• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিবিরের সভাপতিকে বহিষ্কার করলো জামায়াত


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯, ০৬:৫৪ পিএম
শিবিরের সভাপতিকে বহিষ্কার করলো জামায়াত

ঢাকা : দলে সংস্কারের দাবি তোলায় বাংলাদেশ ইসলাম ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে বহিষ্কার করেছে জামায়াত ইসলামী। এই তথ্য নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন মঞ্জু নিজেই।

শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার, আনুমানিক রাত সাড়ে সাতটার দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত আমীর জনাব মকবুল আহমদের পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিষদের একজন সম্মানিত সদস্য আমাকে জানান যে আমার দলীয় সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর যাবত সংগঠনের কিছু বিষয়ে আমি দ্বিমত করে আসছিলাম। মৌখিক ও লিখিত ভাবে বৈঠক সমূহে আমি প্রায়ই আমার দ্বিমত ও পরামর্শের কথা সম্মানিত দায়িত্বশীলদের জানিয়েছি।

তিনি আরো লিখেন, অভ্যন্তরীণ ফোরামের পাশাপাশি আকারে ইংগিতে প্রকাশ্যেও আমি আমার ভিন্নমত প্রকাশ করে এসেছি। আমি যেহেতু সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করি এবং প্রকৃতিগত কারণে আমাকে নানা ধরনের আড্ডা, ঘরোয়া আলোচনা, সেমিনার এ অংশ নিতে হয়। সেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তন-পরিবর্তন প্রসঙ্গে আমি অনেক জায়গায় খোলামেলা মত প্রকাশ করে থাকি।

এসব আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে মিসর, মালোয়েশিয়া, তুরস্ক, তিউনিশিয়ার ইসলামী ধারার রাজনীতির উত্থান পতন ও বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয় গুলো উঠে আসে। জামায়াতে রাজনৈতিক সংস্কারের যৌক্তিকতা, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা প্রসঙ্গে আমার সুস্পষ্ট মত ছিল যে, জামায়াতে প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমার এরুপ খোলামেলা মত নিয়ে জামায়াতের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

তিনি স্ট্যাটাসে আরো লিখেছেন, আমি জামায়াতের একজন সদস্য অথচ আমার কাছ থেকে কিছু জানতে না চেয়ে, আমাকে জবাবদিহির আওতায় না এনে বা আমি যদি দোষ করে থাকি সে বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আমার বিরুদ্ধে সার্কূলার জারী করায় আমি এর প্রতিকার চেয়ে আমীর বরাবরে আবেদন জানাই।

তথ্য প্রমাণ সহ আমার স্পষ্ট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সম্মানিত আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, মহানগরী আমীর সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সম্মিলিত ভাবে আমাকে নিয়ে বসেন। তারা আমাকে জানান যে বিষয়টা নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

মঞ্জু স্ট্যাটাসে আরো লিখেন, তারা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি আয়োজিত “চলমান রাজনীতি ও আগামীদিনের বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে আমার উপস্থাপিত একটি প্রবন্ধ সেখানে প্রমান হিসেবে হাজির করেন। যাতে আমি বলেছি বাংলাদেশে সেকুলার, গণতন্ত্রী ও ইসলামী সব রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হতে চলেছে। তৃতীয় শক্তি নামে যারা এসেছে তাদের প্রতিও জনগণের কোন আস্থা নেই। ফলে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের উন্মেষ অপরিহার্য যারা মানবাধিকার, সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক বাংলাদেশ উপহার দিতে পারে। যারা হবে ধর্মীয় বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধে অনুপ্রাণিত কিন্তু ধর্মীয় দল নয়।

এই প্রবন্ধে ইসলামী রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হতে চলেছে মর্মে আমি যে বিশ্লেষণ দিয়েছি সে ব্যপারে তারা আপত্তি তোলেন। জামায়াতে ইসলামীর সদস্য হয়ে একটি প্রকাশ্য সভায় ইসলামী দল ব্যার্থ হতে চলেছে এরকম মত দিতে পারি কিনা তারা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলি যে, এখানে আমি সামগ্রিকভাবে ইসলামী দলগুলোর কথা বলেছি জামায়াতের নাম সুস্পষ্ট ভাবে বলিনি।

