবি। এতে পরিবেশবিজ্ঞানীরা আতঙ্কিত। আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!