• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে সমাহিত হলেন চিত্রগ্রাহক আনু


বিনোদন প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৩, ২০১৮, ০৫:৩৯ পিএম
শহীদ বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে সমাহিত হলেন চিত্রগ্রাহক আনু

ঢাকা: মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে পাঁচবার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন আনুর।

সোমবার বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা শেষে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানে দুপুর তিনটায় আনোয়ার হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার হোসেন আনুর পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, নাট্যজনসহ বিভিন্ন সিনে-ফটোগ্রাফি সোসাইটির সংগঠক।

এরআগে স্থপতি, আলোকচিত্রী ও সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেনকে জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নিয়ে আসা হয় সকাল ১১টায়। এরপর পৌনে ১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের জন্য তাকে সেখানে রাখা হয়। শহীদ মিনার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রাঙ্গণে নেয়ার আগে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয় এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।

বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনে ফ্রান্স থেকে সোমবার সকালে বাংলাদেশে এসে পৌঁছান আনোয়ার হোসেনের দুই ছেলে মেঘদূত ও আকাশ
তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে তার দুই ছেলে আকাশ ও মেঘদূত ছাড়া উপস্থিত ছিলেন তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। অন্তিম যাত্রার প্রাক্কালে শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, গোলাম কুদ্দুস, ফটোগ্রাফার শহীদুল আলম, নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী, নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের, চিত্রগ্রাহক নাসির আলী মামুন, নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড.মুহাম্মদ সামাদ, সংগঠক বেলায়েত হোসেন মামুনসহ চলচ্চিত্র, সিনেমাটোগ্রাফি, ফটোগ্রাফির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সদস্য ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষি।

ছাত্র জীবনেই আলোকচিত্রী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। স্বচ্ছ্বল পরিবারে জন্ম না হলেও শুধু ইচ্ছের জোড়ে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফিতে মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ ফটোগ্রাফার হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। একই বছরে জাপানে অনুষ্ঠিত আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রশিল্পীর স্বর্ণপদক অর্জন করেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ক্যামেরা কাঁধে যোগদান করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। তার তোলা বেশকিছু আলোকচিত্র আজও পাকিস্তানিদের নির্মমতার স্বাক্ষী বহন করে চলে।

ফটোগ্রাফার হিসেবে খ্যাতি থাকলেও ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’র মধ্য দিয়ে সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবেও নিজের মেধার পরিচয় দেন আনোয়ার হোসেন। শেখ নেয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকেরের যৌথ পরিচালনায় এই ছবিটি তৎকালীন সময়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলে। এই ছবির জন্যই আনোয়ার হোসেন প্রথমবার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

বাংলাদেশে এ যাবৎ যে চলচ্চিত্রগুলো স্মরণীয় হয়ে আছে তার সিংহভাগ ছিলো আনোয়ার হোসেনের চিত্রগ্রহন। এরমধ্যে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’,‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’,‘পুরস্কার’, ‘অন্য জীবন’, ‘দহন’, ‘হুলিয়া’, ‘চাকা’, ‘চিত্রানদীর পাড়ে’,‘লালসালু’, ‘লালন’ এবং‘শ্যামল ছায় ‘ অন্যতম।

১ ডিসেম্বর শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেল কক্ষে মৃত্যু হয় আনোয়ার হোসেন এর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে ডলি ইব্রাহিমকে বিয়ে করেছিলেন ৫ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন। ১৯৯১ সালে ডলির মৃত্যুর পর নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন তিনি। সেখানে মিরিয়ামকে বিয়ে করে সেখানকার নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছিলেন। তবে মাঝেমধ্যেই চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশ নিতে দেশে চলে আসতেন আনোয়ার হোসেন। এবারও একটি ফটোগ্রাফির ওয়ার্কশপের জুরি হিসেবে দেশে আসেন আনোয়ার। কিন্তু এবার আর প্যারিসে ফেরা হলো না তার।


সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!