তাছাড়া এটা একটা ঘরোয়া সেমিনার এবং এতে রাষ্ট্র ও রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে আমি বক্তব্য দিয়েছি। জামায়াতের নেতা বা কর্মী হিসেবে মত প্রকাশ করিনি। আমি শুধু জামায়াতের সদস্য নই রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিকও বটে। আমি যখন জাতীয় রাজনীতির কথা বলবো তখন সব মত পথ ও মতাদর্শের রাজনৈতিক কথাই বলতে হবে। আমি প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ বিএনপি’র সমলোচনা করতে পারবো কিন্তু নিজেদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাব তা কীভাবে সম্ভব।

যাই হোক নেতৃবৃন্দ আমার সব কথা শোনার পর স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে জামায়াতের একজন সদস্য হিসেবে এরকম মত প্রকাশ করার সুযোগ নেই। এটা শৃংখলা ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ। তারা আমাকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেন। আমি বিনয়ের সাথে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি এবং আমার অবস্থানে অটল থাকি।

মজিবুর রহমান মঞ্জু লিখেছেন, আমি ভেবেছিলাম এই স্পর্ধা ও মতামতের পর নেতৃবৃন্দ আমার উপর চরমভাবে অসন্তুষ্ট হবেন এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা স্বরুপ আমার সদস্যপদ বাতিল করবেন। কিন্তু তারা আমার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল, উদার ও দরদী আচরণ করেন। তাঁরা আমাকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিশ্বস্ত কাজে সংযুক্তও করেন।

সদ্য সমাপ্ত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ নিয়ে আমার দ্বিমত ছিল। তারপরও নির্বাচনের পূর্বে আমি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়, সংলাপ, বৈঠক সহ একটি নির্বাচনী আসনে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করেছি। নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমি কিছু স্বাধীন মত প্রকাশ করি। যাতে আমি সরকারের নির্লজ্জ ভোট ডাকাতি ও বিরোধী জোট এবং দলগুলোর সমলোচনা করি। রাজনৈতিক দলের নেতাদের দায় স্বীকার করে পদত্যাগের আহবান জানাই। শুধু তাই নয় আমি নিজের দায় থেকেও অক্ষমতা অপারগতার জন্য ক্ষমা চাই।

তিনি লিখেছেন, গত কয়েক সপ্তায় আমি সিলেট ও ঢাকার উত্তরায় এরকম দুটি সার্কেলে যোগদান করি এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন, জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি। সেসব আলোচনায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত, ঐক্যফ্রন্ট সকল বিষয়েই আলোচনা হয়। আমি আমার মত ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করি। আমি জানতে পারি যে ফেসবুকের নানা প্রচারণা ও আমার এসব মত প্রকাশে জামায়াতের দায়িত্বশীলগণ পূণরায় অসন্তোষ বোধ করছেন এবং আমার গতিবিধি চলাচল মনিটরিং করছেন। তারা আবারও অধস্তন শাখা ও জেলা সমূহে আমার বিরুদ্ধে মৌখিক সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে জামায়াতের একজন নির্বাহী পরিষদ সদস্যের নেতৃত্বে ৩ জন সম্মানিত দায়িত্বশীল আমার সাথে বৈঠকে মিলিত হন। তারা আবারও আমার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লংঘন ও শৃংখলা ভঙ্গের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিনয়ের সাথে আমি তাদের জানাই যে আমি জামায়াতের একজন নগন্য সদস্য এবং দেশের নাগরিক। স্বাধীন মত প্রকাশ আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাষ্ট্রীয় অধিকার। আমার মত প্রকাশে জামায়াতের গঠনতন্ত্র বা শৃংখলার কোন লংঘন হয়না বলে আমি মনেকরি। আমি যা করি তা স্বচ্ছ ও প্রকাশ্য। এখানে ষড়যন্ত্র বা গোপনীয়তার কিছু নেই।

আমি তাদের মাধ্যমে জামায়াতের আমীর বরাবর একটি লিখিত বক্তব্য ও ব্যখ্যা প্রদান করি। আমার বিরুদ্ধে জামায়াত ভেঙ্গে নতুন দল গঠনের যে অপপ্রচার তার বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাই। তাঁরা অসন্তুষ্টচিত্তে আমার আবেদন গ্রহণ করেন এবং জামায়াতের আমীরের নিকট তা উপস্থাপনের আশ্বাস দেন। আমার আবেদনের বিষয়ে কোন তদন্ত না করে গতকাল রাতে আমাকে টেলিফোনে জানানো হয় আমার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। মনে ভীষন ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করলেও আমি সন্তুষ্টচিত্তে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!