• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তির দ্বীপ বালি ভ্রমণ (পর্ব-১)


মুহাম্মদ সেলিম হক ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০১:৫৭ পিএম
শান্তির দ্বীপ বালি ভ্রমণ (পর্ব-১)

ঢাকা : মানুষের মনকে সতেজ করে তুলতে ভ্রমণের চেয়ে ভালো ঔষধ আর হতে পারে না। এটি আপনাকে যেমন কাজ থেকে ছুটি দেয়। তেমনি আপনাকে নিজের মাঝে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। দীর্ঘ সময়ের কাজের চাপ, স্ট্রেস আর নানা ঝামেলা থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে এই ভ্রমণ।

এই ভ্রমণে যেতে যেতে মানুষ তার ঝুঁলিতে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ভিন্ন দেশে কাটানো মজার স্মৃতি ও কিছু মুহুর্ত জমা করে রাখেন। তেমনি এক দেশ ঘুরে গল্প নিয়ে পাঠকের কাছে হাজির হলাম। যার শিরোনাম রাখলাম ‘শান্তির দ্বীপ বালি ভ্রমণ’...।

বালি ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রদেশ। প্রকৃতি আর মানুষের সমন্বয়ে কি অসাধারণ সাঁজগোজ। দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণে যাওয়া আমার একটা অদ্ভুত শখ। পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর আর থাইল্যান্ড ভ্রমণের পর দারুচিনি দ্বীপ ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার ইচ্ছা জাগলো প্রবল।

শৈশবে পাঠ্য বই এ পড়েছিলাম দারুচিনি দ্বীপের গল্প। সেই থেকে মনে লুকায়িত ছিলো ভাবনাটি। তাই ইন্দোনেশিয়ার পথে এবারের যাত্রা আমার। আর সফর সঙ্গী ছিলেন প্রিয় সমীর বাবু। ভ্রমণের জন্য সমীর বাবু একজন পারফেক্ট অভিজ্ঞ লোক। তার সাথে নেপাল ভ্রমণ করে বুঝেছি সেটা। ওনার প্রতি আমার আস্তা বাড়ায় আবারো তার সাথে ভ্রমণে জুটি হলাম।

ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করতে চাইলে আপনাকে আগে বিমানের টিকেট বুকিং দিতে হবে। তাহলে আপনি কম দামে পাবেন। নয়তো বাড়তি টাকা গুনতে হবে। একমাস আগে বুকিং দিলে ২৫ হাজার থেকে ২৯ হাজার টাকার মধ্যে মিলবে হয়তো বিমান টিকেট। তাৎক্ষনিক টিকেট কাটলে গুনতে হবে ৪০ হাজার মতো বাংলা টাকা।

আমরা অবশ্যই ২০ দিন আগে টিকেট করেছিলাম বলে কম দামে পেলাম। ইন্দোনেশিয়ার সরাসরি ফ্লাইট নেই।  ট্রানজিট কানেকশন ভ্রমনেই ভরসা পর্যটকদের। কয়েকটি ফ্লাইট যায় বলে শুনেছি। তবে ‘মালিন্দা এয়ার’ কম দামে ভালো লেগেছে আমাদের। যাত্রীদের খাবারের ও ব্যবস্থা করে থাকেন এয়ার বাসটি।

ট্রাভেলার্স বিডি নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ২৫ জানুয়ারী রওয়ানা হলাম পৃথিবী শেষ স্বর্গীয় উদ্যোনে। ইন্দোনেশিয়া অন অ্যারাভাইল ভিসা দেয় বাংলাদেশী টুরিস্টদের। সে সুবাদে আমাদের যাওয়ার আগ্রহটা বাড়লো। ফ্লাইট ডিলে হওয়ার কারণে আমাদের বালিতে পৌঁছতে ৮ ঘন্টা দেরি হয়ে যায়। সেখানকার রাত ৯টায় ‘বালির গুষ্টি মরা রায়’ এয়ারপোর্ট পৌঁছলাম। নামটা অদ্ভুত। তবে বিমানবন্দরটা গুছালো ছিল।

