• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শত মিনতি করেও বাঁচতে পারলেন না বৃদ্ধ! (ভিডিও)


খুলনা প্রতিনিধি এপ্রিল ৫, ২০১৮, ০৯:৩৭ পিএম
শত মিনতি করেও বাঁচতে পারলেন না বৃদ্ধ! (ভিডিও)

ঢাকা: মেয়ের বয়সী নারীর পা ধরে আছেন, এদিকে বৃষ্টিরমত লাথি পড়ছে তার মাথা ও পিঠে! বার বার নিজেকে নির্দোষও দাবি করছেন। কিন্তু, কেউ যেন তার কথা শুনতে পারছেন না, কারো মনে বাবা বয়সী বৃদ্ধ মো. গোলাম আলী শেখ পেয়াদার (৫৫) জন্য এতটুকুও মায়া জন্মেনি। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে তাকে বুঝাতে হলো যে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন একজন নির্দোষ। 

ঘটনাটি ঘটেছে, খুলনার ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়নের পঠিয়াবান্দা গ্রামে। এরপর থেকেই গত ২৫ মার্চ সকাল ১০টার দিকে ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, বৃদ্ধ গোলাম আলী শেখ পেয়াদা ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক নারীর পা ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন, কিন্তু ওই নারী তাকে একের পর এক লাথি মারছেন। বোধহয় তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তখনো গোলাম আলী তার পা ছাড়েন নি এদিকে চার পর থেকে বিভিন্ন জন তার পিঠ ও মাথায় লাথি মারছেন। এক পর্যায়ে তাকে গাছের সঙ্গে উল্টো করে ঝুঁলিয়েও পেটানো হয়। এলাকাবাসী জানান, এতকিছু ঘটেছে গরু চোর সন্দেহে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত গোলাম আলী শেখ পেয়াদার বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের মধুগ্রামে। এ গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে তিনি। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৭ জনের নাম উল্লেখ ও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফুলতলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী জবেদা বেগম।

রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মোস্তফা কামাল খোকন বলেন, ‘মো. গোলাম আলী পেয়াদা গত ১৫ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছেন। ২০১৭ সালে তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম ফরিদুজ্জামানের অধীনে চিকিৎসাধীন দেয়া হয়।’

নিহত গোলাম আলীর নিকট আত্মীয় ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নের মধুগ্রামের জিএম আমানউল্লাহ জানান, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২৫ মার্চ সকালে বাড়ির পাশের একটি বিলে দড়ি দিয়ে একটি গরু বেঁধে রাখেন পঠিয়াবান্দা গ্রামের আ. লতিফ বিশ্বাস। এ সময় মানসিক ভারসাম্যহীন গোলাম আলী পেয়াদা ওই গরুর কাছে যান এবং দড়ি ধরে টানাটানি করেন। বিষয়টি দূর থেকে দেখে ফেলেন লতিফের স্ত্রী আয়শা বেগম। এরপর চোর চোর বলে তিনি চিৎকার শুরু করেন।

জিএম আমানউল্লাহ বলেন, আয়শা বেগমের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে জড়ো হন এবং পেয়াদাকে ধরে নির্মমভাবে মারধর করেন। ছেড়ে দেওয়ার জন্য পায়ে লুটিয়ে পড়ার পরও তাকে গাছের সঙ্গে উল্টো করে বাঁধা হয়। একইসঙ্গে চলে কাঠের বর্গা ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর। এক পর্যায়ে বিড় বিড় করে পানি চাইতে চাইতে নেতিয়ে পড়েন গোলাম আলী শেখ পেয়াদা।

গোলাম আলী পেয়াদার স্ত্রী জবেদা বেগম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি। এ নিয়ে মামলা করেছেন। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান মুন্সি জানান, তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। ইতোমধ্যে ছয় জনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। 

বুধবার (৪ এপ্রিল) এ মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে। এর তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক বাবর আলী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!