• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষক হয়েও সফল উদ্যোক্তা রেজবিন


নিউজ ডেস্ক মার্চ ১২, ২০২০, ০৯:৫৬ এএম
শিক্ষক হয়েও সফল উদ্যোক্তা রেজবিন

ঢাকা : শিক্ষকতা পেশা থেকে এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের স্বীকৃতি। তিনি রেজবিন বেগম। এবছর এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত জাতীয় এসএমই মেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তা  পুরস্কার পেয়েছেন রেজবিন। এটাকে তিনি জীবনের বড় স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন।

গণমাধ্যমকে রেজবিন বেগম বলেন, তিনি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ও ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেদার ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।

এই উদ্যোক্তা বলেন, এ পর্যন্ত যাদের ট্রেনিং দিয়েছে সেখান থেকে ১২ জন উদ্যেক্তা হয়েছেন। এর মধ্যে আটজন মেশিন কিনে সুন্দরভাবে কাজটি শুরু করেছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পিপলস লেদার ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান রেজবিন। বলেন, যারা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নেন তাদের মেশিন কিনে সাপ্লাই দেয়া হয়ে। কোথায় কী পাওয়া যাবে তাও জানানো হয়। এমনকি নতুন উদ্যোক্তা তিন থেকে পাঁচজন কর্মীকে ফ্রি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

কীভাবে পণ্যগুলো বানাবে তা হাতে-কলমে শেখানো হয় রেজবিনের প্রতিষ্ঠানে। উদ্যোক্তা হওয়ার এই প্রশিক্ষণে ফি নেয়া হয় মাত্র ১০ হাজার টাকা।

রেজবিন বলেন, আসলে এটা একটা প্যাকেজের মতো। একজন নতুন উদ্যোক্তাকে অনেক কিছু প্রশিক্ষণ দিতে হয়। তাদের কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিংয়ের সময় যে পণ্যগুলো তৈরি করবে সেগুলো তারা নিয়ে যেতে পারবে। কোথায় তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করবে সে ব্যাপারেও আমাদের সহায়তা থাকবে। 

রেজবিনের প্রতিষ্ঠানে জুতা, ব্যাগ, বেল্টসহ অন্যান্য পণ্য তৈরি হয়। পণ্যে রয়েছে বৈচিত্র্য। রেজবিন বলেন, আমাদের এখানে যারা উদ্যোক্তা হওয়া ছাড়া অন্য প্রশিক্ষণ নিতে চায় তাদের কোনো টাকা দিতে হয় না। ফ্রি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আর যারা প্রতিবন্ধী তাদের জন্য থাকা-খাওয়া ফ্রি।

এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, সবাইকেতো আর আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় ফ্রি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি না। প্রতিবন্ধী ছাড়া বাকিদের নিজেদের খরচে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা তাদের সহায়তা করি।

সাভারের ইয়ারপুল মুনশি মার্কেট এবং আশুলিয়ার জিরাবোতে তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বলে জানান রেজবিন। 

ফ্রি প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমি দেখেছি কীভাবে নদীভাঙন মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। আমরা বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারি গ্রামে। উত্তাল যমুনার ভাঙাগড়া দেখে কেটেছে আমার ছোটবেলা। আমার ভেতরে তখন কাজ করছে নিজে উদ্যোক্তা হলেই হবে না, অন্যকেও উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে হবে। প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি করতে হবে। এ পর্যন্ত ১৫০ জন নারী ও ৮০ জন পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে রেজবিনের প্রতিষ্ঠান।

উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর কথা বলতে গিয়ে রেজবিন বলেন, লেদার ইঞ্জিনিয়ার স্বামী হাফিজুর রহমানের কাজের সুবাদে চামড়া খাতের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখতেন তিনি। তখনই তার ভাবনায় আসে চামড়াজাত পণ্য নিয়ে নিজে কিছু করার। স্বামীর উৎসাহেই শিক্ষকতা চাকরি ছেড়ে উদ্যোগে নেমে পড়েন। ২০১২ সালে পিপলস নাইফ ইঞ্জিনিয়ারিং নামে চামড়া খাতের ব্যবহৃত ডাইসের (কাটিং নাইফ) কারখানা গড়ে তোলেন। ২০১৪ সালে একজন কর্মী ও একজন সহযোগী নিয়ে জুতা তৈরির কাজে হাত দেন রেজবিন। আশুলিয়ায় ৫০০ বর্গফুটের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস নামের কারখানা গড়ে তোলেন।

সাত লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন রেজবিন বেগম। কিছু দিনের মধ্যেই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার প্রতিষ্ঠানে জুতা। সামানতাদের বাড়তে থাকে পাইকারি ক্রেতার চাহিদাও। একটি বহুজাতিক সু কোম্পানির সাবেক এক কর্মকর্তার একটি বড় অর্ডার রেজবিনের কারখানার উৎপাদনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বর্তমানে রেজবিনের পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস বাটা সু কোম্পানি ও এপেক্স ফুটওয়্যারসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে জুতা সরবরাহ করছে। 

রেজবিনের তিন হাজার বর্গফুটের প্রতিষ্ঠানে এখন ৪০ জন কর্মী রয়েছেন। যাদের বেতন আট থেকে ২০ হাজার টাকা। তারা তৈরি করছেন চামড়ার জুতা, স্যান্ডেল, বেল্ট, মানিব্যাগ, লেডিস পার্স, হ্যান্ডব্যাগ, এক্সিকিউটিভ ব্যাগ ও জ্যাকেট। শিগগির গাইবান্ধার বিসিক শিল্প নগরীতে রেজবিন বেগমের নয় হাজার বর্গফুটের কারখানা নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।

এই উদ্যোক্তা বলেন, তার এ পর্যন্ত আসার পেছনে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনেক সহযোগিতা রয়েছে। গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করেছে এ ফাউন্ডেশন। দেশের বিভিন্ন মেলার পাশাপাশি চীন ও ভারতের আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। মালয়েশিয়া ও জাপানে লেদার পণ্য সুনামের সঙ্গে রপ্তানি করেছে রেজবিনের প্রতিষ্ঠান।

ব্যবসা করার জন্য অর্থের সংস্থান করতে শুরুতে হিমশিম খেতে হয়েছে জানিয়ে জাতীয় এসএমই পুরস্কারপ্রাপ্ত এই উদ্যোক্তা বলেন, ব্যাংকতো আমাদের চিনে না। কিন্তু আমার হাড়ির খবর রাখে এসএমই ফাউন্ডেশন। আমার কষ্টের কথা জানে তারা। এমনও হয়েছে অনেক রাতে আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করাতে হয়েছে। তথন এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে নালিশও গিয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। এত রাতে একজন নারী কী কাজ করে এটাই জানার ছিল তাদের। কিন্তু চেয়্যারম্যান যখন আমার প্রতিষ্ঠানে এসে দেখললেন আমি চামড়াজাত পণ্য তৈরি করছি, তিনি প্রশংসা করলেন।

রেজবিন বলেন, ‘নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় হওয়ায় জমি বন্ধক দিয়েও ব্যাংক ঋণ মেলেনি। কিন্তু সেই আমি আজ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছি। এটা ভাবতেই আমার চোখ ভিজে ওঠে। আমি চাই আরও উদ্যোক্তা তৈরি করতে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে।’

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!