প্রথমে শুনে কেমন জানি ভ্যাবা ছ্যাকা খেলাম। পরে জানলাম এটা বালির একজন জাতীয় বীরের নাম। যার নাম অনুসারে বিমান বন্দরটির নামকরণ করা হয়। রাতে বিমানের জানালা দিয়ে সাগরের সাথে শহরের অপ‚র্ব দৃশ্য দেখলাম। যেন আলোকিত এক রংমহলের উপর দিয়ে যাচ্ছি বেলায় ভেসে।

বিমান হতে নেমে ভেতরে প্রবেশ করতেই কিন্ত ইমিগ্রেশনে আমাদের আটকে দিলো। প্রবেশেই হোঁছট খেলাম। একটি মহিলা পুলিশ বললো আমাদের’কে আলাদা রুমে যেতে হবে। অপরদিকে দেখলাম সবাইকে ইমিগ্রেশনে ভিসার সিল দিচ্ছে। রুমের বাইরে বসলাম। সাথে দেখলাম একজন ইরাকি টুরিস্টকেও আমাদের মতো আটকে দিলো। পাশে থাকা সমীর বাবু দেখি একটু নার্ভাসনেস ফিল করছে। যদি দেশে ব্যাক করে দেয় এই চিন্তায় মনেহয় তার কপালে ইতিমধ্যে ভাঁজ পড়েছে।

কয়েক মিনিট পর আমাদের ডাক পড়লো। সোফাসেটে বসলাম। একজন মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা এসেই সামনে সামনি প্রশ্ন। পাঁচ মিনিটের জেরা! আমরা কি করি দেশে? ব্যবসা বলাতে ভিজিটিং কার্ড চাইলো। আহারে আমার তো তা নেই। তবে সফর সঙ্গী সমীর বাবু’র ছিল। এটাই মনেহয় কাজ দিয়েছে ধারণা।

তারপর ভিতর থেকে সেই মহিলা পুলিশ এসেই পাসপোর্ট দুটো ধরিয়ে দিলো। শেষে আমি প্রশ্ন করলাম আসলে সমস্যা কি ছিল? মহিলাটা হেঁসে বললো বাংলাদেশীরা বালি প্রবেশ করে মালয়েশিয়া চলে যায়। যেন একটা স্বস্তির হাসি দিলো সমীর বাবু আর বলল আমরা তাদের মতো নয়। অথচ আটকে দেওয়ার সময় বিপর্দস্ত আর নীরব ছিলেন।

এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে হালকা বাতাস আর গরম অনুভব করলাম। আমাদের দেশ হতে কিছুটা ভিন্ন পরিবেশ। শত শত লোক দাঁিড়য়ে রয়েছে। প্লেকার্ডে লেখা টুরিস্টেদের নাম। কয়েক মিনিট খুঁজলাম আমার নাম। হোটেল থেকে পাঠানো হয়নি গাড়ি।

হয়তো ফ্লাইট ডিলে হওয়াতে এ বেকায়দায় পড়লাম। মনকে এটাই শান্ত¦না দিয়ে নজর বাড়ালাম চারদিকে। দেশ থেকে হোটেল বুকিং ছিল হোটেল ইডেন থ্রী স্টার। তারকা মানের থাকা হোটেল। ভাড়া পড়েছে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা মতো। তবে আড়াই হাজার টাকাতে ও থাকার ভালো হোটেল পাওয়া যায়।

বালিতে কয়েকটি বীচ রয়েছে। তবে টুরিস্ট বেশী থাকে কুটাবিচ এ। এ জায়গা থেকে সহজে সব জায়গায় যাতায়াত করা যায়। এয়ারপোর্ট থেকে ৫০ ডলার পরির্বতন করলাম। বেশি করলাম না কারণ রেট কম। পেলাম ৬ লাখ ৬০ হাজার রুপিয়া (ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রা)। মুদ্রাস্ফীতির কারণে ইন্দোনেশিয়ার টাকার মান আমাদের তুলনায় কম।

