• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষা খাতের অনিয়ম অব্যবস্থাপনার লাগাম টানুন


খন্দকার আজিজুল হক সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০, ১২:৩১ পিএম
শিক্ষা খাতের অনিয়ম অব্যবস্থাপনার লাগাম টানুন

ঢাকা : শিক্ষায় আলো, শিক্ষায় মুক্তি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এতেও সন্দেহ নেই, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। আমাদের দেশও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহুদূর চলে গেছে। দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অর্জনটি হলো সর্বস্তরের মানুষের কাছে তা পৌঁছাতে পারা। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো, যে শিক্ষা রাষ্ট্র দিচ্ছে, সেই শিক্ষা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেরে উঠছে না। হতাশা বাঁধছে তরুণ প্রজন্মে।

শিক্ষিত হয়েও চাকরি পাচ্ছেন না। প্রতি বছর ২২ লাখ তরুণ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলেও তাদের বেশিরভাগই কাজ পাচ্ছে না। সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি সবার আশ্বাস কমে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ, দেশের সর্বত্রই চোখে পড়ছে কোচিং-বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা। যেখানে শিক্ষার্থীদের বানানো হচ্ছে ক্রেতা আর তথাকথিত শিক্ষিতজনরা হচ্ছেন বিক্রেতা। সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাবেই শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্যের সূত্রপাত হয়েছে। স্বাধীনতার পর কয়েক দফায় পরপর শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও কোনোটাই বাস্তবে শতভাগ প্রয়োগ হয়নি। শুধু শিক্ষানীতিই প্রণীত হচ্ছে, তা কার্যকরের সময় পাচ্ছে না সরকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেটের খুব নগণ্য অংশই ব্যয় করা হয়, যেখানে মোট বাজেটের ১৫%-২০% ব্যয় করা দরকার ছিল।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা স্তরে স্তরে বিন্যস্ত। ফলস্বরূপ দিতে হচ্ছে চার-চারটি পাবলিক পরীক্ষা। তার মানে এই দাঁড়ায়, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা শুধু পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে, জ্ঞানভিত্তিক হতে পারেনি। পাবলিক পরীক্ষার মূল লক্ষ্য বরাবরই দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তা নেই। এখানে পরীক্ষায় লিখলেই পাস করা যায়। পাসের হার বাড়ানোর ফলস্বরূপ কমছে প্রকৃত শিক্ষিতের সংখ্যা। ফলে কমছে তাদের দক্ষতা। আজকাল দেখা যায়, একজন উচ্চ শিক্ষিত যুবকও ইংরেজিতে নিজের পরিচয়টা ঠিক করে দিতে পারে না। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি না করিয়ে করছে পাসের সংখ্যা বৃদ্ধি। যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। অতিমাত্রায় পাবলিক পরীক্ষা হওয়ায় আজকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও ক্লাসের পড়া বাদ দিয়ে কোচিংবাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে কোচিং করতে। আগামীর জাতিকে রক্ষায় এর নিরসন হওয়া জরুরি।

এখন শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করার প্রবণতা হারিয়ে মুখস্থ বিদ্যায় ঝুঁকে পড়ছে। বাড়ছে গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি। দশ বছর আগের শিক্ষাব্যবস্থা আর আজকের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে যে বিষয়টা চোখে পড়বে, তা হলো শিক্ষার গুণগত মান। চারটি পাবলিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কিংবা প্রকৌশলে ঢোকার জন্য নতুন করে পরীক্ষা দিতে হয়। এর মানে আমাদের চারটি পাবলিক পরীক্ষায় ত্রুটি রয়েছে। শিক্ষার এই দুরবস্থার কথা সবারই জানা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শিক্ষকরা শিক্ষাব্যবস্থার চালিকাশক্তি, সেখানে তারাইবা কতটুকু চাহিদা মেটাতে পারছেন? সরকার শিক্ষকদের সামর্থ্য অনুযায়ী দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করলেও তার ফল তেমন হচ্ছে না। নিয়োগবাণিজ্যের ফলে, যোগ্য জন চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া শিক্ষকদের মনিটরিং ব্যবস্থাও ততটা জোরালো নয়। আজকাল শিক্ষিতজনদের নৈতিক অধপতন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তারা শিক্ষিত হলেও সমাজকে পেছনে টানছে। তার কারণটাও সবার জানা। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, শিক্ষা খাতের দুর্নীতির কথা সবারই জানা। ভর্তিবাণিজ্য, নিয়োগবাণিজ্য, কোচিংবাণিজ্য তো আছেই। শিক্ষা খাতের দুর্নীতি মেনে নেওয়ার মতো নয়। আজকাল উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ভর্তি জালিয়াতির কথা শোনা যায়। যারা দুর্নীতির মধ্যে থেকে শিক্ষিত হচ্ছে, তারা সমাজকে কতটুকুই বা আলো দিতে পারবে?

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার এই বেহাল দশা আর এগুতে দেওয়া উচিত হবে না। এর লাগাম এখনই টানতে হবে। নইলে এ শিক্ষাব্যবস্থায় জাতির মেরুদণ্ড সোজা যে থাকবে না, তা বুঝতে কারো বাকি নেই। সুতরাং নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়টিতে মনোযোগী হতে অনুরোধ করব।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!