• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষক কার্ত্তিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ


রাজিব হোসেন রাজন, শরীয়তপুর আগস্ট ৪, ২০১৮, ০৭:২৯ পিএম
শিক্ষক কার্ত্তিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কার্ত্তিক চন্দ্র কির্ত্তনীয়ার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ থাকা সত্বেও সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতি নিয়ে হয়েছেন প্রধান শিক্ষক। চাকরী জীবনের যে বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছে সেখানেই রয়েছে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ। এতো কিছুর পরও পদোন্নতি পাওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক/শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মাঝে।

এদিকে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কার্ত্তিক চন্দ্র কির্ত্তনীয়ার কর্মকান্ডে বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে একাধিক লিখিত অভিযোগ পাঠালেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। তবে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানালেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা ৬৫ নং কীর্তিনগর সরকারী বিদ্যালয়। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন কার্ত্তিক চন্দ্র কির্ত্তনীয়া। যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তারদ্বারা একাধিকবার যৌন নিপিরনের শিকার হতে হয়েছে বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীকে।  ছাত্রীদের অভিযোগ, বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে বিরতির ফাঁকে ডেকে, গায়ে হাত দিত এই শিক্ষক। তারি বর্ননা দিল পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি এমনি এক কেলেঙ্কারির ঘটনা সরাসরি ধরা পরে স্থানীয়দের হাতে। রাতের আধাঁরে ছাত্রীকে ডেকে এনে জোরপূর্বক সারারাত আটকে রাখে একটি ঘরে। পরে সকালে ওই ছাত্রীর ডাক চিৎকারে এগিয়ে আসে প্রতিবেশিরা। ততক্ষনে ঘটনাস্থ’ল থেকে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত লম্পট শিক্ষক কার্ত্তিক মাষ্টার। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিচারের আশ্বাস দিয়ে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেন ওই ছাত্রীকে।

শিউলি  সহকারি শিক্ষিকা, ৬৫ নং কীর্তিনগর সরকারী বিদ্যালয়, সদর, শরীয়তপুর জানান ,গত ০২ জুলাই এই ঘটনার পর থেকে ৬৫ নং কীর্তিনগর সরকারী বিদ্যালয়ে কর্মস্থলে আর যাননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কার্ত্তিক চন্দ্র কির্ত্তনীয়া। স্কুলের অনন্য শিক্ষকরাও জানালেন তার কুকর্র্মের কথা।

হরিদাস চন্দ্র, সাবেক মেম্বার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ১১নং গয়ঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, শরীয়তপুর ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানাগেছে, মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার কলাগাছিয়া গ্রামের কার্ত্তিক চন্দ্র কির্ত্তনীয়া ১৯৯৯ সালে তথ্য গোপন করে শরীয়তপুর জেলার সদর থানার চিতলীয়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ঠিকানায় দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরী নেয়। এরপর সর্বপ্রথম যোগদান করেন সদর উপজেলার ১১নং গয়ঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে স্কুলের এক ছাত্রীর সাথে অপ্রতিকর অবস্থায় ধরা পরে গণধোলাইও খেতে হয় তাকে। পরবর্তীতে বদলি করে দেয়া হয় অন্য স্কুলে।

একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েও পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছে লম্পট কার্ত্তিক মাষ্টার। আগের কর্মস্থ’লে ০২ জুলাই থেকে অনুউপস্থি থাকলেও ১৭ জুলাই পদোন্নতি নিয়ে যোগ দিয়েছে ৩৩ নং ছোট বিনোদপুর নদীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু সেখানে গিয়েও দেখা মেলেনি অভিযুক্ত এ শিক্ষকের। তবে কার্ত্তিক মাষ্টার মুঠোফোনে শিকার করেছে  নিজের অপরাধের কথা। সাংবাদিকদের  হুমকি দিয়েছে কার্ত্তিক মাষ্টার ।

মুঠোফোনে কার্ত্তিক চন্দ্র কির্ত্তনীয়া, জানান আমার খারাপ কাজের কথা পত্রিকায় দিয়েদেন এতে আমার কিছু হবেনা । এবং ফের আমাকে ফোন দিবেন না । ফোন দিলে দেখে নিমু।

প্রধান শিক্ষক, ৩৩ নং ছোট বিনোদপুর নদীর পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, শরীয়তপুর।স্কুলে একাধিক বার গিয়েও লম্পট কার্ত্তিক মাষ্টারের দেখা মিলেনি।

লাকী আক্তার, প্রধান শিক্ষক, ১১নং গয়ঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, শরীয়তপুর বলেন, শিক্ষক দ্বারা শিশু শিক্ষার্থীদের হয়রানি মূলক আচারণ নয় বরং শিশু বান্দব পরিবেশে শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠুক আগামীর শিশু শিক্ষার্থীরা। এমনটা বলছে শিক্ষকরা।

আবুল কালাম আজাদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, শরীয়তপুর  জানান, কার্ত্তিক চন্দ্র কির্ত্তনীয়ার চাকরী জীবনে এমন কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ এসেছে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও একাধিক লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই, নেয়া হবে ব্যবস্থা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছে স্থানীয়রা। প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন ছাত্রীদের অভিভাবক ও স্বজনরা।

দীর্ঘদিন যাবৎ একেরপর এক অপকর্মের ঘটনার উপযুক্ত বিচার না হলে আগামীতে এমন ঘটনা আরও ঘটাবে বলে মনে করছে সচেতন মহল। তাই দ্রæত এই শিক্ষককে বিচারের মুখোমুখি করে বর্তমান শিক্ষক সমাজের কলংকিত মুক্ত করবে এমনটাই প্রতাশা সকলের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!