আমাদের এক টাকা এদের ১৬৩ রুপিয়ার মতো। বের হতেই ঘিরে ধরলো  ড্রাইবারেরা। হাজার হলেও বাঙ্গালী আমরা দরদাম না জেনেও কৌশলে ভাড়া জেনে নিতে দেরি করিনা। এখানেও আদি বাঙ্গালীর ফমূর্লাটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করলাম দুজনে। প্রথম জন চাইলো আড়াই লাখ রুপিয়া। তবে কৌশল করে ড্রাইবারেরা টু-হান্ডেরেট বলে।

এসব ক্ষেত্রে পর্যটকদের সাবধান থাকা উচিত বলে মনেকরি। হাজার আর শতকের ব্যবধান বুঝতে হবে। পরে একজন এসেই বললো এক লাখ রুপিয়া সমীর বাবু অংক কষে দেখলো বাংলা টাকায় যা দাড়ায় ৬৫০ টাকার মতো। রাত বেশি হওয়াতে রাজি হলাম।

নতুন শহর। একেবারে শান্ত। শব্দহীন পথে চলছে গাড়ি। আমাদের দেশের সাথে সময়ের ব্যবধান দুই ঘন্টা। মাত্র ১০ মিনিটেই হোটেল পৌঁছলাম। সবুজের আবরণে ঢাকা হোটেলের আশেপাশ। রাত ১২টার কাছাকাছি পৌঁছা মাত্র রুমে ব্যাগ রেখেই ভোজন করার ইচ্ছায় সাদা ভাতের সন্ধানের বের হলাম। আমরা সব পারি কিন্তু ঝাঁল আর সাদা ভাতের লোভ সামলাতে পারিনা। উদর ফূর্তি করতে এসব চাই।

দেখে মনেহল কুটাবিচা শহর একেবারে ক্লান্তের ভারে যেন নুয়ে পড়েছে। কয়েকটি দোকান খোলা ছিলো তবে আমাদের খাবার সেখানে নেই। সিমকার্ড নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কয়েকটি ফোনের দোকানে। দাম শুনে চোখ একেবারে কপালে। আড়াই লাখ রুপিয়া। বাংলা মুদ্রায় প্রায় পনের শ টাকা।

টুরিস্টরা ঠেকায় পড়লে এ রকম দাম হাঁকায় বালিরা। দামে শুনে বাড়িতে কথা বলার আগ্রহটাও নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। সকালে হয়তো নিলে ভালো হবে এটা ভেবেই রুমে পথে ফিরলাম।

হোটেল রেঁস্তারা থেকে খাবারের অর্ডার দিলাম ফাস্ট ফুড আইটেম। একজনের খাবার ৭৫ হাজার রুপিয়া। দুই জন ভাগ করে খেলাম একজনের খাবার। পরের দিন সকালে হোটেলের ব্রেকফাস্ট একেবারে মন ভরে গেলো। সফর সঙ্গী সমীর বাবু প্রাণ খোলে হেঁসে বলেন, ভাই ভাত পেলাম। শতের কাছাকাছি খাবারের আইটেম। কোনটা পেলে কোনটা খাবো সেই বিড়ম্বনায় পড়লাম। স্বাদের মাত্রা ভিন্ন হওয়াতে সব জায়গায় হাত দিলাম একটু একটু।

বালির প্রথম সকালটা ছিলো ঝলমলে রোদ। হালকা গরম হলেও ক্লান্তি ছিলো না। জরুরী ভাবে বলা উচিত পাঠকদের। বালি দ্বীপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ডলার পরির্বতনে সর্তকতা থাকতে হবে। পথে পথে দেখবেন ডলারের চেইঞ্জার এর সাইনবোর্ড। কতগুলি কোম্পানি বেশি রেইট দিবে। তাদের কাছে ডলার ভাঙ্গলে নিজেদের লজ।

বেশি রুপিয়ার ফাঁকে আপনাকে ১০০/২০০ ডলার কম দেবে। এটাই তাদের কৌশল। তাই রেট কম হলেও জেইনুন দোকানে ডলার পরির্বতন করবেন। প্রতিদিন ডলারের রেইট বাড়ে। এক সাথে সব ডলার পরিবর্তন না করা ভালো। একশ ডলারে আপনি পাবেন ১৩ লাখ ৯০ হাজারের মতো প্রায়। বালিতে একটা প্রদেশ। (চলবে)

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!