• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও কমেছে সম্মান


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯, ০২:১৭ পিএম
শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও কমেছে সম্মান

ঢাকা : মর্যাদা কমছে শিক্ষকদের। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন আর শিক্ষকদের দুর্বলতাসহ নানা কারণে শিক্ষকদের মর্যাদার অবনতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাছাড়া শিক্ষকরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হয়ে পেশার সুনাম নষ্ট করছেন। শিক্ষকদের কার্যকর মর্যাদার এই নিম্নমুখী গতি উদ্বেগ তৈরি করছে। তবে নিজ যোগ্যতা ও গুনে এখনো অনেক শিক্ষক মর্যাদার আসনে উঠে আসছেন। সেটি খুব বেশি নয় বলেও মনে করেন কেউ কেউ। তবে রাজনীতিকরণ হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থায়।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে সব সরকারই। ফলে শিক্ষা খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে অনেক। কিছু ক্ষেত্রে যদিও এখনো অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকছে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ। ফলে শিক্ষার মানও পড়ে গেছে। এটা ক্রমাগত নিম্নমুখী। এখন লেখাপড়া শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়ে এসেছে; কোচিং ও প্রাইভেটে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত দিনগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভর্তি ও পাসের হার, শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও পদ-মর্যাদা, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি-উপবৃত্তি অনেক বেড়েছে। কিন্তু অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিয়েছে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, যাতে জড়িত হচ্ছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এটি খুবই খারাপ। শিক্ষকতা খুবই সম্মানের পেশা, মর্যাদার পেশা। দেশে কিংবা বিদেশে এটিকে খুবই বড় পেশা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু সেটি আর থাকছে না। এর কারণ অনেক। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ যেমন রয়েছে আবার সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনও এর সঙ্গে জড়িত।

একসময় সমাজে শিক্ষককে সবাই শ্রদ্ধা করতেন। এখন আর সেটি নেই। শিক্ষকরা এখন সামাজিক নানা অন্যায়েও জড়িয়ে পড়ছেন। এমনকি শিক্ষার্থীরা অনেক সময় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ করছেন। ফলে অনেক সময় শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকের কাছে নিরাপদ নয়। অথচ একসময় বাবা-মায়ের পরে শিক্ষকদের কাছে সন্তানকে নিরাপদ মনে করতেন সাধারণ মানুষ। অনেক সময় শিক্ষকরা তাদের প্রাপ্য মর্যাদার অপব্যবহার করছেন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষকরা এখন জ্ঞানের কারবারি। অনেক শিক্ষক জ্ঞান নিয়ে রীতিমতো কারবার করে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশ অমান্য করে তারা বাড়তি আয় করতে ক্লাস রুমের বাইরে মনোযোগী। প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সব স্তরে এটি চলছে। বলা হচ্ছে, এখন শিক্ষার বাজার রমরমা। ফলে আর দশটা পেশার মতো হয়ে যাচ্ছে শিক্ষকতা।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, এখন কোচিং ও প্রাইভেট যেন সমান্তরাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ২০১২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করে। যেখানে শিক্ষকদের কোচিং প্রাইভেট বন্ধ করা হয়। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকেও এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কিছুই কাজ করছে না। শিক্ষকরা আগের মতো বাড়তি আয়ে ঝুঁকছেন। আর এতে তার নৈতিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে। কমছে মর্যাদা গত বছরের নভেম্বর মাসে মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকায় এক ছাত্রীকে কোচিং সেন্টারে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকার মজিবুর খানের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কোচিং করাতেন ওই শিক্ষক। কোচিংয়ের সূত্র ধরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার পরিচয়। ছাত্রীকে কোচিং শিক্ষক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কোচিং সেন্টারের এক রুমে ডেকে নেন। পরে আটকে রেখে টানা তিন দিন ধর্ষণ করেন। এমন অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধেও।

নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি কাজ করবেন। শিক্ষক ও শিক্ষার মান সুসংহত করা হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন কখনো ইতিবাচক হিসেবে, কখনো নেতিবাচক হিসেবে সামনে আসছে।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদার জায়গা সব ক্ষেত্রে কমেছে, সেটি বলা যাবে না। মর্যাদার ক্ষেত্রে আমি বলব পরিবর্তন এসেছে। তবে শিক্ষকরা আগের সেই সম্মানের জায়গায় যেতে পারছেন না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!