• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন, প্রাক-প্রাথমিকে ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২০, ২০২০, ০১:৫৭ পিএম
শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন, প্রাক-প্রাথমিকে ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ

ঢাকা : সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নিয়ে  বর্তমানের তত্ত্বীয় শিক্ষার বদলে ব্যবহারিক ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক শিক্ষাব্যবস্থার দিকে মনযোগ দিয়েছে। শিক্ষাখাত এবং কারিকুলাম প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠরা এমন তথ্য জানিয়েছেন। 

শিক্ষাখাতের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকেই আংশিক পরিবর্তন আসছে। তবে এ পরিবর্তনের পূর্ণ বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২২ সাল থেকে। যদিও সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সাল থেকেই পরিবর্তন বাস্তবায়ন করা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে তা পিছিয়ে গেছে।

কারিকুলাম প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরিবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা হবে আধুনিক এবং বাস্তবভিত্তিক। একজন শিক্ষার্থী সিলেবাস থেকে যা শিখল সেটা তার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারছে কি না, তার মূল্যয়ন করা হবে যথাযথ। এজন্য ২০২২ সাল থেকে প্রথম, দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক এবং পাঠপদ্ধতি উভয় ক্ষেত্রেই বিষদ পরিবর্তন আনা হবে। পর্যায়ক্রমে কয়েক বছরের মধ্যে এটি সব শ্রেণিতেই প্রবর্তন করা হবে।

এছাড়া প্রাক প্রাথমিক স্তর করা হবে ২ বছরের। ৫ বছর বয়সের পরিবর্তে শিশুরা ৪ বছর বয়স থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাবে। আগামী বছরই দেশের সব উপজেলায় পাইলটিং হিসেবে একটি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তর চালু করা হবে।

এই স্তরে পূর্ণাঙ্গরূপে শিক্ষাদান চালু করার জন্য প্রাক-প্রাথমিকে নতুন করে আরো ২৬ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া মাধ্যমিক স্তরে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া হবে। নবম শ্রেণির বদলে একাদশ শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য শাখায় ভাগ করা হবে।

এনসিটিবির প্রশিক্ষণ শাখা থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এটি ২০২২ সালে গিয়ে অফলাইনে নিয়ে আসা হবে। সেই সঙ্গে সব প্রশিক্ষণ উপকরণ ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমেও পাওয়া যাবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সাল থেকেই প্রতিটি শ্রেণির জন্য একজন করে শিক্ষক নির্দিষ্ট করা হবে যিনি এই ব্যবহারিক শিক্ষার বিষয়টি পড়াবেন। ২০২২ সাল থেকে নতুন পাঠ্যপুস্তক আসলে শিক্ষকরা নতুন পদ্ধতিতে পাঠদান ও মূল্যায়ন শুরু করবেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কারিকুলাম সদস্য প্রফেসর মোহাম্মদ মসিউজ্জান বলেন, ‘২০২১ সাল থেকেই প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে। বই আগের গুলোই থাকবে। কিন্তু পড়ানো হবে নতুন স্টাইলে।’

নতুন স্টাইল কী হবে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন একজন শিক্ষার্থী দেশপ্রেম বিষয়ে বা মানবিক মূল্যবোধ বিষয়ে যা পড়ে সেটার প্রশ্নোত্তর পরীক্ষার খাতায় লিখে। কিন্তু নতুন বছর থেকে কী শিখল তার বাস্তবভিত্তিক মূল্যায়ন করা হবে। পড়ার পরে তার চলাফেরা, আচরণ এসবে কী পরিবর্তন আসল তার ওপর ভিত্তি করে তাকে মূল্যয়ন করা হবে।’

প্রফেসর মসিউজ্জামান আরো বলেন, ‘নতুন শিক্ষাপদ্ধতি হবে দক্ষতা উন্নয়নভিত্তিক। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার যে সমস্যা, সনদ হচ্ছে কিন্তু দক্ষতা হচ্ছে না-সে সমস্যার সমাধান হবে। এটি হবে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক, মূল্যায়ন হবে পর্যবেক্ষণভিত্তিক।’

তিনি বলেন, ‘এ বছরের ডিসেম্বর থেকেই বাছাই করা শিক্ষকদের ট্রেনিং অনলাইনের মাধ্যমে করানো হবে। ২০২২ সালের জুন থেকে শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে সরাসরি প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। তারা নিজেরা যাতে সবকিছু ভালোভাবে শিখতে পারেন সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।’

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের বাস্তবতার সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের যোগসূত্র নেই। ফলে বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করলেও বাস্তবে তা কাজে আসছে না। এ কারণে শিক্ষাব্যবস্থাকে বাস্তবভিত্তিক করা হচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের ছেলে-মেয়েদের অভিজ্ঞ করে তোলা হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা জরুরি। বর্তমানে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষকরা আরো দায়িত্বশীল হয়ে ওঠবেন।’

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে বাস্তবভিত্তিক ও যুগোপযোগী করা হচ্ছে। শিক্ষাকে আরো বাস্তবসম্মত করতে শিগগিরই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার মান অর্জন করার কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জ্ঞানার্জনের জন্য শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক নির্ভরশীলতা নয়, অ্যাকটিভিটি বেইজড কার্যক্রম খুব জরুরি। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখে পড়াশোনা করলে তা আরো বাস্তবিক হতে পারে। একসময় চ্যালেঞ্জ ছিল সবাইকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে সবাইকে শতভাগের কাছাকাছি শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৫-এর পেছনে দৌড়াতে গিয়ে তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাপও বাড়ছে। এই সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পরীক্ষা ও সনদের (সার্টিফিকেট) নির্ভরতা কমিয়ে শিক্ষাকে ভীতির নয়, আনন্দদায়ক করে গড়ে তোলা হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা করোনাকালে শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস করানোর মাধ্যমে শিক্ষাচর্চা চালু রাখতে পেরেছি। অনলাইন এডুকেশন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে এই পদ্ধতি শিক্ষাব্যবস্থায় একটা অন্যতম অংশ হিসেবে যুক্ত হবে। যুগের চাহিদাই তাই। এর থেকে বাইরে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের প্রতিও নজর দিতে হবে। এটা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে তারা পাঠদানে আরো মনোযোগী ও দায়িত্বশীল হবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই/এএস

Wordbridge School
Link copied!