• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শবে বরাতের রাতে যেসব ইবাদত করবেন


নিউজ ডেস্ক মে ১১, ২০১৭, ০৭:৫৩ পিএম
শবে বরাতের রাতে যেসব ইবাদত করবেন

ঢাকা: শবে বরাত শব্দটি ফারসি। শব অর্থ হলো রাত বা রজনী; আর বরাত মানে ভাগ্য। শবে বরাত মানে ভাগ্য রজনী। আবার আরবিতে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত। লাইলাতুন অর্থ হলো রাত আর বারাআতুন অর্থ হলো মুক্তি। একত্রে অর্থ হলো মুক্তির রাত।

শবে বরাত বলতে ইসলামে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে বুঝায়। হাদিসে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলে উল্লেখ হয়েছে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে নিজ গৃহে ইবাদত-বন্দেগিতে রাত কাটিয়েছেন। যদিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাসগৃহ আর মসজিদে নববি এক সঙ্গেই ছিল। তথাপিও তিনি নিজ গৃহে নফল ইবাদাত-বন্দেগি করেছেন।

হাদিসে এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিক নির্দেশনা রয়েছে।এ রাতে আল্লাহ তাআআ মুশরিক এবং বিদ্বেষী ব্যতিত সব অপরাধীকে ক্ষমা করে দেন। হজরত মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান)

আজকাল শবে বরাতকে ঘিরে কিছু কুসংস্কারমূলক প্রথা প্রচলিত রয়েছে আমাদের সমাজে; যেমন আতশবাজি ও পটকাবাজি করা, হালুয়া-রুটির আয়োজনকে বাধ্যতামূলক ভাবা, মসজিদে আলোকসজ্জা করা, আনন্দ-উল্লাস করে হালুয়া-মিষ্টি বিতরণ করা, বাড়ি বাড়ি খিচুড়ি বন্টন করা, কবরস্থানে পুষ্প অর্পণ করা।  এসব থেকে বিরত থাকা চাই। কারণ কুরআনও হাদিসের কোথাও এগুলির বৈধতা নেই। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, যখন শাবানের মধ্যবর্তী রাত আসে, তখন তোমরা রাত জেগে নামাজ, তসবিহ, দরুদসহ অন্যান্য ইবাদতবন্দেগিতে মগ্ন থাকো। সঙ্গে পরের দিন রোজা রাখো। (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

শবে বরাতের পূর্ণ ফজিলত ও সে রাতে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য এসব কবিরা গোনাহ থেকে খাঁটি দিলে তওবা করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক।

শা’বানের এক তারিখ থেকে সাতাইশ তারিখ পর্যন্ত রোযা রাখার বিশেষ ফযীলতের কথা হাদীস শরীফে আছে। তাছাড়া আইয়ামে বীয তথা প্রতি মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রোযা রাখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেই সাথে যয়ীফ সনদে বর্ণিত একটি হাদীসে বিশেষভাবে পনেরো তারিখের রোযা রাখার নির্দেশনাও পাওয়া যায়।

হাদিসে আছে, ‘পনেরো শা’বানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং পরদিন রোযা রাখ।’ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৩৮৪

শাবানের ১৫ তারিখের রাতের বিষয়ে আরেকটি ভিত্তিহীন কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত আছে। সেটি শবে বরাতের রাতের গোসল কেন্দ্রিক। এই রাতে ইবাদতের উদ্দেশে যদি কেউ গোসল করে তাহলে তার গোসলের প্রতি ফোটার বিনিময়ে গুনাহ মাফ হবে। আবার কেউ কেউ কথাটি এভাবে বলে যে, প্রতি ফোটায় ৭০ রাকাত নফল নামাযের সওয়াব হবে।

যেভাবেই বলা হোক না কেন  এটি একটি জাল বর্ণনা বা ভিত্তিহীন কথা ,কুরআন হাদীসে যার কোন প্রমাণ নেই। এ রাতে শুধু নফল ইবাদাত করতে বলা হয়েছে। কুরআন তেলাওয়াত , যিকির-আযকার , সালাতুত তাসবীহ ,দুরুদ পাঠ ইত্যাদি নফল ইবাদাতের মাধ্যমে এই মহিমান্বিত রজনী অতিবাহিত করতে হবে। আমাদেরকে  এ ধরনের জাল বর্ণনা ও ভিত্তিহীন কথা ও কাজ  থেকে বিরত থাকতে হবে  এবং ফযীলতের প্রতিটি বিষয়কে তার গন্ডির মধ্যে রেখে তাকে কাজে লাগাতে হবে।
এটি হাদীস নয় : ‘শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বানালে আরশের নিচে ছায়া পাবে’

শাবানের পনের তারিখের রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩৮৩৩)

এ রাতের যতটুকু ফযীলত প্রমাণিত আছে শুধু ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। রসম-রেওয়াযের পিছে পড়ে এর মূল ফযীলত থেকে বঞ্চিত হওয়া ঠিক নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Wordbridge School
Link copied!