• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শবেবরাত : করণীয় ও বর্জনীয়


জহিরুল ইসলাম আবদুল্লাহ এপ্রিল ১৯, ২০১৯, ০২:৫৬ পিএম
শবেবরাত : করণীয় ও বর্জনীয়

ঢাকা : মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলপ্রেমী মুমিন ব্যক্তির জন্য প্রতিটি রাতই শবেবরাত। সময়ের প্রতিটি মুহূর্তই তার কাছে মূল্যবান। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রতিদিন ভোরবেলা দুজন ফেরেশতা ডেকে বলেন, হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন। আমি তোমার কাজের সাক্ষী। তুমি আমাকে কাজে লাগাও। কেননা কিয়ামত দিবসের আগে আমি আর ফিরে আসব না।’  হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহ প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে এসে ডেকে বলেন— কে আমার কাছে আবেদন করবে? আমি তার আবেদন কবুল করব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে? আমি তাকে দান করব। কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বুখারি, আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

‘শবেবরাত’ শব্দটি সরাসরি কোরআন-হাদিসে কোথাও উল্লেখ না থাকলেও হাদিসে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা মধ্য শাবানের রাত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ভারতীয় উপমহাদেশে শবেবরাত বলে পরিচিত। বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির মধ্য দিয়ে কেউ শবেবরাতের ফজিলতকে অস্বীকার করছে, আবার কেউ শবেবরাতকে বিভিন্ন বিদআতি আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন করছে। হাদিস শরিফে এ মাসের, বিশেষ করে ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের অনেক ফজিলত বর্ণিত রয়েছে। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রমজান মাসের পর কোন মাসের রোজা সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ? তিনি বলেন, ‘রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসের রোজা।’ (তিরমিজি) হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও অহংকারী ছাড়া সবাইকে মাফ করে দেন। (ইবনে মাজা : ১/৪৪৫)

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রজনী আসে, তখন তোমরা রাতে দণ্ডায়মান থাক এবং দিনে রোজা পালন কর। কারণ ওই দিন সূর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন, শোন! আছে কি কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কি কেউ রিজিক প্রার্থনাকারী ? আমি তাকে রিজিক দান করব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। এভাবে সুবেহ সাদেক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি মহানবী (সা.)-কে বিছানায় পেলাম না। আমি তাঁর খুঁজে বের হয়ে গিয়ে তাঁকে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে পেলাম। আমি তাড়াহুড়া করে বাসায় পৌঁছাই। যার কারণে হাঁপাতে থাকি। এতদসময়ে মহানবী (সা.) হাঁপানোর কারণ জিজ্ঞাসা করলে আমি লজ্জাবনত স্বরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনাকে সন্দেহ করেছি যে, আপনি অন্য বিবিদের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু আপনার পেছন থেকে দেখলাম আপনি জান্নাতুল বাকীতে অবস্থান করছেন। তাই আপনার দেখার আগেই আমি দ্রুত বাসায় এলাম। মহানবী (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বনু কলব গোত্রের মেষপালের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশিসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করেন।’ (সুনানে তিরমিজি : ২/১২১, ১২২), (মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩৮)

উল্লিখিত হাদিস দ্বারা শবেবরাতের ফজিলত প্রমাণিত হলেও সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এসব ইবাদত নফল আমলের পর্যায়ভুক্ত।

ইবাদত হিসেবে এ রাতে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, নফল নামাজ, দোয়া ও তওবা ইস্তেগফার করা যায়। তবে তা হবে ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত নয়। দলবদ্ধভাবে মসজিদে গমন করা, ফজিলত মনে করে নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়ে বিশেষ নামাজ আদায় করা, আতশবাজি করা, বাসাবাড়ি আলোকসজ্জা করা বিদআত ও পরিত্যাজ্য। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করবে যা তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ক্ষমার রজনী শবেবরাতে আল্লাহর ক্ষমার চাদরে সবাইকে আবৃত করার বিশেষ ঘোষণা থাকলেও যেসব ব্যক্তির দোয়া তওবা না করা পর্যন্ত কবুল করা হয় না তারা হলো : মুশরিক, হিংসুক, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, ব্যভিচারী, মদ্যপানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্যতাকারী এবং টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী।

তাই শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত ও শবেবরাতের রাতে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য আমাদের কাজ হলো সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং খাঁটি দিলে তওবা করা।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

 

Wordbridge School
Link copied!